জীবনের আবোলতাবোল….।। সুলতানা কাজী।। পুবাকাশ
জীবনের সংজ্ঞা? খুবই দুরূহ ব্যাপার। জীবন হলো একটা প্রক্রিয়া। তা কোনো বস্তু নয়। আমরা জীবনের জন্য কাজ করি। জীবনের জন্যই এগোই, পথ চলি। আমার কাছে জীবন মানে– অতীতের জন্য দুঃখ না করে, পেছনে না তাকিয়ে সময়ের সাথে ঘুরে দাঁড়ানোই মনে হয়। জীবনকে নিয়ে ভাবি, অবাক হই! নিজের দিকে তাকাই। জন্ম, মৃত্যু নিয়ে ভাবি। আমার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আরও বেশি অবাক হই! আমিতো ওদের বানাইনি! জন্ম দিয়েছি মাত্র।
পথ চলতে চলতে যখন মনে হয় একটা স্মৃতি হাতড়ে আমি অনেক দূর এগুতে পারি তখন এটাই আমার করা উচিত। পরিবর্তনের পথে হেঁটে চলায়ই জীবন। আমি তাই স্বপ্নের পথযাত্রী। এই জীবন শৃঙ্খলিত। আছে হাসি, আনন্দ, দুঃখ, যন্ত্রণা। জীবন চলার পথ মসৃণ, সমতল নয়। রাতের পর দিন, দিনের পর রাত– এই চিরন্তন নিয়মাবলীর মাঝেই আমাদের জীবন আবর্তিত। বিচিত্র জীবন। নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা। ঘটনাবহুল জীবন পরিক্রমা। একটাই জীবন। খুবই ক্ষুদ্র। কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন জয় ও করে। আবার কিছু মানুষ স্বপ্ন নষ্ট করে। এক জীবনে কত রঙ, কত কাহিনী!
ঘড়ির কাঁটা অবিরাম চলছে। প্রতি মুহূর্তেই জীবন থেকে এক একটা সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতি মুহুর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায়’ই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ ও মনন ভেদে একেক রকম! প্রতিটা মানুষ একেকটা গল্পের ভাণ্ডার। যতই দেখি অবাক হই। মনের হার্ডডিস্কে গল্পের ফোল্ডারটা ভারীই হচ্ছে। চলছে অবিরত, চলতে থাকুক.. মন্দ কী!!
জীবনের রঙ পাল্টাচ্ছে। লাল থেকে নীল, নীল থেকে সবুজ, হলুদ, কমলা, আকাশী, বেগুনি, ধূসর! হাজারও রঙে বদলে যায় জীবন। সাদা কালো থেকে আবারো রঙিন হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে জীবনের বদলে যাওয়া দেখে— কারণ ধীরে ধীরে ফিকে হওয়া জীবন বড় বেশি দুর্বোধ্য!! তবুও আমি জীবনের প্রতি মুগ্ধতা ছড়াই। প্রশান্তির প্রলেপ লেপ্টে বুক হালকা করি। আকাশের দিকে তাকিয়ে দু’ ফোঁটা অশ্রু বিসর্জনে সুখ অনুভব করি।
সমুদ্রের জীবনে যেমন জোয়ার- ভাটা আছে, মানুষের জীবনে ও আছে৷ সমুদ্র আর মানুষের মাঝে অনেক মিল! জীবনকে ভালোবেসে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। নিজেকেও ভালোবাসি ভীষণ। জীবনকে পরীক্ষাকেন্দ্র ভেবে সিলেবাসটা রপ্ত করার মাঝেই প্রাপ্তি। জীবনের আয়ুও হাতে গোণা কয়েকটা বছর মাত্র। এক জীবন শেষ হলে আর পাওয়ার আশা বৃথা! শহরে এত শোরগোল, ভীড়, দুঃখ, কষ্ট, কঠিন বাস্তবতা! তারপর ও যখন আকাশে মেঘ করে বৃষ্টি নামে কিংবা রাতের ফুটফুটে জোৎস্না এই শহুরে বাসার ছোট্ট জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে, তখন একটু হলেও বেঁচে থাকাকেই সুন্দর মনে হয়।
জীবনের দুঃখ, বেদনা, পাওয়া না পাওয়া সব একদিকে ফেলে এই যে আমরা বেঁচে আছি!! অঘ্রাণের মিষ্টি হাওয়া লাগছে গায়ে, পড়ন্ত বিকেলের কোমল পরশ —- এই’ই তো অনেক। পরম পাওয়া! একটু ভাবি জীবনকে নিয়ে!! কী সুন্দর জীবনটা! কী ভীষণ সুন্দর আমাদের বেঁচে থাকাটা! হয়তো অনেক অপ্রাপ্তি আছে জীবনে। কিন্তু, এই ছোট ছোট সুখ দুঃখকে নিয়ে যে বেঁচে আছি, এটাই কম কী!! ছোট ছোট মুহূর্তের আনন্দগুলো মিলিয়েই জীবন। আলাদা করলে তাতে শুন্যতা থাকে শুধু। তা খুঁজে নিতে হয় আমাদেরই।
চলার পথে জীবনে অনেক ভুল হয় আমাদের। ভুল থাকবে, কষ্ট ও থাকবে। এটাই নিয়ম, এটাই বাস্তবতা। নিজেকে প্রতিনিয়ত চিনতে শিখছি। নিজের কদর নিজেই বুঝছি। নিজেকে সুখী ভাবতে শিখছি। এতটা সুখী যে আমাকে দেখে অন্যরাও যেন নিজেদের সুখী ভাবে! দুঃখের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে চাওয়া পাওয়ার হিসেবের খাতাটাকে ঘুড়ি বানিয়ে উড়িয়ে দিতে চাই আকাশে। ওই নীল দিগন্তে গিয়ে চোখের সীমানা পার হওয়াটাকেই সুখ ভাবতে শিখছি। জীবনকে আপন রঙে রাঙানোর বাসনাটা পোক্ত করছি অবিরাম। এসবের পিছনে আমি খালি ভাবি, জীবনে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাটা ও একটা শিল্প। সুস্থ, শান্তিময় জীবনই কাম্য।
ফুলকে ভালোবাসি তাই জীবন সুন্দর।
মানুষের মাঝে বিভেদ করিনা বলেই জীবন রঙিন।
সত্যকে সত্য বলার সাহস আছে বলেই জীবন অর্থবহ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ি বলেই জীবন সার্থক।
অসুন্দরকে তুচ্ছ ভাবি বলেই জীবন মনোরম।
অমঙ্গলকে পিছু হটাই বলেই জীবন ফলপ্রসূ ।
সকলে মিলে বেঁচে থাকাকে অর্থবহ করার স্বপ্ন দেখি। রঙিন আলোয় আলোকিত হই নিজে। জীবনের অর্থ খুঁজি জীবনকে ভালোবেসে। ভালো থাকি, ভালো রাখি। সকলের সুস্থতা কামনায়……..
সুলতানা কাজী : সহকারি শিক্ষক( বাংলা), অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
তোমার গদ্য ভালো হয়। সাহিত্যের বিষয়ে মনোযোগ দিলে পেশাগত ভাবেই কাজে লাগবে। বিশেষ করে পাঠ্য সংশ্লিষ্ট লেখকদের অনন্য রচনা নিয়ে আলোচনা করতে পারো।
এমন চিন্তা করলেই মানব জনম সার্থক হয়। সাধ্যমত পরোপকার এবং আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করলে জীবন আরো সুখময় হয়। জীবন ও জগৎ বিষয়ক এমন চিন্তা ও স্রষ্টা ও সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে পারলে মানুষের মন থেকে লোভ লালসা, পঙ্কিলতা দূর হয়। জীবন অর্থবহ হয়।
,লিখতে থাকুন, ভালো থাকুন।
সাহিত্য তৈরী হয় গভীর জীবনবোধ ও সুন্দরের প্রতি ভালোবাসা থেকে। এটির প্রকাশ হয় সুন্দর শব্দচয়নে ও উপমা-উৎপ্রেক্ষার অসাধারণ উপস্থাপনে। তোমার এ লেখাটা আমার ভালো লেগেছে। তবে কিছুটা আবেগতাড়িত মনে হয়েছে। সাহিত্য শুধুমাত্র সুন্দর জীবনের কথা বলে না। অসুন্দর জীবনের সুন্দরতম প্রকাশও সাহিত্য।
জীবন সম্পর্কে তোমার একটি কথাকে একটু ভিন্নভাবে বলি–আমার কাছে জীবন হলো কালেশান অফ বিউটিফুল মেমোরিজ। সুখের স্মৃতি যেমন সুন্দর হয়, তেমন দুঃখের স্মৃতিও।
আমি একজন স্মৃতিকাতর মানুষ বলেই হয়তো এমন করে ভাবি। ভালো থেকো।
পাঠকের মন্তব্যগুলো লেখকে প্রাণিত করে। ধন্যবাদ পান্থজন ও রোকন কে।