গুচ্ছ কবিতা।। জোবায়দা আক্তার চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু তুমি আমার বাংলাদেশ

শোকের চাদরে ঢেকে আছে
বাংলাদেশের চোখ
বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠ
আবার ধ্বনিত হোক।

তোমাকে ছুঁইনি কখনো, চোখে দেখিনি কোনোদিন
তুমি আঁধারের বুকে প্রদীপ হয়ে জ্বলবে চিরদিন।

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট
বাঙালির কলঙ্কিত অধ্যায়
বঙ্গবন্ধু তোমায় স্মরণ করি
ভালবাসা আর শ্রদ্ধায়।

পারেনি ওরা মুছতে তোমাকে
বিকৃত মিথ্যার ক্ষরস্রোতায়
তোমার কথা লেখা আছে
বাংলার স্বাধীন পতাকায়।

তুমি জাতির পিতা
আমার স্বাধীনতা
তুমি না থাকলে পেতাম কোথায়
লাল সবুজের পতাকা।

তুমি জন্মেছো বলেই জন্মেছে এই দেশ
বঙ্গবন্ধু তুমি আমার স্বাংলাদেশ।

পরপারে যাওয়ার প্রাপ্তি

আমি আজ পরপারে
তোমরা দেখছি আমার গুনের কীর্তন গাইছো
এতদিন কোথায় ছিলে ?
যখন আমি রোগে শোকে জর্জরিত
দু’বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতাম,
তখন কোথায় ছিলে ?
কেউতো খবর রাখনি
আজ খবরে, কাগজে শুধু আমার ছবি, আমার কথা বলছে।
কেউ কেউ চোখের জলে ভাসছে
কেউবা আবার স্মরণ সভা ডাকছে।
এতদিন কোথায় ছিলে?
তোমাদের একটু সঙ্গ পেতে কতবার বুকটা হাহাকার করেছিল
শুধু দু’দন্ড কথা বলবো বলে।
সেদিন কিন্তু তোমাদের সময় হয়নি আমায় সময় দেবার।
আজ তোমরা আমার কত ভাল ভাল কথা বলছো
যেকথা ভুলে গিয়েছিলাম সেটাও আজ মনে করিয়ে দিচ্ছো।
বাহ্ সুধি সমাজ
তোমাদের সালাম।
একটা সময় ঘরের এককোনে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম
কখনও খেয়েছি, কখনও আবার পত্রিকায় মুখ গুঁজে রেখেছি।
শুধু প্রিয় মুখগুলো দেখবো বলে কতবার জানলা খুলে রেখেছিলাম।
কতবার যে দরজায় পায়চারি করেছি,যদি কেউ আসে।
চলার পথে সঙ্গীরা আমায় মনে করে একবার যদি আসে,
আড্ডা দেব মন ভরে।
নিশ্চই খালি হাতে আসবে না
সঙ্গী পেলে কব্জী ডুবিয়ে খাবো।
কতদিন খাবার টেবিলে আড্ডার ঝড় তোলা হয় না
দেশের রাজনীতি নিয়ে তর্ক বিতর্ক করবো তেমন কাউকেও তো পাইনা।
হাজারো প্রশ্ন
আমায় কি তারা ভুলে গেছে?
ভুলবে কেন? আমিতো তাদের প্রিয় মানুষই ছিলাম, তাদের প্রানের বন্ধু
মনকে শান্তনা দেই,ব্যাস্ততায় হয়তো সময় করতে পারছে না।
হটাৎ দরজায় টুক করে আওয়াজ
বুকের ভেতরটা হুড়মুড় করে ওঠে
পা দু’খানা খুড়িয়ে খুড়িয়ে দরজায়।
এদিক ওদিক তাকালাম
কাউকেতো দেখছিনা
বন্ধুরা কি চমকে দিতে চায়?
দরজার ওপারে নিশ্চই লুকিয়ে আছে
তারপর চমকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলবে, কেমন আছিস বন্ধু?
কি খবর বল? কতদিন দেখা হয়না।
নাহ্ চমকে দেয়ার জন্য কেউ আসেনি
বুকের ভেতর কোথায় যেনও চিন চিন করে ওঠে।
এই ঘরটাতে আমি ছাড়া আমার আপন বলে কেউ নেই
আছে মাঝবয়সী একজন, যে আমার দেখাশুনা করে।
ছেলেমেয়েরা প্রবাসে থাকে
জীবনসঙ্গী ওপারে চলে গেছে অনেক আগেই।
নাতি পুতিরা এদেশের আলো বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না।
শুনেছি ছেলে আমার অনেক নাম করেছে
মেয়েটা মাঝে মাঝে মনে করে।
মাসে এক দু’বার ফোন করে।
খোঁজ নেয় ঠিকভাবে খেয়েছি কিনা, ঔষধ খেয়েছি কিনা।
যে সময়টাতে মেয়েটা আমায় ফোন করে, সেই সময়টাতে টেলিফোন সেটটাতে চোখ বোলাতে থাকি।
এই বুঝি ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠে
সময় চলে যায় টেলিফোন আর বাজে না।
হতাশার চাপা কষ্ট নিয়ে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিই
ভাবি বেলা শেষে বড় একা।
ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পাইনি।
উঠে দেখি হাসপাতালের বেডে শুয়ে
ডাক্তার নার্সদের কতযে বিরক্ত করেছি
কেউ আমায় দেখতে এসেছিল কিনা
ঘুম দেখে চলে গেল কিনা
একসময় তারাও বিরক্ত হয়ে যায়।
আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে হয়তো সময় নষ্ট করতে চায় না
শেষমেশ সবাইকে ছুটি দিয়ে শেষ ঠিকানায় পাড়ি জমালাম, চললাম।

স্মৃতির পাপড়িগুলো

চলে যায়
যায় চলে
ফেলে আসা স্মৃতিটুকু
জড়িয়ে ছড়িয়ে।

চরণ ধুলি ছড়ায়ে আছে
আমার আঙ্গিনা জুড়ে।
চলে যায়
যায় চলে
ধুলোমাখা স্মৃতিটুকু
জড়িয়ে ছড়িয়ে ।

পড়ে থাক
থাক পড়ে
আছে যা ছড়ায়ে।
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাবো
স্মৃতির পাপড়িগুলো
নিওনা সড়ায়ে।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি টুপটাপ

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি টুপটাপ
বেলকনিতে বসে আছি একা চুপচাপ।
ভাবছি তোমাকে,
টুপটাপ সময় পড়ছে ঝরে,
বৈশাখী ঝড়ে।
বৃষ্টির ঝাপট কানে কানে
বৈশাখে কথা হবে কবিতা ও গানে।
দূর দিগন্ত কাছে আসে,
কাছে এসে বসে
চুপচাপ টুপটাপ
ঝরে ভালোবেসে।

মেয়েটা আজ বাঁচতে জানে

মেয়েটা আজ বাঁচতে জানে
পুকুর জলে ডুব সাঁতারে ভাসতে জানে
দু:খ গুলো লুকিয়ে রেখে হাসতে জানে।
আঘাত পাওয়ার কষ্টগুলো সইতে জানে।
মেয়েটা চুল বাঁধতে জানে।
সুখ পুড়িয়ে কাঁদতে জানে।
মেয়েটা নাকি হাসতে জানে।
দু:খগুলো বুনে বুনে দুখের কাঁথা বুনতে জানে।
মেয়েটা আজ পাখির সুরে গাইতে জানে।
ডানা মেলে পাখির মত বাতাসে ভাসতে জানে।
মেয়েটি আজ ভালোবাসতে জানে

জোবায়দা আক্তার চৌধুরী: তরুণ কবি। প্রকাশিত গ্রন্থ ২টি।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন