পুবাকাশ বাছাই কবি ফররুখ আহমদ’র একগুচ্ছ কবিতা
সাম্পান মাঝির গান- এক
যেখানে লবণ-গন্ধী সমুদ্রের উদ্দাম হওয়ায়,
দুর্বার তরঙ্গ ওঠে–হিংস্র, তীক্ষ ফণা আজদাহার,
যেখানে আকাশ ছোঁয়া মৃত্যু ক্ষুব্ধ দিগন্ত কিনার,
উজ্জ্বল পৃথিবী দূরে মিশে যায় অস্পষ্ট ছায়ায়
সেখানে সাম্পান মাঝি শংকাহীন সংগ্রামী সত্তায়
তরঙ্গে তুফানে তীব্র দোল খেয়ে হয়ে যায় পার,
নির্ভীক সেনানী সেই দরিয়ার নিঃশঙ্ক সওয়ার;
তারপর ফিরে আসে কর্ণফুলী নদী মােহনায় ।
সাম্পান মাঝির কণ্ঠে দীপ্ত হয় জীবনের গান
মাটির, মাঠের বুকে সে মুহূর্তে উজ্জ্বল, মধুর,
তরঙ্গিত সমুদ্রের আশ্চর্য সজীব কলতান
বন্দরের পথে এসে খুঁজে পায় মৃত্তিকার সুর,
কখনাে স্বপ্নালু আর কখনাে বা বেদনা বিধূর
পরিচিত পৃথিবীর বুকে স্থির, উজ্জ্বল, অম্লানা৷
সন্ধ্যাতারা
আমার গােধূলি স্বপ্নে আছাে তুমি অযুত বৎসর
নিঃসঙ্গ সন্ধ্যার তারা জেগে আছাে নিভৃতে একাকী!
যখন রাত্রির তীরে ফিরে যায় নীড়ে শ্রান্ত পাখি
তখন তােমাকে দেখে ঘন বন, সমুদ্র প্রান্তর।
আশ্চর্য বিভায় দীপ্ত কে জেনেছে তােমার খবর
অচেনা রহস্যময়ী; তবু আমি স্বপ্নছবি আঁকি
মেঘের নেকাব এসে ঢেকে ফেলে সমুজ্জ্বল আঁখি
(রহস্যের অন্তরালে জাগাে একা নিঃসঙ্গ বাসর)।
রাঙা দুহিন তুমি ছুঁয়ে আছাে আকাশ কিনার
উজ্জ্বল পরীর মত (বের হয় না প্রয়ােজন),
অথবা আতশী রূপে পেয়েছে সে সৌন্দর্য সম্ভার
অমান, অক্ষয় হয়ে ঘিরেছে যা মানুষের মন;
হাজার শতাব্দী যাৰে পথ চেয়ে এ ভাবে তােমার
একান্তে প্রতীক্ষমানা (বক্ষে নিয়ে বহ্নি অসহন)৷
কবির প্রতি
বজ্র বিদ্যুতের বাসা যে আকাশ, তুমি সে আকাশে
সহজে নিয়েছ তুলি পাদপিষ্ট ধূলিকণিকারে,
তারার ঔজ্জ্বল্যে দীপ্ত মহিমায় সাজায়েছ তারে
যে সত্তা অপরাজেয় তারে মূর্ত করেছ বিশ্বাসে ।
সংকট সংঘাত দ্বন্দ্বে শর্বরীর ঘনতম ত্রাসে
তােমার উদ্দীপ্ত বাণী ফিরিয়া এসেছে বারেবারে
যেমন প্রভাতসূর্য ফিরে আসে ঘন অন্ধকারে
যেমন পবিত্র আত্মা জিব্রাইল একা নেমে আসে।
অন্তহীন আকাশের ঘন নীল শামিয়ানা ছিড়ে
পাখার আঘাতে তার দুই পাশে তারকা ছিটায়ে
নেমে আসে, নেমে আসে হৃদয়ের ক্লান্ত হিমচ্ছায়ে;
অপূর্ব আনন্দ বার্তা নিয়ে তার সঙ্গীতের মীড়ে
মৃত্যু সমাকীর্ণ পথে জীবনের আনন্দ বিছায়ে
(অগণ্য বিহঙ্গশিশু যে সঙ্গীতে জেগে ওঠে নীড়ে)।
রুমী
সে মহা সমুদ্র এক অতলান্ত…বিশ্রাম আশায়
পথিক তরঙ্গ যত বারে বারে আসে যার বুকে
দূর দূরান্তর হতে মুক্ত জীবনের প্রত্যাশায়;
আত্মার পাথেয় নিয়ে ছুটে যায় আবার সম্মুখে ।
অথবা বােরাক যেন এই মহা সমুদ্রের স্রোতে
দাঁড়ায় মুহূর্ত কাল তারপর বিদ্যুতের মত
পাখা মেলে মুক্ত নীলে পরিপূর্ণ সত্যের আলােতে;
অতলান্ত সিন্ধু স্রোত বয়ে যায় শুধু অবিরত।
সত্যের নিগূঢ় বার্তা প্রাণকেন্দ্রে যার সংগােপন
(দুস্তর তরঙ্গ উর্ধ্বে, মর্মে তার মােতির ভাণ্ডার),
মানেনি, মানে না মানা সত্যাশ্রয়ী,-মিথ্যার বন্ধন;
খুলে দেয় প্রয়াসীকে অফুরন্ত রহস্যের দ্বার।
রেখে যায় প্রাণ তার ফোরকান পাহলবী জবানে
(মস্বী অমর কাব্য লেখা এই দুনিয়া জাহানে)।
জামী
অনির্বাণ সে আলােক, জ্বলে যে রাত্রির শামাদানে
অতন্দ্র সহস্র দীপ জ্বেলে যায় প্রাণাগ্নিতে তার,
নিজেকে নিঃশেষ করে যে ঘুচায় রাত্রির আঁধার
সত্যান্বেষী প্রাণ যার ঘূর্ণিঝড়ে, রাত্রির তুফানে
তুমি সে প্রেমিক সুফী, নিষ্কম্প প্রাণের প্রতিদানে
জাগায়েছাে এ মাটিতে রশ্মিকণা নবী মুস্তফার
(যে আলােকে পরিপূর্ণ ব্যক্তি আর সমাজ সত্তার
পূর্ণাঙ্গ জামাত চলে সুসম্পূর্ণ সত্যের সন্ধানে)।
তােমার গানের সুরে মুগ্ধ আজ অসংখ্য হৃদয়
জেনে গেছে ‘মুহম্মদ মুখবন্ধ এ বিশ্বগ্রন্থের
দেখে গেছে মুগ্ধ চোখে সৌন্দর্যের সমুজ্জ্বল পথ।
প্রেমিক আশিক তুমি অফুরন্ত তােমার সঞ্চয়
ভাবের সমুদ্র থেকে দিল এনে বাণী এ সত্যের,
দীপ্ত তুমি কাব্যালােকে, তুমি শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত।
ময়নামতীর মাঠে- তিন
অঘ্রাণে হিমের রাতে অনেকেই দেখেছে আবার
কাকজোছনার সাদা কাফনে শরীর ঢেকে রেখে
শ্রান্ত সেই মুসাফির এসেছে সুদূর দেশ থেকে;
আমন ধানের মাঠে এনেছে লুকিয়ে গুলনার ।
রাতের দু’চোখে ঝরে শবনম অশ্রুকণা তার,
পাশ দিয়ে বয়ে যায় মধুমতি নদী এঁকেবেঁকে
ব’য়ে যায় বহু দূরে, যায় না স্মৃতির চিহ্ন রেখে;
যে পথ এসেছে ফেলে তাকায় না সেই পথে আর ।
তবুও সে তাকিয়ে থাকে প্রতীক্ষায় করে যে নির্ভর
আমন ধানের শীষে জাগে যার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা
যে চায় অশ্রুর বুকে জীবনের অর্থময় ভাষা,
মৃত্যুর তুহিন স্পর্শে খোঁজে মুক্ত প্রাণের খবর,
দু’চোখে জড়ায় তার অঘ্রাণের হিমেল কুয়াশা,
ময়নামতীর মাঠে মেলে না তাে প্রশ্নের উত্তর।
ঝড়
হাজার হাজার দেও’ স্বাদ পেয়ে প্রমত্ত মুক্তির
বঙ্গোপসাগর ছেড়ে চলেছে সুদূর পরীস্তানে;
আশা-নৈরাশ্যের দ্বন্দ্ব বিচ্ছুরিত বজে ও তুফানে
মুহূর্তে ঘােষণা করে মুক্তি বার্তা সহস্র বন্দীর ।
উড়ে যায় ঝরা পাতা, বালু-বক্ষ মেঘনার তীর
বুক পেতে নেয় সেই মৃত্যু-সুকঠিন নির্মমতা,
নিমেষে নিঃশেষ হয় শীত-বসন্তের নির্জনতা
(শিথিল হয়েছে আজ সুলেমান নবীর জিঞ্জির)।
মুক্তি পেল ওরা আজ, মুক্তি পেল সমুদ্র নিতল
নিষ্প্রাণ সুষুপ্তি ছেড়ে অগ্নি আর বাষ্পের উচ্ছাসে,
বৈশাখের মেঘে মেঘে, প্রান্তরের উন্মুক্ত আকাশে
দুর্জয় : দুর্বার : দৃঢ় (ঝরে গেছে সকল শৃংখল)।
সম্মুখে চলার পথে ওরা পিষে যাবে সমতল,
অরণ্য, শহর, গ্রাম মঞ্জিলের একাগ্র আশ্বাসে।
মূহুর্তের কবিতা
সময়—শাশ্বত, স্থির। শুধু এই খঞ্জন চপল
গতিমান মুহূর্তেরা খরস্রোতে উদ্দাম, অধীর
মৌসুমী পাখির মত দেখে এসে সমুদ্রের তীর,
সফেদ, জরদ, নীল বর্ণালিতে ভরে পৃথ্বিতল ।
সন্ধ্যা গােধূলির রঙে জান্নাতের এই পাখি দল
জীবনের তপ্ত শ্বাসে, হৃদয়ের সান্নিধ্যে নিবিড়,
অচেনা আকাশ ছেড়ে পৃথিবীতে করে আসে ভিড়;
গেয়ে যায় মুক্তকণ্ঠে মৃত্যুহীন সঙ্গীত উচ্ছল
মুহূর্তের এ কবিতা, মুহূর্তের এই কলতান
হয়তাে পাবে না কণ্ঠে পরিপূর্ণ সে সুর সম্ভার,
হয়তাে পাবে না খুঁজে সাফল্যের, পথের সন্ধান,
সামান্য সঞ্চয় নিয়ে যে চেয়েছে সমুদ্রের পার;
তবু মনে রেখাে তুমি নগণ্য এ ক্ষণিকের গান
মিনারের দম্ভ ছেড়ে মূল্য চায় ধূলি কণিকার।
মোতিঝিল
অর্ধস্ফুট কুয়াশায় মােতিঝিল—পথের মঞ্জিল।
হল সারি বাধা খেলাঘর রয়েছে সাজানাে,
উজ্জ্বল ছিল যে দিনে এখন সে স্বপ্ন-ছায়া-মান
রাতার কিনারে এসে অকস্মাৎ আচ্ছন্ন; নিমীল।
এখানে চলন্ত স্রোত থেমে গেছে, দিনের মিছিল
এনে ভুলেছে গতি নীড় রচনার প্রত্যাশায়,
ঘুমের খবর নিয়ে রাত্রি নামে মন্থর হাওয়ায়
বাধাবন্ধহীন; তবু জিজ্ঞাসায় সংশয়-সর্পিল।
শীতের পাখির মতাে এলাে যারা অচেনা প্রান্তরে
হয়তাে ভুলেছে তারা ফেলে আসা অরণ্যের ডাক,
সন্ধ্যার পাখার নীচে মুখ গুজে রয়েছে নির্বাক!
সংক্ষিপ্ত সময়! তাই বালুচরে অথবা শহরে
চৈত্রতপ্ত দিনে যারা বেঁধেছিল একদা মৌচাক
উড়ে যায় তারা আজ বহু দূর পথে বনান্তরে।
সােনারগাঁও : একটি প্রাচীন স্মৃতি
এখনাে সােনারগাঁও জেগে আছে সেই স্মৃতি নিয়ে
ইরানের মিছরিদানা নেমেছিল এ মাঠে যে দিন,
এসেছিল বুলবুল সে খুশীর পয়গাম জানিয়ে;
চম্পার মদির স্বপ্নে জেগেছিল আনন্দ রঙিন।
নার্গিস, গােলাব আর জাফরানের দূর দেশ থেকে
হাফিজের সওগাত এসেছিল ফাক্ষ্মন বীণায়,
দোয়েল, শ্যামার সাথে বুলবুল উঠেছিল ডেকে
চামেলি, যূথীর বনে, কেতকীর নিবিড় ছায়ায় ।
সে দিনের সে আনন্দ,—পরিপূর্ণ চাদ পূর্ণিমার
গুমােট দিনের শেষে প্রতীক্ষিত অতিথির মত
শ্যামল নদীর দেশে এনেছিল সুরের জোয়ার
মেলেছিল বৃন্তে দল ছিল যারা ভার অবনত!
হারানাে দিনের স্মৃতি : হাসি-অশ্র-আনন্দ-সজল।
পদ্মা মেঘনার দেশে জাগে আভাও ইরানী গজল।
ধানের কবিতা
কুমারী কনকতারা, সূর্যমুখী, হাসি কলমি আর
আটলাই, পাশপাই ধান—এ পাক বাংলার মাঠে মাঠে!
আউশ ধানের স্বপ্নে কিষাণের তপ্ত দিন কাটে;
আমনের বন্যা আনে ফসলের সম্পূর্ণ জোয়ার ।
শােকর-গােজারী করে তারপর দরবারে খােদার
গােলায় তােলে সে ধান-রূপ সা’ল, তিলক কাচারী,
বালাম, ক্ষীরাইজালি, দুধসর—মাঠের ঝিয়ারী
কৃষাণ-পল্লীতে আনে পরিপূর্ণ সুরের সম্ভার।
ধান, ধান, ধান শুধু, এ ধানের স্বপ্নে দিন গােনে
মাঠের মানুষ যত! ফাল্গনে জমিন করে চাষ,
বৈশাখে ছড়ায়ে বীজ প্রতীক্ষায় থাকে দীর্ঘমাস,
কখনাে শংকিত চিত্ত উত্তরের ঝড়ে ও প্লাবনে,
কখনাে শিশির-ঝরা ভােরে পেয়ে সুরভি আশ্বাস
অজস্র ধানের শীষে; এই পাক বাংলার অঙ্গনে।
সিলেট স্টেশনে একটি শীতের প্রভাত
কার আজদাহার বেষ্টনীতে প্রাণী ও প্রাণের
নেই। এখানে জালালাবাদে দেখি এসে।
হি-সিক্ত কম্বলের মত রাত্রি ঢেকেছে নিঃশেষে
সমস্ত আলােকরশ্মি পৃথিবীর সকল পথের ।
ইরানী ছুরির মত তীক্ষ্ণধার হাওয়া উত্তরের
বিদ্ধ হয় অনাবৃত তরু শীর্ষে, নিমেষে নিমেষে
তারি স্পর্শ পাই শূন্য প্লাটফর্মে; মাঘ রাত্রি শেষে
সুপ্তিমগ্ন জনপ্রাণী এখন সিলেট শহরের ।
বাতাসের দীর্ঘশ্বাস ঝিল্লিও নীরব, পাখিদের
বাসায় নিঃসাড় ঘুম (মৃত্যু নেমে আসে ছদ্মবেশে
পৌত্তলিক অন্ধকারে), সাড়া নাই মুক্ত জীবনের;
মৌন প্রতীক্ষায় ধরা মর্মরিয়া ওঠে তবু কেশে।
তারপর কি আশ্চর্য দেখি চেয়ে প্রতীক্ষার শেষে।
প্রশান্ত প্রভাত নামে স্নিগ্ধাজ্জ্বল হাসি দরবেশের।
তুমি জাগলে না
রূপার কাঠির স্পর্শে ঘুমালাে যে, সােনার কাঠির
স্পর্শ উঠলাে সে জেগে!… শুধু তুমি, তুমি জাগলে না!
ডাক দিলে চম্পা ভােরে, ডেকে গেল রাতে হাস্ না হেনা,
শুধু জাগলে না তুমি : কাপলাে না ঘুমের তিমির।
ঘাসের সবুজ শীষে জমা হ’ল উজ্জ্বল শিশির,
তুমি দেখলে না চেয়ে! হৃদয়ের, জীবনের দেনা
মিটেছে কি সব আজ? পরিচিত পৃথিবী অচেনা
মনে হয়? এ কী মাদকতা তীব্র এ কাল রাত্রির!
যে ঘুম নেশার মত সমাচ্ছন্ন করেছে তােমার
জাগ্রত চেতনা, বুদ্ধি…বিষ তার রয়েছে ছড়ানাে
সমস্ত সত্তায়, আর ক্লান্তি তার দু’চোখে জড়ানাে।
নিয়েছে সহজে ছেড়ে উচ্ছ্বসিত প্রাণের জোয়ার ।
যদি কথা কও তুমি ঘুমঘােরে (জানাে বা না জানাে)
সে নয় আত্মার উক্তি; সে কেবল চিত্তের বিকারা।
একটি আধুনিক শহর
ওখানে শহর যেন লাস্যময়ী তরণী গণিকা
ভাগ্যবান অতিথিকে প্রতি ক্ষণে জানায় আহ্বান
অর্ধাবৃত তনু হতে ওঠে যার যৌবনের গান;
দিনে সে উদ্ধত আর সন্ধ্যায় উদগ্র সাহসিকা!
অজস্র ভােগের রাজ্যে জ্বলে তার বাসনার শিখা
(জাগায়ে ধমনী প্রান্তে উল্লাসের প্রমত্ত তুফান)!
নির্লজ্জ, লালসাতুর জাগে তার অপাঙ্গে অম্লান।
সুতীব্র সম্ভোগ-লিপ্সা; প্রতি অঙ্গে যৌবন লিপিকা।
সর্বগ্রাসী সঞ্চয়ের লােভ আর বিলাস বাসনা
করেছে উন্মত্ত তাকে, নাগিনীর মতাে সে নিষ্ঠুর,
প্রেমের পাথেয় নাই, নাই প্রাণে বেদনা অশ্রুর,
মধ্য রাত্রে অতর্কিতে হয় না সে কখনাে উন্মনা,
জাগে না কখনাে মনে বিরহ বা বৈরাগ্যের সুর;
শাদ্দাদের কল্পলােকে সেই তন্বী নগ্ন, বিবসনা৷
অতি আধুনিক কবিকে
সুরের প্রাচীন সংজ্ঞা ভুলে গেছ হে ‘আড়ষ্ট কাক!’
আঙ্গিকের ফাকি খুঁজে নিতে চাও কৃত্রিম বাহবা
সমালােচনার ছলে পেটায়ে স্বকীয় জয়ঢাক)
কিন্তু সব ফেঁসে যায় যে মুহূর্তে কোন খাঁটি পােবা
নতুন বৎসর প্রান্তে সুকঠিন পাটে আছড়িয়ে
তােমাকে পরখ করে সে মুহূর্তে খসে পড়ে ল্যাজ
সমালােচনার শেষে চোখ মুখ হাত ঠুকরিয়ে
কোন রূপে রক্ষা করাে ধার করা ল্যাজ কিংবা ব্যাজ।
স্বগােত্রের পরিচয় টক, মিঠে, নােনতা কিছুটা
সাড়ে সাঁইত্রিশ ভাজা সাত ঘাটে গলাধাক্কা খেয়ে
জীবনের অভিজ্ঞতা হয় কিছু সাচ্চা আর ঝুটা
শ্মশানে কাটাও রাত কাব্যকুঞ্জে ঠাই নাহি পেয়ে।
এ সব হত না যদি মানবতা বুকের তলায়
কিছুটা আসন পেত; কবিতা ফুটিত সাহারায়।