অপূর্ব সাহা’র দুটো কবিতা
প্যানডেমিক
কার্নিশ থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের ফোঁটা গুনতে গুনতে, ব্ল্যাক আউট
তারপর একটানা জল পতনের বেঘোর শব্দ।
কখন ভোর হয়ে গেছে, বুঝিনি।চকচকে আলোর মধ্যে খোন্তাকোদাল নিয়ে শ্রমিকেরা
যাচ্ছে ডেভলপমেন্ট প্রোজেক্টে,
কারো মুখে কোন মুখোশ নেই।ওরা আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করছে সামাজিক দূরত্ব কী জিনিস।
ওদিকে পরিসংখ্যান অফিসের সবগুলো দরজা বন্ধ।ভেতরে পুরোদমে চলছে মানুষকে সংখ্যায় রূপান্তরের কাজ। ধূসর বুলেটিন। পৃষ্ঠা সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে…
সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে ডোরাকাটা জীবন জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। আমি দেখছি অথবা দেখছি না।আমি শুনছি অথবা শুনছি না।ভারী হচ্ছে জল ও মরুৎ।
জানালা খোলাই আছে, জুনের ঠা ঠা উত্তাপ ঢুকছে ঘরে।জানালা খোলাই থাকবে। জানা নেই, আজ রাতে কী ঢুকবে ঘরে- কাঙ্ক্ষিত জোছনা নাকি অনাকাঙ্ক্ষিত সেই হিমছায়া…
অসুখ
এ কেমন নদী
নির্ঢেউ, ঘোলাটে
গলা বাড়ালে নিজেকে দেখি না
দেখি না কালো টিপ, তোমার উজ্জ্বল ললাটে
অথচ নদীর স্বচ্ছতায় তোমাকে
দেখব ব’লে
গৃহ থেকে সরিয়ে নিয়েছি আয়নানগর
প্রতিফলনের ব্যাকরণ
মুখস্থ করে
বিভাবতী নদের তীরে বেঁধেছি হাওয়াঘর
কত কত ঊষা
নদীর প্রতিবিম্ব থেকে
তোমার লাবণ্য খেয়েছে, ক্ষুধা ও প্রেমে
কত অপরাহ্ন ম্লান হয়েছে
কত কত চাঁদ জ্যোৎস্নায় নেমে এসে
কী নিপুণ বসে গেছে তোমার মুখের ফ্রেমে
এ কেমন নদী
ঘোলাটে,
হিংস্র অনুজীব জর্জর
একে আমি নদী বলব না
যে বুকে ধরে রাখতে পারে না
তোমার হাসির মর্মর
এ কেমন পৃথিবী
বুকে যার
স্বচ্ছতা হারানো বিভাবতী নদের হাড়গোড়
একে আমি পৃথিবী বলব না
বলব, মহাশূন্যে ছুটে চলা
এক টুকরো নিষ্প্রাণ পাথর
অপূর্ব সাহা:নব্বইয়ের খ্যাতিমান কবি ও কথাকার। প্রকাশিত গ্রন্থ আটটি।