প্রযুক্তির সময়, সময়ের প্র-যুক্তি
মিজান বিন মজিদ
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আমার সময়। আমার সময় আর আপনার সময় সমান নয়! আপনি হয়তো সময় কাটান গল্পে আড্ডায় অবহেলায় অযত্নে। আমি সময় যাপন করি পড়ায় লেখায় দেখায়…সিরিয়াস সব কম্মে। দেখুন,এই আমি আমি নই হয়তো,আপনিও আপনি নন। আমরাই এমন। কেউ মূল্য বোঝে মাল্যের কেউবা মূল্যের। দুজনার মূল্যবোধ আলাদা,যেহেতু ‘মূল্য’ এর বোধই আলাদা!
হাতে মাউজ,পকেটে মোবাইল,কানে হেড ফোন আর সামনে গুগল-ভূগোল! একই সময়ে এতসব উপাদান-উপচারে আমার আশপাশ সাজানো যে নিজেই অগ্রন্থিত শুধু! যন্ত্রের বহুমাত্রিক সুলভতা আমাদের সময় ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেছে। প্রযুক্তির মায়াবী জগতে ক্লান্তিও আসে না! খাটে না ক্রম হ্রাসমান প্রান্তিক উপযোগ বিধিও! আমাদের মনে হচ্ছে,প্রাযুক্তিক এই জটের মধ্যে যিনি যত বেশি প্রাসঙ্গিক হবেন,তার তত স্থায়ীত্ব হবে পরপ্রজন্মে। ব্যাপারটা যত সহজে ভাবলাম,বললাম;নিজের জীবনেও সেটা অনুসরণ কঠিন। কিন্তু এর বিকল্প নাই।
সময়ের হল্লা, মুহূর্তের ধাক্কা আর তাৎক্ষণিকতার আকর্ষণ বিজ্ঞাপনে যুৎসই,প্রজ্ঞায় নয়। সাময়িকতার ঔজ্জ্বল্যলোভ সামলে ওঠা কঠিনই নয়,ক্ষেত্রভেদে অসম্ভবও। অথচ টেকসই হবার জন্যে নিজের অভ্যন্তরীণ সুষমাকে প্রতিমায় প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘নির্লিপ্ত নাগরিক’ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তীব্র। যুগকে স্বীকার-অস্বীকার করবার কুটতর্কে নামছি নে। বলছি, মিছিলে যোগ দেয়ার অধিকার সবার আছে। মিছিলে না থেকেও থাকবার কাজটি সবাই করতে পারেন না! আপনিই বরং মিছিলের কারণ হয়ে উঠুন না।
হিসাব করলে সাহিত্য হয় না,শিল্প জমে না বলছেন তাই তো? হিসাব ছাড়া যে কিছুই হয় না,এইটা হিসাব বিজ্ঞান নয়, হিস্যাজ্ঞান! অফুরন্ত সময়সম্পদকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে সেই হিস্যায় দুর্বল হয়েছেন আপনি। আর গোপন হিংসায় মুণ্ডপাত করছেন অধ্যবসায়ী উজ্জ্বল তারাদের! জ্বলতে জ্বলতে নিভেছেন,জ্বলতে জ্বলতে জ্বলেছেন তারা কত তিতিক্ষায়;খবর জানেন? জানেন না। বিনিদ্র রজনী কাটিয়ে প্রভাত দেখা,আর বেঘোরে রাত কাটিয়ে ভোর দেখাকে এক করে ফেলবেন না,জনাব!
আমার কাছে মনে হয়,আমার সব কিছুতে আপনি এসে ভর করেন! আবার আপনার সবকিছুতে আমি ঢুকে পড়ি অনাহুতে! এই ভেজালের বেড়াজাল ছিন্ন করতেই হবে। সময়ের প্রযুক্তিগত (প্রকৃষ্ট যুক্তির মাধ্যমে অর্জিত)ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। রঙচঙা প্রযুক্তির বাহারি আহবান সজ্ঞানে এড়াতে হবে প্রতিদিন প্রোজ্জ্বল প্রত্যয়ে।
মিজান বিন মজিদ: সহকারী অধ্যাপক,বাংলা বিভাগ,
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ।