ইরানী প্রেমের কবিতা ।। আলমগীর মোহাম্মদ অনূদিত
নসিবী গিলানী
১.
আজ ছাড়াছাড়ি হয়েছে প্রেমিকার সাথে, আমি
নিঃসঙ্গ, বন্ধু- বান্ধবহীন, আমি
সেই ব্যক্তি যে রাতের অন্ধকারে ঘুমাতো না, আমি
সংক্ষেপে, জগতখ্যাত দুঃখী, আমি।
২.
যদিও আমি অশীতিপর, তোমার বাহুবন্ধনে শক্ত করে রেখো রাতে আমাকে
যাতে ভোর ফজরে তোমার পাশে যুবক হয়ে পাই নিজেকে ।
নাহিদ ইউসুফী
৩.
সকলের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে
সে যেভাবেই হোক
হয় আগন্তুক নয় বন্ধু দ্বারা
আগন্তুকে ভাঙলে হৃদয় আক্ষেপ থাকে না মনে,
তাই বলে কি হৃদয় ভাঙবে কোন এক আপনে?
রূদাকি
৪.
যদিও হৃদয় আমার বিচ্ছেদ বেদনায় ভর
বেদনামিশ্রিত সুখ আমাকে আরো অসুখী করে তোলে।
প্রতিরাতে তোমার কথা ভাবি ও বলি, হে খোদাঃ
এখানে বিচ্ছেদ এবং ওখানে মিলন।
মহাস্তি গঞ্জাবী
৫.
প্রতি রাতে, তোমার দুঃখে, নতুন কষ্ট আমি দেখি
আমার দৃষ্টিতে, ঘুমের বদলে, অশ্রুজল আমি দেখি
যখন, তোমার নার্সিসাসের মতো, যখন আমি ঘুমাতে যাই
আমার একটি স্বপ্ন আছে, তোমার চুলের চেয়েও অবিন্যস্ত।
খাজু কিরমানি
৬.
কসম করেছিলাম আর কখনো প্রেমে পড়বো না।
কিন্তু আমি কি করব? আমি আবারো মায়ায় জড়িয়ে গেছি
ফজর বেলায় আমার দীর্ঘশ্বাস ভোরের হাওয়া থামিয়ে দিবে
যখন এক রাতে তোমার গলিতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ব।
নাদের নাদেরপৌর (১৯২৯-২০০০)
একজন ইরানি কবি। তাঁর কবিতার বই প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। ষাটের দশকে তিনি ইরানের রেডিও- টেলিভিশনে সাহিত্যবিভাগ পরিচালনা করতেন। ইরানের ‘নিউ পোয়েট্টি’ আন্দোলনের অন্যতম নায়ক এ কবি ১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
১.
ভোজ
শরৎ জোস্নায় আলোকিত ঘর
টেবিলের কোণে একটা লালাবাতি,
আকাশ ও ধরণী অতল ঘুমে,
প্রহরী ঘড়ির টিকটিক হৃদস্পন্দন।
দুই কাপ তেতো মদ,
দুই বাটি মিষ্টি নূগাট,
মিহি চায়নিজ সুতোর একটি কাঁথা,
ন্যাংটো বাহুজোড়ের উপরের অংশ
ন্যাংটো পা’জোড়ের নিম্নাংশ।
২.
‘প্রাকৃতিক মানচিত্র ‘
ধরণীর নগ্ন শরীর হতে তার জন্মঃ
শাদা নরম মাটি
দুটো জ্বলন্ত পাহাড়
সূর্যের আলিঙ্গনে আবদ্ধ
এবং নদীর বাহুজোড়া
প্রবহমান
অপ্রস্তুত এক ফাটলে
যার গভীরে
জন্মেছে একটা জলজ ঘাসের দলা
বসন্তের জলে
হাসির মতো লাল।
আমি কেঁদেছি সন্ধ্যেয়
তার গভীরে।
আলমগীর মোহাম্মদ : শিক্ষক, প্রিমিয়ার ইউনিভারসিটি, চট্টগ্রাম।