সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লুইস গ্লুক ‘র দু’টি কবিতা।। আলমগীর মোহাম্মদ অনূদিত।। পুবাকাশ
(সাহিত্যে ২০২০ নােবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান কবি লুইস গ্লুকের লুইস এলিজাবেথ গ্লুকের জন্ম নিউ ইয়র্ক শহরে,১৯৪৩। বেড়ে ওঠা নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে। লুইস গ্লুক- সারা লরেন্স কলেজ, উইলিয়াম কলেজ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেন। টেকনিকের অভিনবত্ব, সেন্সিটিভিটি তথা স্পর্শকাতরতা তার কবিতার অস্থিমজ্জায়। কবিতার শিল্পপ্রকৌশলগত ভিন্নতার কারণে তিনি বহুল প্রশংসিত। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর প্রথম আমেরিকান নারী হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করলেন গ্লুক।
এই পুরস্কারের পিছনে রয়েছে তার কাব্য এককের সঙ্গে বিশ্বজনীনতার গভীর সংযােগ, এমনটাই জানানাে হয়েছে সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে।
লুইস গ্লুক এর আগে পেয়েছেন পুলিৎজার (১৯৯৩), ইউ এস পােয়েট লরিয়েট (২০০৩-২০০৪) ইত্যাদি পুরস্কার।
লুইসের কবিতা ধ্রুপদিঘরাণার। সাহিত্য সমালােচকরা তাঁর কবিতায় খুঁজে পেয়েছেন আত্মজৈবনিকতার সঙ্গে ধ্রুপদী মিথের গুঢ় আন্তসম্পর্ক। তাঁর রচনায় অনেকেই রাইনের মারিয়া রিলকে এবং এমিলি ডিকিনসনের উত্তরাধিকারকে খুঁজে পান। গ্লুক, পশ্চিমি বিশ্বের মূল ধারার কবিতা থেকে নিজের কবিতাকে বিচ্ছিন্ন রাখেননি । গ্লুকের কাজের মধ্যে তার ১২ টি কবিতার বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে সাহিত্যের ওপর বেশকিছু প্রবন্ধ। নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার সব কাজেই স্পষ্টবাদিতার প্রয়াস লক্ষণীয়। তিনি মিথ ও শাস্ত্রীয় মোটিফ থেকে প্রেরণা নিয়ে বিশ্বজনীন হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
পুবাকাশ এ তাঁর দুটো কবিতা অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক আলমগীর মোহাম্মদ।)
১.বার্ষিকী ।। লুইস গ্লুক
আমি বলেছিলাম আমাকে জড়িয়ে শুতে পারবে। তার মানে এই নয় যে
তোমার শীতল পা জোড়া আমার শিশ্নের উপর তুলে দিবে।
কেউ একজনের উচিত ছিল বিছানায় কিভাবে কাজ করতে হয় তা তোমাকে শেখানো।
আমি মনে করি তোমার উচিত
নিজের উগ্রতা নিজের মধ্যে রাখা।
দেখো তুমি কি করেছো-
তুমি বিড়ালটাকে তাতিয়ে দিয়েছ।
কিন্তু আমি সেখানে তোমার হাত চাইনি।
আমি এখানে চেয়েছি।
তোমার উচিত আমার পায়ের দিকে নজর দেয়া।
তোমার উচিত সেগুলো ছেঁকে নেয়া
পরেরবার পাবে আমায় পঞ্চদশী যুবতী যেন।
কারণ পা জোড়ার উৎসমূলেই আছে অনেক কিছু।
২.অতীত ।। লুইস গ্লুক
আকাশে উদয় হলো ক্ষুদ্র আলোর
আচম্বিত দুটো
পাইন ডালের মাঝে, তাদের সুন্দর সুচালো কাটাগুলো
গেঁথে আছে যেন উজ্জ্বল উপরিতলে
এবং এর উপর
উঁচু, পালকময় স্বর্গ–
বাতাসের ঘ্রাণ নাও। সাদা পাইনের ঘ্রাণ সেটা,
খুব তীব্র হয় যখন বাতাস বয়ে যায়
বাতাসের ধাক্কায় সৃষ্ট আওয়াজ সমান অদ্ভুত,
সিনেমার বাতাসে শব্দের ন্যায়–
ছায়াগুলো হেঁটে যাচ্ছে। রশির
শব্দ হচ্ছে। তুমি এখন যা শুনছ
হতে পারে
নাইটিঙ্গেল বা কর্ডাটা
পুরুষ পাখি তার সঙ্গীনীকে প্রেম নিবেদনের —
দড়ি নড়ে গেছে। দোলনা
বাতাসে দুলছে,
দুটো পাইন গাছের সাথে দৃঢ়ভাবে বাঁধা।
বাতাসের ঘ্রাণ নাও। সাদা পাইনের ঘ্রাণ সেটা,
আমার মায়ের স্বর শুনছো হয়তো তুমি
অথবা গাছ জোড়ার গায়ে
বাতাসের ধাক্কার শব্দ
কারণ কোন কিছুর ধাক্কা ছাড়া
কিসের আওয়াজ হবে?
আলমগীর মোহাম্মদ : শিক্ষক, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
অনুবাদ ভালো হয়েছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।