একগুচ্ছ কবিতা
শোয়াইব শাহরিয়ার
পুবাকাশ
[দৃষ্টি আকর্ষণ : যান্ত্রিক ত্রুটিতে শোয়াইব শাহরিয়ার’র কবিতাগুচ্ছ অন্যজনের নামে পোস্ট হওয়ায় পুবাকাশ আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। -সম্পাদক ]
অশ্বারোহী
অশ্বারোহী, অশ্ব নেই;
তবে তুমি কার পিটে?
হাওয়ায় চাবুক মেরে
অশ্বারোহী বললো—
হাওয়ায়…হাওয়ায়!
আমাদের অশ্বারোহী
প্রাগৈতিহাসিক যুগের;
অন্ধত্বের অভিশাপে—
জন্মাচ্ছে বারবার!
রক্তনদী
এখন বৃষ্টি হয়;
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে
মুঠোফোনে কথা বলা স্বপ্নের মতো
এখন সত্যিই বৃষ্টি হয় চলে যাওয়া পথে!
অথচ বৃষ্টি হতে পারতো রোমান্টিক
অথচ একটি ঝড়…বিচ্ছেদ…নরক
তুমি…আমি…আর আমাদের বয়স!
ভূমিধ্বসের মতো কোথা থেকে কোথা গড়ালো…
এখন সত্যিই বৃষ্টি হয়
টুপটাপ ঝরে রক্তনদী
আমাদের দু’চোখ বেয়ে—!
একটি রাজনৈতিক কবিতা
জলের ভেতর ডুইবা আছি;
ও জেলে, ও আমার হন্তারক
আমারে ডাঙায় তোলো
আমারে চুলায় তোলো
আমারে তুমি গিলে ফেলো!
জলের ভেতর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে
অথচ জলই আমার জীবন!
ও জেলে, ও আমার হন্তারক
এ-যাত্রায় আমারে উদ্ধার করো।
পুলসিরাত
টিনের ফুঁটো বেয়ে
বৃষ্টি পড়লে ঘর ভিজে যায়
আজ কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে না
তবু ভিজছে বালিশ।
গায়ে হলুদের দিন
মেহেদী দিচ্ছো হাতে
কী চমৎকার পুলসিরাত
লাল হচ্ছে আমার!
পৃথিবী
আমি তোমার জীবনে প্রেমের পরিবর্তে শষ্যের চাষাবাদ করবো। একদিন তোমার সন্তান বলবে—আম্মু, আব্বু কি কৃষক ছিল? আর তুমি বলবে—না, তোর আব্বু একটা খুনী ছিল; যে প্রতিনিয়ত নিজেকে খুন করতে করতে তোর জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী দিয়েছিল এবং আমার জন্য মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব!
প্রত্যুত্তর (বনমল্লিকাকে)
তুমি হাত বাড়ালেই হাত চলে যায়
বুকের ভেতর; জোরে বৃষ্টি নামে হায়;
জল থৈথৈ জল থৈথৈ জলের অসুখ
তোমার পা-ছোঁয়া পথ অসুখে মরুক!
ঠোঁট বাড়ালেই পথ হয়ে যায় নদী
ইচ্ছা করে ডুব দিয়ে যাই নিরবধি!
তোমার মুখের লাল—যেন সর্বনাশ
ঠোঁট বাড়াতেই আহা—রূপান্তরে ঘাস!
ঘাসের উপর শুলে—গল্পগুলো জল
ঠোঁটের উপর ঠোঁট—জীবন উজ্জ্বল!
তোমার পরশ পেয়ে মৃত্যুমুখী হাসে;
বুক বাড়াতেই আহা—স্বর্গ পরবাসে!
অমীমাংসিত জীবন
এক.
মরু ঝড় সাইমুম এসে গেল বলে, চারপাশে অন্ধকার নেমে এলো চলে! আমি তো প্রেমিক, জানো; এত ভয় কেন? গ্রাস করে নিতে পারি তাকে দুর্দিনেও!
দুই.
নিজেকে গোপন করতে গিয়ে আরো বেশি উন্মুক্ত হয়ে পড়ি। আরেকটু গভীর হও; তোমাতেই গোপন করে ফেলি অমীমাংসিত এই জীবন!
তিন.
ঠাণ্ডা হয়ে আসে শরীর; অদ্ভুত আঁধার নামে। দীর্ঘশ্বাসগুলো আরো দীর্ঘ হয়। রক্তজবা হয়ে ক্রমশ তোমার দিকে যায়। ভেবে অবাক হই―পূজার আসরে সেই ফুল স্থান পায় না আমার বলে!
ক্ষুধা
আজ আমার প্রথম জন্মের
অবশিষ্ট আয়ু ফিরিয়ে দিচ্ছি;
আজ আমার কবর থেকে—
উঠে আসছে বেদনার ফুল!
তুমি তবুও আকাশ থেকে
একবার মাটিতে নামো;
একবার অন্তত দেখো—
মাটির ক্ষুধাও সীমাহীন!
স্বীকৃতি
নদীর পেট থেকে
টেনে আনি ছায়া
নিজেকে ছুড়ে দেই
ফের স্মৃতির পেটে
দেখি, বিরাট অজগর!
তবুও বিজ্ঞাপনের রঙবেরঙে
ছড়িয়ে গেল অস্তিত্বের স্বীকৃতি!
শোয়াইব শাহরিয়ার : তরুণ কবি। ২৮ এপ্রিল, ১৯৯৯ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পূর্ব ইলশা গ্রামে জন্ম।চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ, বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত।
প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ – কপালের কৌতুক (২০২১)