সফলতার জিয়ন কাঠি ।। ফজলুর রহমান
আমাদের বেশ পড়া আছে “Jack of all trades, master of none”। এটাকে আমরা নিজেদের মতো পড়ে নিলে হয়,-‘সব বিষয়ের বিড়াল তুমি, কোন বিষয়ের বাঘ না।’
সব বিষয়ের বিড়াল হলে কিছুটা ভালো। সব দিকটা চেখে দেখা যায়। এক জীবনে অনেক স্বাদ মিলে। সবজান্তার তৃপ্তি আসে। মাতব্বরিও মিলে চাইলে। তারপরও বলা হয়, বিড়ালের স্বরটা ক্ষীণ, মিউ মিউ।দ্রুত হারিয়ে যায় অন্যস্বরের উপস্থিতিতে।
আর বাঘ? বাঘ তো বাঘই। দাপুটে গর্জন। সদর্প উপস্থিতি। এজন্য বাঘের বাচ্চা উপাধি আসে। বাঘের মতো হওয়ার উপদেশ মিলে।
বাঘ হতে হলে স্পেশালিষ্ট হতে হবে। অনেকের মধ্যে অন্যতম নন। আলাদা একজন। সেটা কেবল এক বিষয়েই হোক না কেন। এভাবে আইনস্টাইন আর রবীন্দ্রনাথ যার যার জায়গায় অসাধারণ। এভাবে মেসি আর টেন্ডুলকার যার যার মাঠে অনন্য।
এভাবে সেরা ধনী বিল গেটস মানে তথ্য-প্রযুক্তি, ওয়ারেন বাফেট মানে শেয়ার বাজার থেকে উঠে আসা বিগ বস্, আলেকজান্ডার মানে বিজয়ী বীর, সক্রেটিস মানে দর্শনরাজ।
আসলে এভাবে সবখানে স্পেশালিস্টদের জয়জয়কার। একজনের মাপকাঠিতে আরেকজন পরিমাপযোগ্য নন তারা। তবে স্ব স্ব রাজ্যে রাজত্ব তাদের। সকলে সমান সফল হবেন এমন নয়। কিন্তু সফলতার মূলে এক বিষয়ে একাগ্রতাটাই বেশি চোখে পড়ে।
The One Thing নামে একটি বই লিখেছেন Gary Keller and Jay Papassan । সফলতার মূলমন্ত্র নিয়ে এখানে নানা আলোচনা আছে। এর একটি উল্লেখযোগ্য বাক্য হচ্ছে- ‘জীবনে যেখানে আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছে যখন আমি আমার কাজকে শুধুমাত্র একটি জিনিসের উপর আবদ্ধ করে রেখেছি এবং যেখানে আমার সাফল্য আসেনি সেখানে আমার দৃষ্টি একসাথে অনেকগুলো জিনিসের উপর ছিলো’।
পেশাগত জীবনে খুবই সফল একজন ব্যক্তির কথা শোনা যাক-
‘এ ধারণাটা প্রথমে আমার মাথায় আসে যখন আমি হাইস্কুলে এবং কলেজে ছিলাম। যেকোনো একটি টপিক বা সাবজেক্ট নিয়ে আমি যখন ব্যস্ত তখন অন্য কোন বিষয় বা সাবজেক্টে আমি মনোযোগ দিতাম না। প্রথম টপিকটি পুরোপুরি আমার আয়ত্তে আসার পরই আমি পরবর্তী টপিক বা সাবজেক্টে দৃষ্টি দিতাম।
খেয়াল করে দেখলাম যে আমি যদি একটি নির্দিষ্ট টপিকে কয়েক ঘণ্টা বা প্রয়োজনে কয়েকদিন একটানা মনোনিবেশ করে থাকি তাহলে এ জিনিসটি আমার কাছে সহজবোধ্য হয়ে আসে। একই সময় আমি খেয়াল করে দেখলাম যে আমার বন্ধুরা যারা অনেকগুলো টপিক বা সাবজেক্ট একসাথে করায়ত্ত করতে চাইছিলো তারা ব্যর্থতায় হাবুডুবু খাচ্ছিল।
আমার সামনে যদি এখন একটি প্রজেক্ট থাকে তাহলে আমি অন্য প্রজেক্টে হাত দেবো না। আমি যদি এখন নির্দিষ্ট একটি টপিক নিয়ে লিখতে থাকি তাহলে অন্য টপিকে আমি লিখতে বসবো না। আমি যদি আমার বাগানের কাজ করতে থাকি তাহলে ওই সময় আমার পড়াশোনার চিন্তা না করলেও চলবে। আমি যখন ডিউটিতে বসে আছি তখন আমার সংসারের চিন্তা করলে ডিউটিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। যদি আমি আমার ডিউটিতে সংসারকে টেনে নিয়ে আসি, তাহলে সংসার এবং ডিউটি কোনোভাবেই ভালো ভাবে সম্পন্ন হবে না’।
অনেক কাজের জন্য শারীরিক, মানসিক সাড়াও লাগে। শরীর পারলেও মস্তিষ্ক বলতে পারে ‘পারবো না।’ আবার মস্তিষ্ক কোনোমতে ধারণ করলেও শরীর বেঁকে বসতে পারে। শরীর ও মন দুটো পারলেও আবার সময়ের অনুমোদন মিলে না। জীবন ছোট। সংক্ষিপ্ত যাত্রায় অনেক ভ্রমণ করতে হয়। এরই মাঝে অনেকগুলো এলোমেলো বা অসম্পূর্ণ কাজের চেয়ে অল্প সেরা কাজই ভালোভাবে টেকসই হয়।
তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হয়, রাতারাতি স্পেশালিষ্ট হওয়া যায়না। সফলতাও আসে না। কবি নজরুল অনেক পথঘাট পার হয়ে অমরত্ব পেয়েছেন।
স্টক মার্কেটের গুরু ওয়ারেন বাফেটের এর কাছে সাফল্য হঠাৎ করে এক দিনে আসেনি। বস্তিুর ছেলে কার্ণেগির ইতিহাস সেরা হতে লেগেছে বছরের পর পর। নিরন্তর সাধনা থাকলে সফলতা নিজ দায়িত্বে এসে ধরা দেয়।
ফজলুর রহমান: কথাসাহিত্যক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)