শিক্ষায় করোনার হানা ।। আবদুল কাইয়ুম মাসুদ

ছোট্ট বাচ্চাটি মাকে জিজ্ঞেস করে, স্কুল কখন খুলবে? মা বলে কিছুদিন পর, করোনা চলে গেলে। কিছুদিন মানে বাচ্চার কাছে ২/৩ দিন। সে দিন গুণতে থাকে। আর প্রার্থনা করে, যেনো করোনা চলে যায়। নির্দিষ্ট সময় পর পর সে মাকে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে। মা পড়তে বললেই একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি। সে পড়ার আগ্রহ পাচ্ছে না। সে পড়া শিখতো, ম্যমকে খুশী করার জন্য।
স্কুলে তার বেশ কয়েকজন বন্ধু আছে। তাদের সাথে এটা সেটা কতো গল্প করে, ক্লাসে। এসবের কিছু আবার বাসায় এসে মাকেও বলে। সহপাঠিদের সাথে স্কুল আঙ্গিনায় দৌড়াদোড়ি, ছুটাছুটি করাতেই তার আনন্দ। স্কুল বন্ধ হওয়ায় এসব থেকে সে এখন বঞ্চিত। যে ছেলেকে স্কুলে যাওয়ার কথা বলার সাথে সাথে, ভোরে ঘুম থেকে ওঠে রেডি হয়ে যেতো, তাকে এখন দিনের ১০টায়ও ঘুম থেকে ওঠানো যায় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের মেধা মননের বিকাশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি অভ্যাসে ও শারীরিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে।

বাচ্চারা স্কুল আঙিনায় খেলাধুলা, দৌড়াদৌড়ি করে যা তাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। এখন সে সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। তারওপর স্মার্টফোন, টিভির পর্দা আরও অলস করে তুলছে তাদের। শারীরিক সমস্যাও বাড়ছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্ট মহামারির এসময়ে পৃথিবীব্যাপী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে প্রায় ৭ মাস। এ দীর্ঘসময়ে শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে। কাঙ্ক্ষিত পরিবেশে শেখার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যান্য সকল সেক্টরের কার্যক্রম চালু হলেও শিক্ষাঙ্গন এখনো সচল হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথীবির বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেছে। ৫ সেপ্টেম্বর খবরে প্রকাশ, করোনাভাইরাস সংকটের প্রেক্ষাপটে বন্ধ হয়ে যাওয়া কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আর তার স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার ইতোমধ্যেই তাদের ৩ সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছেন। কানাডার সম্প্রচারমাধ্যম সিটিভির ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এখনো করোনা ভীতি কেটে উঠতে পারেনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শিক্ষার্থী অভিভাবকেরা। গত মাসের শেষের দিকে খুলেছে পাঁচ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর একটি স্কুল। নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে স্কুলে উপস্থিত ছিল মাত্র ১১ জন শিক্ষার্থী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্কুলটির অধ্যক্ষ জানান মোট শিক্ষার্থীর ৪০ জন বাদে সবার অভিভাবক অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি বেছে নেন। এই ৪০ জনের অভিভাবক শ্রেণিকক্ষে তাঁদের সন্তানদের পাঠাতে সম্মত হন। এদের মধ্য থেকে ১১ জন স্কুলে আসে। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ এ খবর জানিয়েছে।

এসকল দেশের প্রযুক্তিগত সুবিধা অনেক বেশি। তারা হয়তো সে সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে। প্রযুক্তি সুবিধার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত হওয়া যায় তবে কথা শোনা বা ক্লাস দেখা বুঝা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পর নেট ডিস্টার্ব করে, বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আমাদের দেশেও করোনার প্রভাবে সকল স্তরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা এবং পর্যায়ক্রমে তা এ মাসের শেষ অবদী বর্ধিত করা হয়েছে। অবশ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। প্রথম দিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান কর্মসূচি শুরু করা হলেও পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।

সংসদ টিভি শুধু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আর অন্যান্য পর্যায়ের ক্ষতি সীমিত রাখার জন্য কিছু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে একটি গাইডলাইন বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশ করেছে। আর কীভাবে অনলাইনে সর্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়, সেদিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমাদের দেশে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতাও রয়ে গেছে। অনলাইন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি, আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও যথাযথ প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতা বেশ লক্ষনীয়। যার ফলে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রমের স্থলাভিষিক্ত হতে পারছে না। এ ডিজিটাল ব্যবস্থা কিছুটা দায়সারা গোছেরই মনে হচ্ছে। মূলত ডিজিটাল দক্ষতা বলতে বোঝায় যান্ত্রিক উপায়ে তথ্য যোগাযোগের প্রযুক্তিগত উপায়গুলো ব্যবহার করতে পারা। ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন সাধারণ বুদ্ধি, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান।

শিক্ষাকার্যক্রম স্থবির থাকা মানে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের সেশন জট তৈরি হওয়া। তবে আশার কথা, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস চালু করা হয়েছে। কলেজ পর্যায়েও চালু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এ ব্যাপারে বেশ তৎপর। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাবে স্টুডিও স্থাপন করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপকে কোনক্রমেই যথেষ্ট মনে করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

আমাদের দেশে প্রযুক্তি লভ্যতার ক্ষেত্র স্থান-কাল-পাত্রভেদে এক এবং অভিন্ন করা এখনো সম্ভব হয়নি। সকল শ্রেণির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এক পাল্লায় মাপারও সুযোগ নেই। তাই প্রত্যন্ত অঞ্চল তথা সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই একটি সর্বজনীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নীতিমালা প্রণয়নের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। শহর বা নগরের সাথে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার অনেক পার্থক্য রয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনলাইন শিক্ষায় সরাসরি কথোপকথন সমস্যা, কথোপকথনের ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যক্তির অংশগ্রহণ, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, প্রযুক্তিগত সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, ই-লার্নিং এ অনভ্যস্ততা, দুর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থা, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যসহ নানা ধরনের সমস্যা
আমাদের দেশে অনেক শিক্ষার্থী ই-লার্নিংয়ে তেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না বা পূর্ব থেকে অভ্যস্তও নয় বরং তারা ট্রেডিশনাল পদ্ধতিতেই অভ্যস্ত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার অনেক শিক্ষার্থীও সেই পুরোনো বৃত্তেই রয়ে গেছে। আর অনলাইন শিক্ষা আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশে অনেকটা ব্যয়বহুলও। এই পদ্ধতির শিক্ষার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটের মত প্রযুক্তিগত আনুষঙ্গিক অনেক সুযোগ-সুবিধা দেশের নিম্নবিত্ত ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর কাছে তা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শুধু যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু নয় বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ের প্রধান উৎস টিউশন ফি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারের কাছে ৩৯০ কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি করেছে।

এছাড়া কিন্ডারগার্টেনগুলোতে কর্মরত ৪০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন না পাওয়ার কারণে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তারাও সরকারের কাছে এসব প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা দাবি করেছেন। অন্যদিকে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীও তাদের দৈন্যদশা তুলে ধরে প্রণোদনা দাবি করেছেন। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানের বাড়িভাড়া, আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার বহন করা দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এমনিতেই শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের জাতীয় শিক্ষা বিশ্বমানের না হওয়ায় প্রতিবছর বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শ ফি বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। কিন্তু দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীত করা গেলে এই অর্থ দেশেই থেকে যেতে পারতো। এমনকি দেশে বসেই বিদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার উপার্জন সম্ভব হতো। বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য বাজেট পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দসহ মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে না পারলে এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বন্ধ স্কুলগুলো পুনরায় খোলার বিষয়ে এ বছরের এপ্রিল মাসে একটি নির্দেশিকা দিয়েছে ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপিএ এবং বিশ্বব্যাংক। এ সংস্থাগুলো তাদের নির্দেশিকায় বলেছে, এ মহামারীতে শিক্ষার ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা পুষিয়ে নিতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো, নীতি সংস্কার, সুস্থতা ও সুরক্ষার বিষয়ে নজর দিতে হবে।

সে সময় ইউনিসেফ তাদের ওয়েবসাইটে এ নির্দেশিকা প্রকাশের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩০ কোটি শিক্ষার্থী এ করোনাভাইরাস দ্বারা প্রভাবিত। ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপিএ এবং বিশ্বব্যাংক হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল, এই মহামারীর কারণে শিক্ষার কার্যক্রম বন্ধ হওয়া, শিশুদের পড়াশোনা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে প্রান্তিক শিশু যারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং পুষ্টির জন্য স্কুলের ওপর ভরসা করে।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুল পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে জাতীয় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় হতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশুদের সর্বোত্তম স্বার্থ এবং সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য বিবেচনার ভিত্তিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থ-সামাজিক সম্পর্কিত সুবিধা এবং ঝুঁকির মূল্যায়ন বিবেচনায় নিতে হবে।

তারা আরও বলেছে, বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মনো-সামাজিক সহায়তা এবং পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যকর সুবিধাসহ বিদ্যালয়ের উন্নত শিক্ষার এবং আরও ব্যাপক সহায়তার সঙ্গে স্কুলগুলো কীভাবে আরও ভালভাবে পুনরায় খুলতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।

আন্তজার্তিক এ সংস্থাগুলো জানায়, এ নির্দেশিকা স্কুলে ফিরে আসার পরে কীভাবে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হয় সে সম্পর্কে ব্যবহারিক পরামর্শ দেবে। নির্দেশিকায় রয়েছে- জনস্বাস্থ্যে নজর দিয়ে জরুরী পরিস্থিতিতে স্কুল খোলার এবং বন্ধের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা, প্রান্তিক ও যেসব শিশু স্কুলের বাইরে তাদের স্কুলে আনা এবং দূরবর্তী শিক্ষার পদ্ধতিগুলোকে শক্তিশালীকরণ ও মানোয়ন্ননের নীতি সংস্কার করতে হবে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীল করতে শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে। এমন পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে যা রোগ সংক্রমণ হ্রাস করে, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো সরবরাহ করে এবং হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পরিষ্কার পানি ব্যবহার, সামাজিক দূরত্বের বিষয় এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শিশুদের মাঝে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের সুস্থতা এবং সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং স্কুলে খাওয়ানোসহ প্রয়োজনীয় স্কুল-ভিত্তিক পরিষেবা জোরদার করতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফরে বলেন, ‘অসমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যের দুর্বলতা, সহিংসতা, শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহ ও স্কুলে বাদ পড়া শিশুরা দীর্ঘমেয়াদী হুমকির মধ্যে। যে শিশুরা বেশিদিন বিদ্যালয়ের বাইরে থাকে, তাদের আর ফিরে আসার সম্ভাবনা কম থাকে। যখন আমরা নিরাপদ মনে করব তখন যদি স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়টি অগ্রাধিকার না দিই তাহলে শিক্ষায় বড় ধরণের বিপর্যয় দেখতে পাবো।’
ইউনিসেফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন দেশ যখন স্কুলগুলো পুনরায় চালু করবে তখন ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি এবং বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন কোয়ালিশনের অংশ হিসাবে দূরবর্তী শিক্ষার তুলনায় শ্রেণিকক্ষ-ভিত্তিক নির্দেশনার সুবিধাগুলি মূল্যায়নের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানায়। এ ছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়েও নজর দিতে বলে।

বিশ্বব্যাংকের শিক্ষাবিষয়ক গ্লোবাল ডিরেক্টর জাইম সাভেদ্রে বলেন, স্কুলগুলো আবার খুলতে শুরু করার পরে শিশুদের স্কুলে এবং শেখার ক্ষেত্রে খাপ খাওয়ানোতে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে যারা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিল। এই নির্দেশিকাটি জাতিসংঘের প্রধান সংস্থাগুলোকে একত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কাঠামো সরবরাহ করছে।

এ সকল ব্য্যবহুল নিয়ম আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কতোটা কার্যকর করতে সক্ষম হবে তা সময় বলে দেবে। তবে একটা বিষয় লক্ষনীয়, প্রান্তিক লেবেলের মানুষ যারা ন্যাচারাল জীবন যাপন করে তারা অনেকাংশে এ ভাইরাস থেকে নিরাপদ রয়েছে

আবদুল কাইয়ুম মাসুদ : প্রভাষক, আইটি, কর্ণফুলী এ জে চৌধুরী কলেজ, কর্ণফুলী, চট্টগ্রাম।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন