শামসুর রাহমানের কবিতায় রাজনৈতিক সচেতনতা
পান্থজন জাহাঙ্গীর
কবিতা অঙ্গনে তিরিশের কবিরা নিজ নিজ ধারায় প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই কবিতার অব্যাহত ধারার ভাঙনের সুর বেজে উঠে মূলত শামসুর রাহমানের প্রয়ানের মাধ্যমে। তারপর ক্রমে ক্রমে শহিদ কাদরী ও আল মাহমুদের প্রয়াণ তিরিশের কবিতার ধ্বজা বাহকরা খন্ডিত সংবাদের মতো ধীরে ধীরে লঘিষ্ঠ হয়ে পড়লেও সৃষ্টির সমারোহে কেউ অরুন্ধতী নন। নিয়ত নক্ষত্রের মতো জ্বাজ্জল্যমান তারা।” প্রথম গান দ্বিতীয়মৃত্যুর আগে” কাব্যের মাধ্যমে কবিতার যে জয়ধ্বজা হাতে নিয়ে জানান দিয়েছিলেন যে কবি তার হাতেই একে একে রচিত হয়েছে রৌদ্র করোটিতে, ফ্রস্টের কবিতা, বিধ্বস্ত নীলিমা, মার্কোমিলিয়ানস, নিরালোকে দিব্যরথ, খাজা ফরিদের কবিতা, নিজ বাসভূমে, হৃদয়ের ঋতু, বন্দি শিবির থেকে, দুঃসময়ের মুখোমুখি, ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা, আদিগন্ত নগ্ন পদধ্বনি, এলাটিং বেলাটিং, একধরনের অহংকার, আমি অনাহারী, শূন্যতায় তুমি শোকসভা, বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, ধান ভানলে কুড়ো দেবো, গোলাপ ফোটে খুকরী হাতে, প্রতিদিনের ঘরহীন ঘরে, স্মৃতির শহর, প্রেমের কবিতা, ইকারুসের আকাশ, উদ্ভট উঠের পিঠে চলেছে স্বদেশ, মাতাল ঋত্বিক, কবিতার সাথে গেরস্থালী, নায়কের ছায়া, অক্টোপাস, আমার কোনো তাড়া নেই, যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে, নিয়ত সন্তান, অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই, হোমারের স্বপ্নসময় হাত, শিরোনাম মনে পড়েনা, ইচ্ছে হয় একটু দাঁড়ায়, অদ্ভুত অাধার এক, ধূলায় গড়ায় শিরস্ত্রান, এক ফোটা কেমন অনল, আমৃত্যু তার জীবনানন্দ, টেবিলে আপেলগুলো হেসে উঠে,দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে, অবিরল জলভ্রমি, আমরা ক জন সঙ্গী, ঝর্ণা আমার আঙ্গুলে, খুব বেশি ভালো থাকতে নেই, স্বপ্নেরা ডুকরেওঠে বারবার, মঞ্চের মাঝখানে, বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়, সে এক পরবাসে, হৃদয় আমার পৃথিবীর আলো, গৃহযুদ্ধের আগে, খন্ডিত গৌরব, ধ্বংসের কিনারে বসে, হরিণের হাড়, এসো সে অবেলায়, রংধনু সাঁকো, আকাশ আসবেড় নেরড়মে, লাল ফুলির ছড়া৷, , উজাড় বাগানে, এসো কোকিল, এসো স্বপ্নচাঁপা, হ্যামলেট, ডেনমার্কের যুবরাজ, মানব হৃদয়ে নৈশব্দ সাজাই, তুমিই নিশ্বাস তুমিই হৃদকম্পন, তোমাকেই ডেকে ডেকে রক্তচক্ষু কোকিল হয়েছি, হেমন্ত সন্ধ্যায় কিছুকাল, ছায়া গণের জন্য কিছুক্ষণ, নয়নার জন্য, আবার দোলনায় দীপিকা, ভাঙাচোরা চাঁদমুখ কালো করে ধুঁকছে, গন্তব্য নাইবা থাকুক, কৃঞ্চ পক্ষের পূর্ণিমার দিকে, রূপক প্রবাসে দগ্ধ সন্ধ্যারাত, টুকরো কিছু সংলাপের সাঁকো, স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে বেঁচে আছি, শুনি হৃদয়ের ধ্বনি, হৃদপদ্মে জোছনা দোলে, নক্ষত্র বাজাতে বাজাতে, ভস্মস্তূপে গোলাপের হাসি,মেঘ লোকে মনোজ্ঞ নিবাস, সৌন্দর্য আমার ঘরে, কালের ধূলোয় লেখা, আমের কুঁড়ি নামের কুঁড়ি , গোরস্তানে কোকিলের করুণ আহবান, ইচ্ছে হলে যায় ছুটে যায়, কবিতা একধরণের আশ্রয়, চাঁদ জেগেছে নদীর বুকে, না বাস্তব, না দুঃস্বপ্ন, অন্ধকার থেকে আলোয়, শামসুর রাহমানের গল্প, নির্বাচিত কবিতা, শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা, নির্বাচিত প্রবন্ধ নির্বাচিত কবিতা সমগ্র, নির্বাচিত ছড়া সমগ্র উপন্যাস সমগ্র, শামসুর রাহমানের রচনাবলি ১ ও শামসুর রহমানের রচনাবলী ২ সেরা শামসুর রাহমান ইত্যাদি দু হাত ভরে দিয়েছেন, বাংলা সাহিত্যের জমিন তার সৃষ্টির সম্ভারে সুজলা ও সুফলা হয়েছে, পরিমাণগত দিক দিয়ে তারসময়ে আর কেউ সাহিত্যের এ ভূমিকে উর্বরা ও সোনাফলা করতে পারেন নি। তাই অনেকে রবীন্দ্রনাথের পরেই শামসুর রাহমানকে বাংলাসাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে মানেন। যদিও কেউ কেউ এখানে দ্বিমত পোষণ করবেন তারপরও শামসুর রাহমান বাংলা সাহিত্যে তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এ কথা অস্বীকার করার কোনো জো নেই । আশি দশকে শামসুর রাহমানের পরিচিতি কবিতার সীমাবদ্ধ পরিমন্ডলকে অতিক্রম করে যায়। তিনি তখন আমাদের বৃহত্তর সাংস্কৃতিক জগতের এক অনন্য প্রতিভা। স্বৈরাচারী সরকারের নিপিড়ন, নির্যাতন এবং অজস্র বিচ্যুতির দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদের ভেতর দিয়ে শামসুর রাহমান আশি-নব্বইয়ের দশকে হয়ে ওঠেন আমাদের সাহিত্য সাংস্কৃতিক ভুবনের কান্ডারী।
বিশ শতকে রবীন্দ্র পরবর্তী যুগে নজরুল – জীবনানন্দের পর তার মতো পাঠক প্রিয়তা আর কারো ভাগ্যে জুটেনি। কবি হবার আগেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। তার প্রমাণ, প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে। সমসাময়িক তথাকথিত রাজনৈতিক ঘূর্ণিপাক থেকে নিজেকে দূরে রেখে এগিয়ে যেতে চান তিনি। এই দায়বদ্ধতার কিছুটা আভাস দিয়েছিলেন তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “রৌদ্র করোটি”তে,
“এখনো তোমার মতো উড়তে চেয়ে কাদায় লুটিয়ে পড়ি বারবার ভাবি অন্তত পাঠকের কোকিলের ভূমিকায় সফলতা এলে সার্থক জনম। “(রবীন্দ্রনাথের প্রতি)
এ যেন এক তরুণ কবির কবি হবার বেদনাবিধুর করুণ স্বীকারোক্তি। তারপর আর পেছনে তাকাননি। বাংলা কবিতায় তিনি শিলালিপি নির্মাণ করে গিয়েছেন। ঔপনিবেশিকতার অচল বৃত্তায়নও তিনি ভাঙার চেষ্টা করছেন।
১৯৫২ সালে সওগাতের ৩৫ বর্ষ ১ম শামসুররাহমানের মেফিস্টোফিলিসের প্রতি ফাউস্ট শিরোনামে একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল।
“একটু সময় দাও, মেফিস্টোফিলিস, /দাও একটু সময়! /বুকে পুষে নরকের গান আমি, এশিয়ার আকাশের নীলে /চেয়ে থাকি অনিমেঘে, সেখানে শকুনগুলো কালো হাওয়া নিয়ে/ এলো, পরে ছিঁড়ে যাবে কত প্রাণ শবগন্ধী আকাশের নীচে। ”
শামসুররাহমান রাজনৈতিকসচেতন কবি। তিনি কিভাবে ধীরেধীরে রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠেছেন তা তার কবিতায় দেদীপ্যমান। তিরিশের অনেক কবি রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন কিন্তু শামসুর রাহমানের মতো কবিতা স্বাক্ষর রাখতে পারেন নি। শামসুর রাহমানের অঢেল জনপ্রিয়তার আরেকটি বড় কারণ, তার রাজনৈতিক কবিতা। সাম্রাজ্যবাদ, পরাশক্তি, শাসন -শোষণ, দুঃশাসন, যুদ্ধ, দাঙ্গা, সাম্প্রাদায়িকতা, উপনিবেশিকবাদ ইত্যাদির ইতিহাস গড়েছেন তিনি কবিতায়। ফলে ভাষা আন্দোলন ,ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ কোনকিছুরই বাদ পড়েনি তার কলম থেকে। যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে বিশ্বে ইতিহাস গড়ে সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে তিনি লিখেছেন “বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা ”
“নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জ্বলজ্বলে পতাকা উঁচিয়ে আছে
আমার সত্তায় মমতা নামের পূত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই।”
“আমাদের রক্ত নাড়ী চেতনা উচ্চারণ ও অস্তিত্বের সাথে বর্ণমালার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। আমার আজন্ম সাথী তুমি/ আমাকে স্বপ্নের সেতু গড়ে দিয়েছিলে পেলে পেলে, /তাইতো ত্রিলোক আজ সুন্দর জাহাজ হয়ে ভেড়ে। ”
—
“তোমাকে উপড়ে নিলে বলো তার, কি থাকে আমার?/ ঊনিশো বায়ান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি /
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।”
বর্ণমালার জন্য বাঙালিদের আত্মদন যেমনি গৌরবের তেমনি অগৌরবের শোষক উর্দুগন্ধী বাংলা সংস্কৃতিসেবীদের অপতৎপরতা ও পারে চাটাদের প্রতিও কবির ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছে তার কবিতায়
“এখন তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামি
এখন তোমাকে নিয়ে খিস্তিখেঁউড়ের পৌষমাস।
তোমার মুখের দিক আজ যায়না তাকানো,
বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা। ”
কিংবা ভাষা শহীদ বরকত কে নিয়ে লেখা তার কবিতা-
“নকশা ঘেরা কাচবন্দী বরকতের পুরোনো ফটোগ্রাফ
সময়ের ছুটন্ত খুর থেকে ঝ’রে পড়া ধুলোয় বিবর্ণ,
অথচ আমার মনে হলো, সে ছবির ভেতর থেকে জ্যোতিকণাগুলো চক্রাকারে বেরুতে বেরুতে নিমেষে
ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। শপথ বর্ণমালার,
কী করে ভ’রে সন্ধ্যাবেলা আমার চতুর্দিকে
আলো সমুদ্র আমি বলতে পারব না। ”
(বরকতের অটোগ্রাফ)
গণ অভ্যুত্থানে শহীদ আসাদ কে নিয়ে কবির সাহসী উচ্চারণ-
“গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
………বর্ষীয়ান জননী সে -শার্ট উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতোদিন স্নেহের বিন্যাসে। ”
রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অসাধারণ কবিতাও রাহমান কবি নির্মাণ করেছেন-
স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
নজরুলের ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো/ মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান -মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
এভাবে স্বাধীনতা তুমি কবিতাটি মুক্তিযুদ্ধের গভীর
প্রেরণা হিসেবে হয়ে যায় মানুষের মুখেমুখে। কবিতাটিব হয়ে যায় সকলের। স্বপ্নমগ্ন কবিই জানেন স্বপ্ন দ্যাখা ছাড়া যুদ্ধ জেতা সম্ভব নেয়। জয়ের জন্য একটা স্বপ্ন দরকার। মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগের সাথে কবি লিখেছেন-
…বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে মৃত শিশু মেঘে ভাসমান ক্ষমাহীন ,
কার্পেটের তলা থেকে জানালার পুরু পর্দা থেকে, টেলিগ্রাম আর কিছু পুরনো চিঠির তলা থেকে
এবং মাছের পেট থেকে নারী আর শিশু আসে ভেসে ভেসে,
মেহেদী পাতার ভিড় থেকে, বেলুনের ঝাঁক থেকে
নারী আর শিশু ভেসে আসে। বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে
পতাকার নিচে কত আহত প্রেমিক নতজানু।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ নূরহোসেনও ইতিহাস হয়ে আছেন তার কবিতায়।
সবার অলক্ষ্যে নূর হোসেনের প্রশস্ত ললাটে
আঁকা হয়ে যায়,
যেন নির্ভীক যোদ্ধা, যাচ্ছে রনাঙ্গনে।
উদোম শরীরে নেমে আসে রাজপথে, বুকে-পিঠে
রৌদ্রের অক্ষরে লেখা অনন্য শ্লোগান,
বীরের মুদ্রায় হাঁটে মিছিলের পুরোভাগে এবং হঠাৎ
শহরের টহলদার ঝাঁক ঝাঁক বন্ধুকের সীসা
নূর হোসেনের বুক নয় বাংলাদেশের হৃদয়
ফুটো করে দেয় ; বাংলাদেশ
বনপোড়া হরীণীর মতো আর্তনাদ করে তার বুক থেকে অবিরল রক্ত ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে।(বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়)
“আর্থসামাজিক -রাজনৈতিক পরিবেশ এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন গণবিরোধী গণতন্ত্রহীন, সামরিক-স্বৈরতন্ত্রিক শাসনের বিরূপতা কবির কবিতায় যেভাবে সাবলীলভাবে প্রকাশিত হয়েছে অনিঃশেষ ফল্গুধারার এবং তা শিল্পসমৃদ্ধ কবিতার পূর্ণতা পেয়েছে।.. সামাজিক অবিচার বা অসাম্য এবং রাজনৈতিক অধিকার বা আন্দোলনের মতো উচ্চকিত মোটাদাগের বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করা খুব কঠিন,কিন্তু অনায়াসে তিনি সেই বাধা অতিক্রম করে বাংলা কবিতাতে নতুন নতুন শিল্পসুষমা যোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।”
শামসুর রাহমানের কবিতায় রাজনৈতিক পরিমন্ডল নিয়ে সাহিত্যিক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির মধ্য থেকেই শামসুর রাহমানের কবিতা বেড়ে উঠেছে। সংস্কৃতিকে তিনি দেখেছেন ইতিহাসের দিক থেকে এবং ইতিহাসের মধ্যে খুঁজেছেন অর্থের উদ্ভাসন এবং অর্থের পুনরুজ্জীবন। তার কবিতা তাই হয়ে উঠেছে জাতির প্রতি ( কখনো, কখনো) লোক সমষ্টির প্রতি বার্তা, ঘোষণা।…. সকল শ্রেণিচেতনা কিংবা সকল মতাদর্শ, সে শাসক শ্রেণির চেতনা হোক কিংবা নির্যাতিত শ্রেণির চেতনা হোক, সবি স্বরূপের দিক ইউটোপিয়ান। শামসুর রাহমানের চেতনার ক্ষেত্রেতা এই দিকটি ক্রিয়াশীল । এই চেতনা রাজনৈতিক, একই সঙ্গে নান্দনিক, এই চেতনার মধ্যে উন্মোচিত ক্রোধ, অসহায়ত্ব, শত্রু কর্তৃক নির্যাতন, শামসুররাহমানের কবিতার মালমশলা হিসেবে এসব বোধ বার বার এসেছে । এই বোধ শামসুর রাহমানের কবিতায় ধরা দিয়েছে কলোনিকালের অপমানিত হওয়ার বোধের মধ্যে কিংবা স্বাধীনতা -উত্তরকালে স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে জীবন যাপনের অপমানিত হওয়ার মধ্যে। মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে এ অপমানকে শামসুর রাহমান মেনে নিতে পারেন নি। এভাবে তার মধ্যে সকল শ্রেণি অতিক্রমী সর্বজনীনতার বোধ, শামসুর রাহমান হয়ে উঠেছেন সকল শ্রেণির কবি।”
সুতরাং শামসুর রাহমানে কবিতায় রাজনৈতিক সচেতনতা থাকলেও তিনি সকল শ্রেণির কবি। অনুপ্রেরণার কবি, সৃষ্টির সমুদ্র তিনি অজর, অমর, চির বহমান।
পাঠসূত্রঃ
১.শামসুর রাহমানের রচনাবলি -১, ১৪ এপ্রিল,ঐতিহ্য, ঢাকা ২০০৪, ।
২.শামসুর রাহমানের রচনাবলী -২, ঐতিহ্য, ঢাকা,২০০৬.
৩.শামসুর রাহমানের কবিকৃতিঃখন্ডিত সংবাদ, কালি ও কলম, ভলিওম, ৩য় বর্ষ, নবম সংখ্যা, অক্টোবর, ২০০৬, ঢাকা।
৪.শামসুর রাহমানঃকবিতার দিকে,জীবনের দিকে, কায়সুল হক, প্রাগুক্ত।
৫.হৃত মানদন্ডের জন্য শোক,হায়াদ মাহমুদ, প্রাগুক্ত। ৬.শামসুর রাহমানকে পাঠ করতে গিয়ে, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। প্রাগুক্ত,
৭.একজন মহৎ মানুষ ও কবি শামসুররাহমান-রবিউল হুসাইন, প্রাগুক্ত।
৮. চির বহমান, শামসুর রাহমান-সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, প্রাগুক্ত।
৯.বাংলা কবিতায় শামসুর রাহমানের শিলালিপি-শিহাব সরকার, প্রাগুক্ত।
১০.ঔপনিবেশিকতার বৃত্তায়ন ও কবির কথকতাঃপরিপ্রক্ষিত শামসুর রাহমান -সুরেশ রঞ্জন বসাক।
১১.শামসুর রাহমানের কবিতা প্রসঙ্গ পুরাণ -মাহবুব সাদিক, প্রাগুক্ত।
পান্থজন জাহাঙ্গীর : কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক।