রিজোয়ান মাহমুদ ‘র একগুচ্ছ কবিতা ।। পুবাকাশ

মধ্য শ্রাবণের গান

তাম্বুলের রসে বাউল বাতাস
ঠোঁট লাল করেও যখন সাক্ষর দেয়নি যেসব তারারা
বিদ্যাপতির মুকুট থেকে লটকে দিয়েছি বৃষ্টি ;
যার অর্থ শিহরণ
মেঘনাভি ছুঁয়ে মর্মমূলে যাওয়া জলের সারেঙ,
তাকে হারিয়ে ফেলেছি।
জল অর্থ ভাজ খোলা  কবোষ্ণ  বিছানা  ;
এ- ভাবে তোমার দু’পায়ে রচেছি খাম্বাজের গান
ফোঁটাগুলো গ্রীবার গম্বুজ বেয়ে নামে।

কবির চেহেল সেতুনে বিমুগ্ধ বিলাবল শুনে
বিঘৎ পরিমাণ ডুবে যাই – না দেখার  ছলে, 
আমি সংগহারা  এখনো, হে প্রভু ।

বস্ত্রহীন দুপুর

হে মাঞ্জামারা দুপুর
যার সঙ্গে ভাব নেই, তাকে চটজলদি ছেড়ে
বস্ত্রহীন হও- উলঙ্গ হও।
রেল স্টেশনে একটি রেপ্লিকা দাঁড়িয়ে…
সোজা
তুমি চিবুক ছুঁয়ে ওঠে পড়ো কামরায়
সজনীর ওড়না বেয়ে দুপুরের রোদ লম্বা একটা
নিঃশ্বাস নিয়ে আমাদের পাড়ায় ঢুকেছে ;
তা দেখে সবুজের মা মুখ ব্যাজার। 
হে দুপুর তুমি মহা আত্মরতী
বুদ্ধিভিত্তিক মৈথুনে ভোগ।
তুমি এপিটাফ সিরিজে আমাকে খোঁজ।
হে দুপুর তুমি যেখানে উলঙ্গ হবে
সেখানে আমার সত্য খোঁজার কিতাব শুরু। 

শূন্যতা সবদিক

আমার মা আটপৌরে এক বাঙালি রমণী শুধু
ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন তবে সাবলীল সুন্দরম
কম লেখাপড়া জানা এক সরল গাঁয়ের বধূ।
মা ছিলেন ধর্মনুর কম্ম ছাড়াই জানতো কম।
শীত বিকাল- ছায়ায় আমিও আগুন পোহাতাম
মা আঁচলে ঠিক বেঁধে নিতো সুর- মায়ার প্রবাল
এসবে আমার মা’কে রোজ রোজ আমি চিনতাম।
তিনি “নাই ” সে বাতাসে ভেঙে গেল আমার কপাল।

মা ছাড়া চলছে ঠিক তবে সে শূন্যতা সবদিক
শুনি না সকালে পড়া দুরুদ শরিফ আজানের
মর্মবাণী – মাঝে লাগে শূন্য সবকিছুই বেঠিক।
মা আকাশ,  শুধু তারা, আমি সঙ্গহারা সব- প্রভু
কার কাছে রেখে যাই অগাধ মেঘের রূপ- বাঁশি
মা ‘ গো তুমিহীন বর্ণহীন প্রকৃতিও সর্বনাশী।  

এক দোষাকর

হলুদ সরিষাক্ষেত ভেতরে ফিনকি দেয়া রক্ত
আমার নামাজ হবে শেষ অস্তাচলে দুই অক্ত
বাউলের একতারা হাতে সবুজ আইল ধরে
সুর খুঁজেছি বেহুঁশ প্রকৃতির দীপ্ত স্নানঘরে। 
তারা এলে সাজাবে দুহাতে বন, নদীর দুকূল
ঘাটলায় বাঁধা তরি ডাকে শুধু বকুল বকুল 
রোজ রাতে ফোটে ফুল আমারও বিশদ যাপনে
ভেবেছি সরিষাক্ষেত রাত যাবে একান্ত গোপনে।

দুকূলে চরের হাত, এ- কূলে মায়াবী – মায়া রাত
আমার সাহাবি কই , তার চোখে দেখেছি প্রপাত
হলুদ সরিষাক্ষেত- মন- নৃত্য, উদাস দুপুর
ঠাঁই পাবে না কখনো অন্দর মহলে সে অসুর।
সবুজের ঘনশ্যামছায়া উড়ে যায় দোষাকর
বাতাসের সিঁড়ি বেয়ে নামে দুচরণে দোঁহাকর।

মাটির সংগীত

পাতারা বলেছে, যাও, চুরি করো
বৃক্ষরা নিশ্চুপ
পুকুরের শীতল শরীর
সম্মুখে শাপলা বিষকূপ। 

হাফপ্যান্ট পরা একটি চাঁদ
মেঘের সঙ্গমে
লজ্জায় আনত তারারা
কীসের  জঙ্গমে!  

জেনেছি  সবকিছু আলুথালু
পিয়াসি ঠোঁট অনেক আড়ালে
কেন মাটি আজ এতটা ছোঁয়াছে
জীবনানন্দ আসেনা রাত পোহালে। 

মানুষ কিছুটা নুনের ক্ষত 
বেশিরভাগই মাটির পিপাসা
সমুদ্র গছে না তবু তাকে
সাড়ে তিনহাত মাটিই অন্বেষা।  

রিজোয়ান মাহমুদ:
কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও সম্পাদক। পেশায় ব্যাংকার (অবসরপ্রাপ্ত)। জন্ম ; ২৫ জানুয়ারি, দক্ষিণ হালিশহর
সল্টগোলা, চট্টগ্রাম। স্ত্রী, ৩ সন্তান সাহিত্য নিয়ে যাপিত জীবন।
তানজিনা মাহমুদ,আবির মাহমুদ, ইবতিসাম মাহমুদ পুত্র-কন্যা।নস্ত্রী রুবা মাহমুদ। লেখালেখি ; আশির দশক থেকে। প্রকাশনা ;
১. উজানী নগরের কন্যারা (১৯ ৯৭) ২. কাঠ চেরাইয়ের শব্দ মাপছি দুপুরে ( ২০০৪) ৩. গগনহরকরা ডাকে ( ২০০৬) ৪. নীরবপুর (২০১০) ৫. দুপুরলতা (২০১৭) ৬.মুদ্রিত কামনা থেকে, সনেটগুচ্ছ (২০২০)।প্রকাশিতব্য গ্রন্থ : হাইকো কবিতা,গল্পগ্রন্থ
,উপন্যাস,কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থ। সম্পাদক :১.একলব্য ২০০৮
২.দুপুরলতা ২০১৯ ৩. জোড়াসাঁকো, প্রধান সম্পাদক ৪. সবুজ আড্ডা, উপদেষ্টা সম্পাদক ৫. ঝাড়বাতি ; উপদেষ্টা সম্পাদক ।
পুরস্কার : ১. চিটাগাং স্কটিশ স্কুল সাহিত্য সম্মাননা ২০১২। ২. কবি ওহীদুল আলম সাহিত্য সম্মাননা ২০১৪।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন