রওশন হাসান’র একগুচ্ছ কবিতা
পুবাকাশ
🔴 বাগ্বিধি
ও চোখে চোখ রাখলেই হৃদয় আরশী হয়ে
প্রবণ আকাঙ্ক্ষাগুলো আবদ্ধ হয়
দিঘীর জলে ভাসা কালো পদ্মফুলে
কারণ–অকারণের এ নজরবন্দী
কেমন করে নগণ্য করি এ ইঙ্গিত বাগ্বিধি
এ নির্ভর চাহনির উপমা মেলে না
অনন্ত যোগাযোগ ভেতরবাহির শরীরী, অশরীরীর l
ও হাতে হাত রাখলেই হৃদয়টা ছুঁয়ে যাও
এ স্পর্শ আমার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসের নাম বদলে দিতে পারে l
সর্বকালের দুঃখগুলো কেমন সামান্য হয়ে সঙ্গী হয়ে বসে আমার পাশে l
ও বাহুতে কন্ধ মেলালেই উদ্যান জেগে ওঠে
গুঞ্জরিত পাখির ঠোঁটে বদলে যায় আকাশের রঙ
অপ্রাপ্তিগুলো মিশে যায় উড়ন্ত বাতাসে
নক্ষত্রনিবিষ্ট জানালায় সেরোনাদ আমি বেজে উঠি
পলকে পলকে জুড়ে থাকা দৃষ্টিরাগে উর্বশী অধীর l
🔴 কোন কোন নিঃসঙ্গ সঙ্গীত
জানালার ত্রিভুজ কোণে
স্থিরচিত্রে থালার মত চাঁদ
আমরা ব্যক্তিগত দূরত্বে বেঁধেছি সম্পর্ক ফাঁদ
দু‘টি হৃদয়ে লুকানো নিতান্ত নিজস্ব প্রপাত l
বৃক্ষবিন্যাসে আঁধার নিবিড় হলো উনুনের আঁচ
একরাশ ধূলোমাখা পাতাদের শন্ শন্
হে আমার হৃৎকম্পন পৌঁছে দাও তারে শত অনুনাদ
বিরহী যত বিরামকাল হন্য হয়ে খোঁজে
মৃত্যুগামী কোন মৌসুম অচিরে হারায়
কী তীব্র জোৎস্না আকাশের বাহুতে জলের কাঁচ l
🔴 সান্নিধ্য
এই শীতার্ত হাওয়ায় নিস্বঃতা ছাড়া
কিছুই জীবন্ত নয়
বৃক্ষ, লতাগুল্ম, পাখি জড়সড়, অগোছালো বাগান
বুনো চাঁদ হন্যে হয়ে খোঁজে তারার উষ্ণতা
এ উদ্বৃত্ত দিনে আঁধার রাঙে সংঘাতে সংঘাতে l
এ বিচলিত নিতান্ত নিজস্বতার নামহীন বিস্তীর্ণতায়
খুব শব্দহীন শূন্যতার ভাঁজ খুলে খুলে ভেসে চলেছি শীতল খড়কুটোর মত
ব্যক্তিগত দূরত্বে আমরা চেয়ে আছি চোখে চোখে
চেনা পারফিউমের সুবাস, বাহুর বিন্যাস
বিঁধছে যেন ছুরির মত
ভেতরটা ফাঁকা গহবর, বিধ্বস্ত স্মৃতির স্পন্দনে জ্বলে লাল–নীল বাতি
অথচ আমি একা উদ্ধত ফিরে ফিরে চাই
মগ্ন, সংগোপন ভাষার ক্ষতগুলোর মত
বিশীর্ণ আলোরেখায় ঘোরলাগা কন্ঠস্বর শুনে শুনে
ছায়াছন্ন পংক্তিতে টুকরো টুকরো ঈর্ষা কুড়াতে চাই l
🔴 স্পন্দন
আকাশের আছে প্রেম, প্রিয়তম মেঘ
পালকে পালকে রোদের অভিষেক
ফুলের আছে রূপ, গ্রীবা জড়ানো পাতাদের সংলাপে
অব্যক্ত কথারা জমে থাকে, আমার চোখে যেমন তোমার শব্দেরা কাঁপে l
বৃক্ষের আছে ছায়া, সংগোপন মায়ার সংশ্লেষ
বিকেল নামায় সন্ধ্যা, রেখে যায় দিনের রেশ
এমন বর্ণীল দিনে ঘাসের পল্লবে অনুরাগ বিছিয়ে দাও
জলের দর্পণে নীল ভেসে চলে, মুগ্ধপ্রবণ আমাকে অমর করে দাও।
রওশন হাসান: নিউইয়র্ক অভিবাসী কবি ও প্রাবন্ধিক