সৈকতের সততা
শামসুদ্দীন শিশির

গ্রামের সব শিশুদের সাথে সৈকতও ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ধর্মীয় পাঠ গ্রহণের জন্য পাড়ার মক্তবে যেতো। মক্তবের মুন্সী ছিলেন আইয়ুব আলী। সবাই তাঁকে মুন্সী ভাই বলেই সম্বোধন করতেন। সৈকত নিয়মিত সঠিক সময়ে মক্তবে যেতো। তাই মুন্সী ভাই সৈকতকে খুব স্নেহ করতেন। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মুন্সী ভাই শিশুদের নৈতিক ও মূল্যবোধ শিক্ষাও দিতেন। সৈকতের মা-বাবাও সব সময় সৈকতকে সত্য কথা বলা ও সৎ পথে চলার উপদেশ দিতেন। সৈকত মা-বাবা ও মুন্সী ভাইয়ের কথা মন দিয়ে শুনতো এবং তা পালন করার চেষ্টা করতো। গুরুজনদের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করার দীক্ষাও সৈকত মায়ের কাছেই পেয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠে মক্তবে যাওয়া এবং বিকেলে খেলাধূলা শেষে মাগরিবের আজানের সাথে সাথে ঘরে ফেরার শিক্ষাও মায়ের কাছে পাওয়া। বিশেষ করে অন্যের সম্পদ নষ্ট না করা। মিথ্যা কথা না বলা। অন্যের কোন সম্পদ পেলে মালিক খুঁজে পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি মায়ের কাছ থেকে শেখা।

একদিন মক্তবে পড়া শেষে একাই বাড়ি ফিরছে সৈকত। পথের পাশে কয়েকটি নারিকেল পড়ে থাকতে দেখে সৈকত নারিকেল গুলো কুড়িয়ে নেয়। তারপর পথের পাশে কাজ করছে এমন একজনের কাছে জেনে নেয় এই নারিকেল গাছ গুলো কাদের। সৈকত জানলো গাছ গুলো পাশের বাড়ির আকবর চাচাদের। সৈকত নারিকেল গুলো নিয়ে চাচীকে দিল। চাচী খুব খুশি হলেন। সৈকতকে আদর করলেন। ঘরে বসিয়ে হাতের তৈরি পিঠা খেতে দিলেন। দু’হাত তুলে সৈকতকে দোয়া করলেন। সৈকত আনন্দ নিয়ে, খুশি মনে বাড়ি ফিরলো।

বিকেল বেলা চাচী দুটো নারিকেল নিয়ে সৈকতদের বাড়ি এলেন। সৈকতের মাকে বললেন, ভাবী নারিকেল গুলো রাখেন। সৈকতের মা বললেন কেন ভাবী? আমাদের বেশ কয়েকটি নারিকেলের গাছ আছে, আমার নারিকেল লাগবে না। তখন চাচী সৈকতকে দেখিয়ে বললেন, সকালে সৈকত মক্তব থেকে ফিরতে পথের পাশে ছয়টি নারিকেল পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নিয়ে আমাদের ঘরে দিয়ে এসেছে। আমি খুব খুশি হয়েছি। তাই দুটো নারিকেল আপনার জন্য নিয়ে আসলাম। আপনি না করবেন না। এটা আমার ভালো লাগা। সৈকত না হয়ে অন্য কেউ পেলে আমি একটা নারিকেলও পেতাম না। সৈকতের মা কথা গুলো খুবই খুশি হলেন। হাসি মুখে নারিকেল দুটো রাখলেন। চাচীকে বসিয়ে পান দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। সৈকতের মা সৈকতের জন্য দোয়া চাইলেন।

শামসুদ্দীন শিশির : বিশিষ্ট শিক্ষা গবেষক। অধ্যাপক, চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন