তিনটি কবিতা : তমিজ উদ্দীন লোদী
আমাদের বিস্মৃতির ভেতর
আমাদের বিস্মৃতির ভেতর কে জানি চেঁচিয়ে বলছে, ঠিক আছে, ঠিক আছে
অথচ আমাদের উঠোনে কয়লা স্তূপাকার
বাতাসে উড়ছে মরামাস, ইঁদুর খুঁড়ছে মাটি ।
পুরনো পোড়োবাড়ি,দেয়ালে পেরেক ঠুকার দাগ
পলেস্তরা খসে পড়ছে অবিরাম
ছাদ ফুটো, জল ঝরছে, জল ঝরার তান ।
রাজপথ নদী একাকার ।
আমাদের পোড়োবাড়ি, হুতুম পেঁচার ডাক
চারপাশে ঘুরছে খয়েরি লেজ, শেয়াল ।
ঝুরঝুরে বালির মতো খসে পড়ছে আত্মবিশ্বাস
তবু চেঁচানো থামছে না, শোনা যাচ্ছে
ঠিক আছে, সব ঠিক আছে ।
চারপাশে স্যাঁতাপড়া শ্যাওলার স্তূপ
উই আর ঘুণপোকা সন্ত্রাস
টলে যাওয়া বিশ্বাসসমূহ
ঝুলন্ত, নিথর অপমৃত্যু, সুইসাইড নোট
হাপিশ হয়ে যাওয়া স্বজন, আর্তনাদে ভারী আকাশ ।
ধসে যাওয়া স্থাপনার উপর দাঁড়িয়ে কারা তবু বলে যাচ্ছে
ঠিক আছে, সব ঠিক আছে ।
এবার অবধারিত
কবিদের সময় পার হয়ে এখন কোবিদের কাল
শুরু হয়েছে পোয়েটিক জাস্টিস আর
প্রকৃতির শাখা বেয়ে ঝরে পড়ছে লালপাতা ।
এক্রিলিকে আঁকা সব ছবি নেমে গিয়ে
সেখানে সাঁতার কাটছে পুনরায় সিম্বলিক সব বিমূর্ত
খুব অলৌকিকতার সাথে মুছে গেছে হত্যাচিত্র ।
দেয়ালচিত্রগুলো ঢেকে গেছে প্লাষ্টারে
সেখানে শোভিত বিজ্ঞাপনের অশ্লীলতা
খুব আয়োজন করে মিলিত হয়েছে বিষণ্ণ মানুষেরা
সরব সৌরভে সুন্দর হয়ে উঠেছে একাধিক মৌন ।
এবার অবধারিত ভাঙবে অর্গলগুলো ।
বিধ্বস্ত ম্যাটাডোর
ষাঁড়ের শিঙে বাঁধা লাল কাপড়
দৌড়াচ্ছে অন্ধ, ক্রুদ্ধ ষাঁড়-
যেন গ্ল্যাডিয়েটর ছুটছে প্রতিপক্ষে হানবে বলে ।
কখনো প্রতিপক্ষহীন দৌড়ায় সে
প্রাকৃত অভ্যাসবশত
স্তব্ধবাক, বিষাদগ্রস্ত শ্রমিকের ওভারঅল পরা
মানুষ দৌড়ায় সাথে বিনোদনে, উল্লাসে ।
বিধ্বস্ত ম্যাটাডোর
ষাঁড়ের চোখে আগুন
প্রতিপক্ষ না থাকলেও সে ঘষে স্তব্ধ দেয়ালে শিঙ ।
হন্যে ষাঁড় তবু খোঁজে শত্রু, খোঁজে প্রতিপক্ষ, ক্ষোভে, রোষে
শুধু পাশ থেকে মানুষ হারিয়ে যায়, ষাঁড় থাকে, ফোঁসে ।
তমিজ উদ্দীন লোদী: আশিদশকের অনন্য কবি ও কথাকার। আমেরিকা প্রবাসী।