মুহররমের পুঁথি ।। মুসতাফা মুনীরুদ্দীন
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মন্তুদ ঘটনা সংঘটিত হয়, ১০ মুহররম ৬১ হিজরিতে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে।
নবীজির প্রিয়তম নাতি হযরত হোসাইন রা. ও তাঁর ছয়মাসের দুগ্ধপুষ্য শিশু আলী আসগরসহ নবীপরিবারের প্রায় ১৭জনের অধিক সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফাসেক ইয়াজিদ বাহিনী। উপরন্তু, খুনি ইয়াজিদের চার হাজারের অধিক সশস্ত্র সেনাবাহিনীর বিপরীতে অপ্রস্তুত নিরস্ত্র হোসাইনী কাফেলার মাত্র ১৫০ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে মোট ৭২ জনেরও অধিক সকল পুরুষ সদস্যকে হত্যা করে এবং অবশিষ্ট শিশু ও নারীদেরকে অকথ্য নির্যাতনে বন্দী করে।
অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে ইনসাফপূর্ণ ইসলামী খিলাফতের সুশাসন প্রতিষ্ঠার এই অসম যুদ্ধের মর্মান্তিক ঘটনার বয়ানে যুগে যুগে রচিত হয়েছে, বেদনার্ত অশ্রুধোয়া পুঁথি-মর্সিয়ার হৃদয়বিদারক শোকগাঁথা।
মহররমের পুঁথি :
আ-য়…….
শুরুতে নাম লহি মুখে, পাক সে রাব্বানা,
সালাম্ জানাই রওজাপাকে সোনারো মদিনা।
কাঁন্দ রে দুনিয়াবাসী, শোকের নাই সীমানা,
মহররমের শোকের বয়ান, করি গো বর্ণনা।
হা-য় !…..
জগতবাসী চিনলো নারে আল্লাহ নবীর শান,
পাপেতে মজিয়া সবাই, ভুলেছে কোরআন।
এথা সেথা ঘুরে, ফেলে দ্বীন ইসলাম মহান,
ভুলেছে গৌরবো গাঁথার সোনালি বয়ান।
হা-য় !…..
স্বার্থ লোভে, পাপে যাদের মরিল অন্তর
নেশা, নারী, ধনের পিছে ঘুরে নিরন্তর
নাইরে কিয়ামতের ভয়ে কোনো ভাবান্তর
তারাই রচে কারবালাতে খুনের প্রান্তর
হা-য়…..
নবীরো আওলাদের সনে বেহদ্ না ফরমানি
করিল বেহায়া ফাসেক এজিদের বাহিনী
সীমারেরো নিঠুরতায় শোকের কাহিনী
আঁকিলো ইসলামের বুকে কলঙ্ক বেঈমানী
হা-য়…..
হাদিস, কোরান, ইসলাম ভুলে কিছু মুসলমান
হক্কেরো বিরুদ্ধে জঙ্গে হইল আগুয়ান
ফাতেমার দুলালের খুনে লাল হইল আসমান
নবীর নাতি শহীদ হইলেন কারবালার ময়দান
আ-য়……
আল্লাহ করীম ! কেমনে তুমি রাখিলা সবর
শুনিয়া নবীরো নাতির খুনেরো খবর
কাঁন্দে আকাশ বাতাস, কাঁন্দে আশেক প্রবর
কাঁন্দে মাটি—আমার কেন হয়না জের জবর
হা-য়…..
হায় হোসেন, হায় হোসেন রবে শোর উঠে সবখানে
নানার ধর্ম বাঁচাইতে যে, কোরবান জানেপ্রাণে
শাহাদাতের জোশে ছুটে সবাই সমর পানে
তুমুল তুফানে লড়ে শহীদী ময়দানে
হা-য়…..
চোখের জলে ভাসে শোকে মা ফাতেমার বুক
রক্তে মাখা নবীর বদন, বক্ষ ভরা দুখ্
কিয়ামতের একোন নিশান হইল রে উন্মুখ
তামাম জাহান হইল যেন কান্নার মুল্লুক
হা-য়…..
চারিদিকে হানে তীর, পাষাণের তরবারি
খুনেরো দরিয়া বহে, মরু হাওয়া ভারি
একে একে বাড়ে শিশু শহীদের সারি
পিপাসাতে পানি পানি কোরে আহাজারি
হা-য়…..
কচিশিশু ফাতেমা আর আসগরের লাশ
দেখি’ খোদার আরশ কাঁপে,খুনেলাল আকাশ
গর্জে উঠে নওশা কাশেম, করে শত্রু নাশ
উঁচুশিরে শহীদ হলেন, সৃষ্টি কোরে ত্রাস
হা-য়…..
এ কোন খুনের খেলা চলে, চির সর্বনাশা
নববধূ সখিনারো নিভে স্বপ্ন, আশা
মেহেদীর রঙ না মুছিতে, হারায় ভালোবাসা
নবীর প্রেমে সবই দিয়ে হারায় মুখের ভাষা
হা-য়…..
সব হারিয়ে, খুনের নদী ফোরাতের জলে
মুমিনের চোখেতে ফের আশার প্রদীপ জ্বলে
নতুনো শপথে স্বপ্ন বুনে বুকের তলে
নাইরে কমতি কোনো কিছুর, খোদারো মহলে
আ-য়…..
নবীর প্রেমে দুঃখ ভুলো, শোনো মুমিনজনা
সবরে, শোকরে বাঁধো, নতুন বাসনা
জ্বালিবো ফের দ্বীনের চেরাগ,এই শুধু কামনা
যেই আলোতে হেসেছিল সোনারো মদিনা
মুসতাফা মুনীরুদ্দীন: কবি ও কণ্ঠশিল্পী।
খুবই সুন্দর হয়েছে। পুথি সাহিত্য ফিরে আনা দরকার।