জোবায়দা আক্তার চৌধুরী
তোমার অভিমুখে
রাত্রির শরীর জড়িয়ে চলেছি তোমার অভিমুখে
প্রেমের কাব্য বুনছে জোনাক,
পথের অন্ধকারে
হাসনাহেনা সুবাস বিলায় তোমার উঠোন জুড়ে;
তোমায় ডাকে হিজল তমাল
পাতার বাঁশির সুরে,
ফুল ভ্রমরার আদর কাড়ছে
বুকের ভেতর গড়ায়
ভালবাসার নীল সাগরে;
স্বপ্নজালে হারায়।
তোমায় পেয়ে স্বপ্ন হাসে অল্প সবুজ ঘাসে
মনটা যেন হাওয়ায় উড়ে মেঘের কোলে ভাসে।
নিন্দুকের কথা শ্মশানে পোড়াই
ওরা কানে কানে কথা বলে
ওরা মুখে মুখে শব্দ শোনে;
কথাদের কোলাহলে ক্লান্ত শহর
আড়ালেই থেকে যায় কষ্টপ্রহর।
তবুও থামে না কথাদের মিছিল
শব্দের চাবুকে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ;
ওরা পোষাকি শরীর মাপে
ওরা দেখে না আত্মার ক্রন্দন।
ওরা কবিতা বোঝে না,
তাই নিন্দাকে ফেরি করে বাঁচে।
পোড়ামন ছুঁতে চায় সবুজ সকাল
ঘাসের আঁচলে চোখ মোছে।
ভালবাসা পেলে বুক পেতে নেই
দু:খগুলো দু’হাতে জড়াই;
যন্ত্রণাদের দু’পায়ে মাড়িয়ে
নিন্দুকের কথা শ্মশানে পোড়াই।
সে তুমি নও তোমার ছায়া
হাওয়ার ফিসফাস
শেষ বিকেলের মায়া
চমকে চোখ খুলি
তুমি নও তুমি নও-
সে তোমার ছায়া
মাটি সরে গেছে কবে
তবু তো দাঁড়িয়ে আছি
ডেকে বলো কে ফেরাবে?
মাটির কাছাকাছি
কে জ্বালাবে আলো?
আঁধার আবছায়া
বিদ্যুৎ চমকালো;
শেষ রাতের মায়া
তুমি নও তুমি নও…
সে তোমার ছায়া..
পারো তুমিই পারো
ঘুম ছেড়ে গেছে সেই কবে
আলোর মিছিল হারিয়ে গেছে
অন্ধকারে ডুবে।
রাত গভীরে গল্প শোনায়
নিশুতি রাতের তারা,
স্মৃতির আকাশ মেঘ হয়ে এসে
বাজায় একতারা।
জানলা পাশে সবুজ কঁচিপাতা
শিশির ভেজা হিমেল পরশ বুলায়।
সব আছে তবু ঘুমের রাজ্যে
ঘুম যে কোথা হারায়।
ঘুম,আমায় তুমি কেমন করে ভুলতে পারো?
পারো তুমিই পারো, জানি তুমি কষ্ট দিবে আরো।
নির্ঘুম রাত যে আমায় বড্ড বেশি ভাবায়
যে তুমি রাত্রির চেয়ে গাঢ় হয়ে কষ্ট জমায়
দীর্ঘশ্বাস আটকে থাকে বুকের খাচায়।
ইট পাথরের এ নগর অবিরাম পুড়ছে,
পোড়া ছাই প্রতিদিন ভেসে আসে বাতাসে;
দেয়াল জুড়ে লেগে থাকে সেই পোড়া কান্না,
নিশ্চুপ নিরবতা বলে আর না…আর না…
একটি গানের হারিয়ে যাওয়া সুর
একটি গানের হারিয়ে যাওয়া সুর
সে তুমি
একটি গিটারের ছেঁড়া তার-
সে আমি।
শ্যাওলা জমা মন
সে ভয়,
ঘুণে খাওয়া সমাজ
সে ক্ষয়।
বিষাদের করুন সুর
অশ্রু সজল,
নরপিশাচের ছোবল
শহর অচল।
সুখ পুড়ে ধোঁয়ায় উড়ে
নোনা জল,
মায়ের আর্তনাদ
চোখ ছল ছল।
রক্তে ভেজা মাটি
গভীর ক্ষত,
অন্যায় মেনে নেয়া
পাপ অবিরত।
ভাঙা কাঁচ
স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো
ভাঙা কাঁচের মত;
ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে
লজ্জায় অবনত।
এবার তাদের জড়ো করো
করো সংহত;
স্বপ্ন আমার পলাশ শিমূল
ফুটুক শত শত।
আলো আমার ছুঁতেই হবে
পৌঁছতে হবে যেভাবেই হোক,
নদীর দু’ধার কাঁদামাখা পথ;
তবুও যেতে হবে ওপারে-
আলোর খেয়া যেধারে।
চাঁদ হাতছানি দিয়ে ডাকে
যেথায় ডুবে আছি আধাঁরে।
বলে চাঁদ আলো নাও
আছি আমি তোমারই দুয়ারে।
নিশুতি রাত ঝিঝির ডাক
আধার নামে প্রহরীর হাঁক
চাঁদ হাটে পাতার আড়ালে;
চোখ যায় ডালে ডালে
গ্রাম থেকে গ্রাম ছুটে চলা-
নদী আর খাল বিলে।
দুরের পথ
যেতে হবে আরো বহুদুরে,
এদিকে যাই ওদিকে যাই
পূবে আর পশ্চিমে;
আলো আমার ছুঁতেই হবে-
পথ যেখানে থামে।
জোবায়দা আক্তার চৌধুরী: এ শতকের প্রথম দশকের কবি।