অভিভাবক সমীপে

শামসুদ্দিন শিশির

শ্রদ্ধেয় অভিভাবক আসসালামু আলাইকুম।। আশা করি এই মহামারি কালে ভালো আছেন।। ভালো থাকবেন এই কামনা করছি। আমি মূলত যে কারণে আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখছি তা হলো ছুটির সময়ে বাড়ির সবাইকে নিয়ে সুন্দর ভাবে কীভাবে থাকা যায় তা নিয়ে।। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বাচ্চাদের স্কুলে বা মাদ্রাসায় অথবা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এই প্রথম ২৪ ঘন্টা এক সাথে থাকা হচ্ছে।। এই সময়ে কীভাবে আপনি সময় পার করবেন বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আপনার আচরণ কেমন হবে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সাথে। মা বাবার সাথে, বাবা মায়ের সাথে।। পরিবারে বৃদ্ধ মুরুব্বীরা থাকলে কেমন ভাবে চলবেন- বলবেন। প্রথমেই আসি মুরুব্বীদের কথায়। উনাদের সবচেয়ে বেশি সময় দিতে হবে। সুযোগ পেলেই গিয়ে কথা বলতে হবে। অতীত স্মৃতি শুনতে চাইবেন। সাধ্যানুযায়ী ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন। তাদেরকেই বেশি গুরুত্ব দিবেন। এমন কোন আচরণ করবেন না যাতে উনারা এতটুকু মনে কষ্ট পান। সকালে ঘুম থেকে উঠেই উনাদের খবর আগে নিবেন। বাজারে বা বাইরে যেতে জিজ্ঞেস করবেন উনাদের কিছু লাগবে কিনা। সময় মতো ওষুধ খেয়েছেন কিনা সে খবর ও নিবেন। প্রয়োজনে নিজেই মুরুব্বীদের ওষুধ খাইয়ে দিন। খাবার সময় সবার আগে মুরুব্বীদের ডাকবেন। রান্নার আগে উনাদের বিশেষ কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করছে কিনা তা জেনে নিবেন।

মুরুব্বীদের সাথে সব সময় হাসি মুখে কথা বলবেন। চেষ্টা করবেন উনাদের পরিধেয় কাপড় গুলো নিয়মিত ধুয়ে দিতে। মহান আল্লাহ কোন কিছুর বিনিময় ব্যতীত আমাদের দুটো সম্পদ দিয়েছেন একটি বাবা আরেকটি মা। এ দুজনের সেবা যারা ঠিক ভাবে করতে পারবেন তাদের জীবনে আর কোন দুঃখ থাকবে না। এ কথা অবশ্যই মনে রাখবেন।

এর পর আসি শিক্ষার্থীদের কথায়। শিক্ষার্থীরা চঞ্চল প্রকৃতির। সারাদিন ঘুরে বেড়ানো, গল্প করা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এদের মূল কাজ। বাসায় আসলে পড়া লেখা করা। এই যা। এদের বেশির ভাগই বাসায় কোন কাজ করে না। বাসার মুরুব্বীদের কথাও তেমন একটা শুনে না। নিজেদের বন্ধু-বান্ধব আর মোবাইল ফোন নিয়েই ওদের ব্যস্ত সময় কাটে। খাওয়ার সময় খেতে ডাকলেও এরা বিরক্ত হয়।

সেই অবস্থায় ২৪ ঘন্টা এক সাথে থাকা অচিন্তনীয় ব্যাপার। যা সত্যিই ঘটছে এখন। এই সময় শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতে হবে। নিচু গলায় কথা বলতে হবে। যাতে কোন কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে কাছে রাখা। ঘরের ছোট ছোট কাজ করতে দিবেন। যেমনঃ ঘর ঝাড়ু দেয়া, বিছানা গুছানো, থালাবাসন ধোয়া, নিজের কাপড় ধোয়া ইত্যাদি। তাছাড়া এ সময় কেউ কেউ এটা সেটা তৈরি করতে চায় যেমনঃ কেক তৈরি, আইসক্রিম বানানো, মিষ্টি বা পুডিং তৈরি। যা-ই করুক না কেন তাদের ঐসব কাজে সহযোগিতা করবেন। কখনো কখনো দেখা যায় আপনার রান্নার সময় ওরা এসে হাজির। তখন রাগ না করে বুঝিয়ে রান্না শেষে আপনিসহ সময় দিন। এতে বাচ্চাদের মন ভালো থাকবে। এই সময় তাদের পড়াশোনার জন্য চাপাচাপি না করাই ভালো। তবে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। শুধু স্কুলের বই নয়, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, গল্প, কবিতার বইও পড়বে। বাসায় থাকতে থাকতে মা বাবার কাছ থেকে ম্যানার্স শিখবে। যথা সময়ে খাওয়া ঘুমানোর কাজটি রুটিন মাফিক করবে। সময় করে ভাই বোন,মা বাবা মিলে খেলবে বা টিভি দেখবে। এতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মা বাবা ছেলে মেয়েদের মুরুব্বীদের শ্রদ্ধা, সম্মান করতে শেখাবেন।

মা বাবা কখনো এমন করে চব্বিশ ঘণ্টা বাসায় ছিলেন না। আছেন যখন এটা সেটা নিয়ে ঝগড়া করবেন না। একজন আরেক জনকে মন্দ বলবেন না। বরং বন্ধু হবেন। যা দেখে ছেলে মেয়েরা শিখবে। আপনাদের উপর তাদের শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে। কারণ আপনারা দুজনেই দুজনকে কাজে সাহায্য করছেন। শ্রদ্ধা করছেন। পরিবারের মাঝে একটা অন্য রকম ভালো লাগা খেলবে। বাবা সব সময় মা ই কাজ করবে সেদিকে তাকিয়ে বসে না থেকে নিজেই কাজে হাত মেলাতে পারেন। এতে একজন মানুষের উপর চাপ কমবে। সারাদিনের ক্লান্তি কিছুটা হলেও কমবে। মা মানুষটি স্বস্তি পাবে। একটু বিশ্রামের সময় পাবে। একাজটি পুরো পরিবারের আনন্দ আর সুখের জন্যই খুব দরকার। এ কথা গুলো শুধু মহামারি করোনা কালের জন্যই নয়। সারা জীবনের জন্য।। আমি আশা করি প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় অভিভাবকবৃন্দ এমন আচরণে আমরা উপকৃত হবো। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশ উপকৃত হবে।। আপনাদের জন্য শুভ কামনা। আপনারা নিরাপদ থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। ভালো থাকবেন।।

শামসুদ্দীন শিশির : শিক্ষা গবেষক

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন