অনূদিত কবিতাত্রয় ।। মুজিব রাহমান
হাত ।। মূল: ডোনাল্ড ফিনকেল
কবিতাটি ‘সত্য’-কে খানিকটা বেশি বিরক্তিকর করে তুলছে
চমৎকার একটি ব্রা যেন, এটিকে উত্তোলিত করছে, ঊর্ধে তুলে ধরছে দুহাতে। ( কতিপয় জমকালো বিপণিতে দৃশ্যমান লাল অথবা কালোতে আবৃত মডেলের হাত।)
সম্প্রতি যে জগত তোমার পরিণয়ে আবদ্ধ, এমন হাতের অভাবে,
ক্লান্ত স্ত্রীর মতো তোমার পাশে বিছানায় নুয়ে পড়ছে।
এমন হাতের অভাবে, চাঁদের মুখ ক্লান্তিকর
গাছটি আঁট ও আকুল হচ্ছে না, ঊরুসন্ধিও থাকছে না টানটান।
কুটিল কিংবা সরল, যেকোন ক্ষেত্রেই
কবিতাটি জাগিয়ে তুলবে এটি ছিল পূর্বানুমিত।
পেছনে হেলে বসো এবং মুক্তভাবে তার হাতগুলোকে খেলতে দাও তোমাকে নিয়ে:
চূড়ান্ত মুহূর্ত আসে, উত্তোলিত এবং উত্তেজিত,
যে মুহূর্তে তোমরা দুজন-ই সমান সুন্দর।
জোসেফ ব্রডস্কি ( ২৪ মে ১৯৪০ – ২৮ জানুয়ারি ১৯৯৬)
১৯৮৭ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী লেখক। ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে এবং পাশাপাশি লেখাপড়া শিখতে শিখতে লেলিনগ্রাদে তিনি বেড়ে ওঠেছিলেন। তাঁর সতত বিদ্রোহী সত্তা কবিতা সৃজন ও পাঠের ভেতর কাঙ্ক্ষিত শান্তি খুঁজে পেয়েছিল। ১৯৬৪ সালে যখন সোভিয়েত পুলিশ ‘সামাজিক পরজীবিতা’ র জন্যে তাঁকে গ্রেফতার করেন এবং একটি শ্রম শিবিরে দণ্ডিত করেন তাঁর কবিতা তখনই আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়। ১৯৭২ সালে দেশ থেকে বহিষ্কৃত ব্রডস্কি নির্বাসিত জীবনে কবি ডাব্লিউ এইচ অডেন এবং সমর্থকদের সহযোগিতায় অ্যামেরিকায় এসে থিতু হন। রাশান-অ্যামেরিকান এই কবির অধিকাংশ
কবিতা ক্রোধ, বক্রোক্তি এবং সাংস্কৃতিক সমালোচনা প্রধান।
তাঁর ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ শীর্ষক কবিতাটিও একই ধারার।
স্মৃতিস্তম্ভ ।। মূল: জোসেফ ব্রডস্কি
রাশান থেকে ইংরেজি: ডাব্লিউ এস মেরউইন
আসুন নগরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি,
দীর্ঘ এভিন্যুর শেষপ্রান্তে,
অথবা বিশাল চত্বরটির কেন্দ্রে।
একটি স্মৃতিস্তম্ভ
যা সমস্ত পটভূমিকে ছাড়িয়ে যাবে
কারণ এটি হবে সুনির্মিত এবং অতি বাস্তবানুগ।
আসুন আমরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি
যা কারোই বিরক্তির কারণ হবে না।
আমরা স্মৃতিস্তম্ভের পাদমঞ্চে ফুলের চাষ করবো
এবং নগর পিতাদের অনুমতিক্রমে
আমরা একটা ছোট্ট বাগান সাজাবো
যেখানে এসে আমাদের শিশুরা পিটপিট করে
বিশাল কমলা রং সূর্যের দিকে তাকাবে
এবং তাদের ঊর্ধস্থিত মানবমূর্তিটিকে
ভেবে নেবে সুবিদিত কোন চিন্তাবিদ
সংগীতকার
অথবা সেনানায়ক।
আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি পাদমঞ্চে প্রতি সকালে
ফুল ফুটবে।
আসুন আমরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি
যা কারোই বিরক্তির কারণ হবে না।
এমনকি ট্যাক্সি চালকেরাও
এর রাজসিক ছায়ারেখাকে
সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখবে।
বাগানটি পরিণত হবে মেলামেশার
আখড়াতে।
আসুন আমরা একটা স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি,
আমরা আমাদের কাজের পথে এর পাদদেশ দ্রুত অতিক্রম করে যাব
বিদেশিরা তার নিচে দাঁড়িয়ে
তাদের ছবি তুলে নেবে,
রাতে ফ্লাডলাইটের চোখ-ধাঁধানো আলোয়
আমরা এটিকে চমকের ঘোর পরিয়ে দেব।
আসুন আমরা মিথ্যার উদ্দেশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করি।
গীত ।। মূল: ক্রিস্টিনা রসেটি
আমি মরে গেলে, প্রিয়তম
আমার জন্য গেয়ো না কোন বিষণ্ণ গীত;
আমার শিয়রে রোপণ করো না কোন গোলাপ
কিংবা ছায়াঘন কোন শোকাচ্ছন্ন সাইপ্রাস
আমার ওপর বৃষ্টিস্নাত শিশিরসিক্ত
ঘন সবুজ ঘাস হও
ইচ্ছে হলে, মনে রেখো
ইচ্ছে হলে, ভুলে যাও।
ছায়াময়তা আমি দেখবো না
বৃষ্টিকে পাবো না ভয়;
শুনবো না বুলবুলি তান
যেন গাইছে গান বেদনায়:
এবং গোধূলিবেলায় দেখছে স্বপ্ন
যা না উঠছে না ডুবছে
হয়তো বা রাখতে পারি মনে
হয়তো বা যেতে পারি ভুলেও।
[কবিতার প্রতি ভালোবাসাকে রসেটি পরিবারের স্বাভাবিক উত্তরাধিকার বলা যায়। ক্রিস্টিনা রসেটি ( ১৮৩০ – ১৮৯৪) আত্মবিসর্জনের জীবন যাপন করেছিলেন। ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে দুবার তিনি বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। কবিতা-ই ছিল পরম আশ্রয়। একজন বড় কবি এবং সন্ত হিসেবে ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর সুখ্যাতি প্রতিষ্ঠিত। তাঁর ইতালীয় বাবা ইংল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। এবং কিংস কলেজে ইতালিয় ভাষা পড়িয়েছেন। বিশ্ববিশ্রুত ইতালীয় কবি দান্তের কবিতার টীকা-ভাষ্য রচনা করেছেন। এবং নিজ পুত্রের নামও রেখেছেন দান্তের নামে। তাঁর চার সন্তানই লেখালেখিতে যুক্ত ছিলেন। কনিষ্ঠ দুজন দান্তে এবং ক্রিস্টিনা বিশিষ্ট ইংরেজ কবিদের নামের তালিকায় নিজেদের যুক্ত করতে পেরেছিলেন।]
মুজিব রাহমান : সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।