গুচ্ছ কবিতা ।।  তোফায়েল তফাজ্জল ।। পুবাকাশ

উলট-পালট

কাঁঠালের আঠা লাগা সম্পর্কের হুবহু দৃষ্টান্ত
চোরে-চোরে, নেশাখোরে-নেশাখোরে। 
অনুরূপ পতন মনের অধিকারী যে বা যারা চেনে তারা  
সামনে পিছে কারা একই পথের পথিক। 
নাগালের বাইরে থেকেও হাতড়িয়ে পেলে মাছি-বার্তা 
বেগ পেতে হয় না রসুন ঐক্যে পৌঁছতে, 
বা ক্ষণিকে হয়ে যেতে কল্কি-বন্ধু। 

বিপদে পালায় একই গর্তে ; দলছুট হয়ে কেউ ধরা পড়লে 
ডানেবাঁয় না তাকিয়ে তাকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে,
ঢেলে দিতে পিছপা নয় শোণিতের অন্তিম বিন্দুও । 
আখেরে,  একাট্টা হয়ে মাথাচাড়া দিয়ে দেয় মরণ কামড়।  
অথচ সত্যের ছত্রছায়ায় এমন 
চিত্রণ বিরল। 
কেনো এরূপ উলট-পালট একালে ?  

সূক্ষ্ম হিসেব

যে হয় না কোনোদিন কারো কাছে নত
দিনে পাঁচবার শুধু হয় তাঁর কাছে অবনত, 
তাকে ভেবে তুচ্ছ
নাচাও না পুচ্ছ 
সত্যিকারে তিনি অনেক অনেক বড়ো, 
বরং পদাঙ্ক অনুকারে পারলে বংশসহ লড়ো। 
তাঁর কাছে একবার নত হলে 
শক্ত রোদে পাওয়া বরফের চেয়েও চৌগুন গলে  
তার প্রতিদানে দেন দুনিয়া ও এর ভেতরে যা কিছু আছে 
দূরে কাছে,
এর বহুগুন বেশি পূণ্য, 
মানুষের চির শত্রু যতোই হোক না মনঃক্ষুণ্ণ।  

ভাবো তো এবার, বান্দা দিনে 
সব ধরনের ধান্দা বিনে 
সাদা মনে কতোবার নতজানু হয় 
কেবল তাঁকেই করে ভয় ?
পাবে এর সূক্ষ্ম হিসেব নগদে সকলে নিশ্চয়। 

নিচু জীব

এরা কতো নিচু জীব  – এর অতি সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে 
ভাষা আজ বেকায়দায়। 
নির্জন নিশিতে নয় শুধু, সূর্য জেগে থাকা কালে 
সচেতন চোখকেও গোনায় না রেখে 
মুখে স্কচ-স্টেপ মেরে বা ঢুকিয়ে গামছা 
করে শ্লীল হানি, নগ্ন এলাকায় ছোঁড়ে 
মাথাচাড়া দেয়া আগ্নেয়াস্ত্র।   
পরে, দু’আঙুল সামনে বেড়ে শকুন-ঈগল হয়ে ছিঁড়ে  
বিশেষ অঙ্গের আগাগোড়া। 

গলা চেপে ধরে নিঃশ্বাসে হুড়কো এঁটে 
দৈহিক স্পন্দনে বাদ সাধে। 
ফাঁক পেলে নির্ভয়ে নিশ্চিহ্ন করে আলামত, সব। 
এইসব পশুবৎ আচরণ অবলার সাথে নয়, 
স্বাধীন জাতির বিশ্বাসের সাথে, সতী দেশমাতৃকার সঙ্গে। 

এই পক্ষ নিয়েও আবার জোড়াতালি ? 
ওরা আর এরা উভয় সমান, সত্যি। 

ভালোমন্দে হাত ধরাধরি করে ছন্দে 

ছিলে তন্বী,  এখন তনিমা 
পুষ্টিগুণে দৈন্য কি আহার্য,
টাটকা কোনো ফল নেই সপ্তাহেও ধার্য 
নাকি দুশ্চিন্তার ধাক্কায় ভেঙেছে সীমা ? 

কষ্ট হলেও সরাতে হবে অধিক চিন্তার স্তূপ
সর্বদাই ছাড় থাকবে পাশে 
বিশেষ সাক্ষাৎ না হলেও সব দিন কিংবা মাসে,
দেখবে, কেটে ভগ্নদশা দেখা দিচ্ছে রূপ। 

চিকিৎসক নই বলে দিলে অপভাষ   
সাক্ষ্য-প্রমাণে কি সেই চিত্র ?
আরো মাথায় উঠালে কেনো মরুই আমার মিত্র ?
স্বেচ্ছায় আমি কি এতো নিচে করি চাষ ?

‘ভালোমন্দে হাত ধরাধরি করে ছন্দে’ 
বিষয়টি সামনে রেখে হাঁটতে হবে পথ, 
ভুলে যেতে হবে ধান নখরে আঁচড়িয়ে
খাওয়ার সময় সেই মুরগি-রথ, 

তাহলেই ভরে উঠবে সংসার আনন্দে।

দেহঋতু 

দৃশ্যাবলী ছিলো চলমান,
যাচ্ছিলো ভাস্কর লোকাল বাসের ভাঙা ছাদে চড়ে।
আমরা ছিলাম সে বাসের ভেতরে –
সেখানেই সৃষ্টি করা হয় উঁচুনিচু পরিস্থিতি,
বেনামি বিস্কুট মাম জলে মুখে গুলে 
বমির বিকল্পরূপ ছেড়ে দেয় যাত্রীর জামায়, 
সে এসব সামলানোর রাগে-ক্ষোভে, লাজে – 
চক্র, সে সুযোগ তুলে নেয় মাকু চলা দ্রুত হাতে।  
বাঁকা দৃষ্টি, এভাবেই নিচ্ছে 
ফুলের ফাগুন, দেহঋতু।
এতো কিছুর পরেও কি জেগে ঘুমিয়ে – 
তবু কি দেবে না দাঁত ভাঙা প্রত্যুত্তর ?

লাভ হবে না

আগুনে ঠিক পুড়লে লোহা 
ছেনিতে তা কাটে,
শক্ত থাকার ভাব দেখানো 
তখন কী আর খাটে ?
হাতুড়ির আঘাতে কী আর 
থাকে ফোলা-ফাঁপা,
ঠিক থাকে কি ‘গায় মানে না 
আপনি মোড়ল’ চাপা ?

তুমিও তেমন সোজা হবে 
যেদিন পড়বে ধরা, 
লাভ হবে না – কারণ,  সেদিন 
‘খাঁচার পাখি’ মরা।

হাইকু 

১.
অথই বা বিন্দু 
জলকে জায়গা করে দেয় 
নির্দ্বিধায় সিন্ধু।

২.
নূপুর বৃষ্টি      
শ্রবণে কান পায়
অপূর্ব মিষ্টি!

৩.
নতুন ঘাস
ঠোঁটের নরমকে
করে প্রকাশ। 

৪.
পাপড়ির স্পর্শ
বিশ্বাস করে লুট,
এ কার ঠোঁট ?

৫.
অসি থেকেও 
অধিক ধার মনে,
বোঝে ক’জনে ? 

৬.
রূপসী চাঁদ  
পানির খেলনা কাপে 
কাটায় রাত।

তোফায়েল তফাজ্জল : নব্বই দশকের কবি।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন