মুক্তগদ্য


বয়েস তুমি বইছো কেন


নাজমুন নাহার


পুবাকাশ


Bankstown এ এক বৃদ্ধার সাথে দেখা । তার সাথে দুজন ৬/৭ বছরের ছেলে । একজন চাইনিজ টাইপ চেহারা আর একজন অস্ট্রেলিয়ানদের মতই । জিজ্ঞেস করলাম কে হয় বাচ্চারা ? উনি বললেন একজন তার নিজের নাতি আর একজন নাতির বন্ধু ।ওদের ছুটি চলছে । তাই ওদের নিয়ে উনি বেড়াতে যাচ্ছেন । জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন নাকি কারো সাথে থাকেন । উনি বললেন ছেলে ছেলের বউ এর সাথে থাকেন । বার বার বলছিলেন ওনার ছেলের বউ ওনাকে খুব পছন্দ করে । বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা যেমন করে বলি আমার শ্বাশুড়ি আমাকে খুব পছন্দ করেন । আসলে পছন্দ করার কথা না কিন্তু করেন । বিষয়টা যেনো তেমনি।

🍂

আমি বৃদ্ধ বৃদ্ধা দেখলে কথা বলতে আগ বাড়িয়ে যাই ।ওনারা বেশীর ভাগই একা থাকেন । একদিন বিরাশি বছরের এক বৃদ্ধার সাথে রাস্তায় হাঁটার সময় দেখা হলো। জিজ্ঞেস করলাম একাই থাকেন কিনা ?বললেন যে হ্যাঁ একাই থাকেন । কিন্তু ওনার প্রতিবেশী ওনার খেয়াল রাখেন।বললাম খারাপ লাগে তোমার এই একাকী থাকা ? উনি বললেন না খারাপ লাগে না । ওনার অভ্যেস হয়ে গেছে ।

🍂

এক চাইনিজ বৃদ্ধাকে স্টেশনে দেখলাম । উনি এটা সেটা বলার পরে বললেন বৃদ্ধ হওয়া খুব কষ্টের । বৃদ্ধ হইও না । মনে মনে হাসলাম।বেঁচে থাকলে বৃদ্ধ হওয়া কে এড়াতে পারে!!

🍂
একদিন বন্ডাই জংশনে কাজ করছিলাম। এক বৃদ্ধা প্রায় ৮৩/৮৪ বছর হবে । স্টেশনে নেমেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন । আই এম লস্ট – আই এম লস্ট ।
এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হলো কই যেতে চান কোথায় যেতে চান । উনি ওনার হাতের লাঠি ফ্লোরে বাড়ি দিয়ে বলছিলেন – খুব উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়া । ছেলে মেয়ে সব স্টুপিড । দেশ স্টুপিড, মানুষ স্টুপিড । উন্নত দেশ মানবিকতা শেখায় নাই কাউকে ।
আমার ফেইস সম্ভবত একটু সহজ সরল । কন্ঠস্বর ও নরম । উনি আমাকে খুব পছন্দ করলেন । নাম জিজ্ঞেস করলেন । দেশ জিজ্ঞেস করলেন ।এরপর বললেন তুমি খুব ভালো মেয়ে । বাংলাদেশের মেয়ে খুব ভালো ।কথাবার্তায় বোঝা গেলো একসময় ভালো চাকরী করতেন ।
অস্ট্রেলিয়ায় বুড়িদের একটু সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে ওরা খুব মাইন্ড করে । না সে পারবে । তার কারো হেল্প লাগবে না ।
উনি সিঁড়ি দিয়ে খুব কষ্ট করে নামছিলেন । কিন্তু কারো সাহায্য নেয়া ওনার জন্য অপমান সূচক মনে হয়েছে ।
বুঝলাম আসলে আত্মমর্যাদা বা সেলফরেসপেক্ট তাদের রক্তেই রয়েছে ।

এখানে ৫০ বছরের উপরে পুরুষগুলোর স্ত্রী প্রায় ছেড়ে যায় তাদের । এটাই দেখেছি । আজ এক ইটালীয়ান মেয়ের সাথে কথা বলার পরে সেও বললো আশ্চর্য এই একটা ব্যপার । অলমোস্ট সব বয়স্ক পুরুষের বউ তাদের ছেড়ে চলে যায় । ব্যপারটা যেনো কেমন —

নাভিটাসে আমাদের ইংলিশ শিক্ষক -ভেলোরা প্রায় ৬০ বছর বয়স্কা । উনি ছেলেদের প্রসংগ আসলেই বিরক্ত হন । বলেন যে ছেলেরা খুব অকাজের । কিচেন নোংড়া করে । নিজের কাজ নিজে করতে চায় না। ওদের ভার বহন করা দুরুহ ব্যাপার ।
উনি ওনার স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ নিয়েছেন ।
🍂
যদিও এই পুরুষদের স্ত্রীরা তাদের ছেড়ে গেছেন কিন্তু তারা তাদের মেয়ে নাতির সাথে থাকেন । আমার এক সুপারভাইজার ওনার বয়েস ৬০ হবে । উনি বললেন ছেলে তাকে দেখে না । তাতে কি ? তিনি কেয়ার করেন না ।
🍂
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও আজকাল ছেলেমেয়েরা যে মাবাবাকে দেখাশোনা করে তাও খুব না । মাবাবার উচিত সব টাকা পয়সা ছেলেমেয়ের পেছনে খরচ না করে নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য রাখা । যাতে ছেলেমেয়েরা না দেখলেও তাদের যেনো সমস্যা না হয় ।


নাজমুন নাহার : কবি ও কথাকার। অস্ট্রেলিয়া অভিবাসী।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন