গুচ্ছ কবিতা ।। কামাল আহসান

শুভ কামনা

শুভ কামনা পাপড়ি খসানো ফুলের জন্য
পরিপক্ব ফলের শাখা-প্রশার জন্য…
সনাতন বৃক্ষের সবুজ পাতার জন্য আর
ছেঁড়া পালকের মতো মাটিতে লুটিয়ে থাকা
হলুদ পাতার জন্য…
পালং শাকের মতো সতেজ চিন্তার জন্য
পরিকল্পিত মেহমানদারির মতো শুভ কামনা।

শুভ কামনা উচ্ছ্বাসিত মাতৃত্বের জন্য
আর সন্ধ্যার মাঠে উড়ানো ধুলার জন্য…
কালো গাভীর পেছনে দৌঁড়ানো
লাল বাছুরের জন্য মরমি সুরের মতো শুভ কামনা
যার লেজের বায়ু তরঙ্গে নেচে ওঠে বিমুগ্ধ বিকেল।

বেহুলা ঢঙের শুভ কামনা বাঁশের বাঁশির জন্য
আর সেই রাখালের ঠোঁটে ও জিহবার জন্য…
যার মুখ ভেসে ওঠে গ্রামে, পাড়ায় আর মাতৃত্বের আঁচলে, খোটে বাঁধা আশীর্বাদের গিঁটে
পিতৃত্বের ছায়ায় ঝোলানো বিশুদ্ধ, রঙিন গামছায়।

শুভ কামনা তার বিপ্লবী চিৎকারের জন্য…
আর সেই হাত ও হাতিয়ারের জন্য
যা গর্জে ওঠে মজলুমের করুণ মুখচ্ছবি বুকে নিয়ে
অশ্রুর বর্ণচ্ছটা মাটিতে মিশে যাবার আগেই…

চট্টগ্রাম ২২/ ১০/ ২০

হাজরা ঘরের স্রোত

মৌসুমীর চোখে হাসে বিমোহিত ঘোর….
নজরে আকাশ গেঁথে কাছে ডাকে পিপাসা ডাগর
আঁচল-আড়ালে রাখা সোনামুখ তোর-
দূরে গিয়ে বারবার আসো ফিরে ফুলতোলা ভোর।

হেমন্তের মাঠে জাগা ধান-ছোঁয়া ঘাসে-
সবুজের ছাউনিতে খুঁজে পথ ফিরে সে-ই আসে
বিকেলের রোদে একা তার দেহ হাসে
অধরের মায়া ছুঁয়ে সব জ্বালা- সুর হয়ে ভাসে।

ফসলের মুখে হাসে জোছনার সুখ…
দোলা লাগে গ্রামজুড়ে, মনজুড়ে মৌসুমীর মুখ
পাখির ডানার মতো আরামে উন্মুখ
বায়ুর তুফান হাঁটে ছায়া ভুলে- অতীতের দুঃখ।

হাজরা ঘরের স্রোত, দুই চোখে এঁকে শত নদী
এ বুকে তুফান হবে- চুপিসারে মিশে যাও যদি।

চট্টগ্রাম, ১৭/ ১০/ ২০

আয়ু

চেয়েছি চাঁদের কাছে কিছুু আয়ু সাময়িক ধার
মেহমানি চোখ চায় রাঙা স্বাদে সাধু-গতি তার।

ভূগোলের দায় ভুলে কিছুু চোখ শোকে খায় দোল
কিছুু আয়ু কৃষকের- বিলে ভাসে ছলে বাঁধা খোল।

ধীবরের চোখে আয়ু, আছে আয়ু ভরা-নদী মিনে
জীবনের ছায়া নড়ে বায়ু ঘিরে- পাতা খসা দিনে।

জলের জ্বালায় তটে ছুটে আসে মাতাল জোয়ার
জুলেখার আয়ু হাসে কালো সুখে- রূপের পয়ার।

রেশম পোকার আয়ু বাঁধা থাকে মাকু চেনা দলে
বাজারের আয়ু কাঁদে ক্রেতাদের পাঠ করা ছলে।

তাঁতের গড়নে খোঁজে সাধু মান- ভুবনের গানে
ঘুমের আয়ুর টানে কাঁদে রাত আলোময় ধ্যানে।

আয়ু হলো আকাশের নীলে লেখা ঠিকানা বিশাল
আলোর ইশারা ঘেরা স্রোতে থাকা গতিময় পাল।

চট্রগাম, ০৪/ ১০/ ২০

উড়ে যাওয়া রাতের সুরভি

যুবতীর চোখ ছুঁয়ে উড়ে যায় কিছুু যুবা-রাত
সুরভি ছড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর লালিমা নজরে
মখমলী আসমানে করবে যে প্রিয় করাঘাত
সুরাহি ভরার রাতে কাঁদে তার পিপাসা অঝরে।

বাসের চাকার মতো রাতভর ধরে রেখে হাসি
কিছু চোখ রাতের সজনী হয়ে আঁধার কুড়ায়
রাখে ধরে গ্রহনের চাঁদ, সুরভি’কে ভালোবাসি-
চাঁদের বিভোর ডাকে জোছনার বয়স ফুরায়।

যুবতী-নামের পাশে জাগে রাত, আকাশ ঘুমায়
কালো রঙ খোঁপার মায়ায়; জানালায় জাগে
কিছুটা আঁধার, চেনা নদী আর জানা মোহনায়
তবু ঢেউ, তোলে নাই কেউ পাললিক অনুরাগে।

যুবতীর দুই চোখে আঁকা আছে পলল আকাশ
যুবকের রাত ছুঁয়ে আনো ভোর, জাগুক সুবাস।

ঢাকা, ২০/ ০৯/ ২০

তুই

একদিন আলো হবো, একদিন ভোর
সাহসি বিকেল হবো পথ চেয়ে তোর।

হলুদ পাখির ঠোঁটে বেঁধে দিয়ে ঘুম-
একদিন তুলে দেবো বিরহের ধুম।

রাতের আকাশ কিনে চাঁদ দেবো তোকে
ভূ-লোক ভাসিয়ে দেবো তুই-হারা শোকে।

তোর চোখে নদী এঁকে গড়বো তুফান
মরমে আগুন পেলে ভুলে যাবো মান।

পথ-ভোলা মাঝি হবো তোর খেয়াঘাটে
পারাপার করে মন আলো দেবো খাটে।

একদিন ভুল করে ছুঁয়ে দেবো তোকে-
তনুতায় মিশে গিয়ে জ্বালা হবে ফিকে।

তোর নামে চেয়ে থাকা, দেখা তোর নামে
নাড়ার আগুনে শীত কাঁপে যে আরামে।

ঢাকা, ২৪/ ০৯/ ২০

কামাল আহসান: শূন্যদশকের কবি।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন