পাহাড়ী ভট্টাচার্য
আমার পিতৃব্য পংকজ ভট্টাচার্য-এর একদিন আগে তাঁর জন্ম। তাঁর সাথে, কাকুর সম্পর্কসূত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছাত্রাবস্হায়। তাঁরা ‘৬০-এর উত্তাল সময়ে সূর্যসেন হলের ছাত্র ছিলেন; উভয়েই ড. জি সি দেব-সহ প্রবাদপ্রতীম সে সময়ের অনেক শিক্ষকের সান্নিধ্য-ধন্য। পংকজ কাকু-র জীবন রাজনীতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে গত ৬ দশক; ড. অনুপম সেন শিক্ষা ও সমাজ-জীবনের পরতে পরতে আলো ছড়িয়েছেন সম-সময়ে।
ব্যক্তিগতভাবে,তাঁকে বিশদ জানা হয়ে ওঠেনি, দেখেছি কম-বেশী আনুষ্ঠানিকতা-ঘিরেই। ‘৯০-এর দশকের ছাত্র-আন্দোলন ও ন্যাপ-রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার সূবাদে সভা-সমাবেশে, বিবিধ নাগরিক উদ্যোগ-তৎপরতায়,নানা উপলক্ষে তাঁর বক্তব্য শুনেছি, সাহচার্য পেয়েছি ক্ষনিক ; দু”একবার তাঁর উত্তর নালাপাড়ার এবং কাজির দেউড়ির বাসায়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়-দপ্তরেও যাওয়া হয়েছে।
তাঁর লেখালেখির সাথে তেমন পরিচিত নই; বরং, বাবা-কাকাদের মুখে, পার্টি-নেতৃত্ব এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে তাঁর সম্পর্কে শুনেছি অনেক বেশী।
মুসলিম ইনস্টিটিউটও সংলগ্ন স্টুডিও থিয়েটার হল, জে এম সেন হল, জেলা পরিষদ মিলনায়তন, ডি সি হিলের বিপরীতে অধুনালুপ্ত বুড্ডিষ্ট ফাউন্ডেশন ছিল চট্টগ্রামের সভা-সমাবেশ-আয়োজনের ইনডোর ভেন্যু। এসবের প্রায় প্রতিটিতেই গত ৩ দশক দেখছি তাঁকে, শুনছি তন্ময় হয়ে তাঁর স্বদেশ-ভাবনার কথা, রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ-সভ্যতা রূপান্তরের অনুপম বর্ণন, আকর্ষক ইতিবৃত্ত।
ড. অনুপম সেন প্রবলতর সংবেদনশীল, পুর্ণমাত্রায় বিশ্ব-সচেতন এক বুদ্ধিবৃত্তিক সত্বা যিনি ব্যাপক গণমানুষেের কাছাকাছি থাকেন, চলমান পৃথিবীর ও মানুষের পালস্-বোঝার চেষ্টা করেন, সংকটে-সমস্যায় দিতে চেষ্টা করেন সমাধানসূত্র। তাঁর পাণ্ডিত্যকে একাডেমিক কর্মে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি, ছড়িয়ে দিয়েছেন বহুমাত্রিক তৎপরতায়।
ড.অনুপম সেন কায়মনোবাক্যে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযূদ্ধের মৌল চেতনায় আস্হাশীল। একইসাথে, সামাজিক ন্যায্যতা, সুশাসন ও দায়বদ্ধতা, ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে আপোষহীন ও উচ্চবাক। স্মর্তব্য, মননে তীব্র এক সাম্য-স্বাপ্নিকও তিনি, যাপনে অনাড়ম্বর।
৮০তম জন্মদিনে এ বিরলপ্রজ রেনেঁসা-পুরুষকে প্রণাম। দীর্ঘায়ু শুধু নয়, তাঁর আনন্দায়ুও আরাধ্য।
পাহাড়ী ভট্টাচার্য: কবি ও প্রাবন্ধিক।