পাঁচটি কবিতা

সাগর শর্মা

মানুষজীবন

মাঘীপূর্ণিমার রাত জানে, কতটা বিতৃষ্ণার গ্লানি বয়ে বেড়ায় আমি! একটা ধূসর শাদাকালো জীবন মানুষ
বয়ে বেড়ায় কার জন্য?—কার জন্যই-বা ফুটে এই সন্ধ্যামালতী! নক্ষত্রখচিত রাতের আঁধারে ধু-ধু নৈঃশব্দ্যে কেনো কেঁপে উঠে হৃদয়ের গোপন আর্তনাদ! কতটা ব্যর্থ হলে মানুষ ভায়োলিনের অঝোর-বিষাদে কেঁদে ওঠে! প্রভুভক্ত কুকুরের মতো জেগে আছি এই সতের বছর ধরে!

কার, পাহারাদার হয়ে? সত্যি জানিনা কিছুই। কুকুর হলে বুঝতে কী অপরিসীম বেদনার এই মানুষ জীবন!

মেঘমঞ্জরি

ওগো চন্দ্রমল্লিকা, জানো, কতটা দূরত্বে ফুটে ভোরের কুসুম! বিষণ্ণ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে বাঁকানো চাঁদ—
কতটা বিদূর হলে বেদনার্ত হয়ে আসে ভোরের মঞ্জরি! আহত হৃদয় তবু কাতরায়—মারে চোখ করুণ ইশারায়! এমন হাহাকার ওঠে চারদিকে, যেন স্থীর আমর্ম বিষাদ—কতটা বিমর্ষ হলে ঢেউ আকুল আছড়ে পড়ে তীরে! জোছনার এত আকুলতা তবু মেঘ সরে সরে যায়। কত বিনিদ্র রজনী কেটে গেছে আহা, মৈথুনে—মিলনে। কে তবু রাত্রির আয়নায় লুকিয়ে রাখে আঙুলের নগ্নতা।

ওগো মেঘ, ওগো মঞ্জরি, খুলে এসো আভ্রুর অহম। মেলে দাও ডানা—ভোরের কুসুমে। কত অনুজ্জ্বল মেঘ উড়ে উড়ে হারিয়েছে মেঘের অন্তরালে—কে জানে!

পাথার

বুকে যে ব্যথা বাজে অবিনাশী, তাকে কী মূল্যে ফেরাবে বলো! হৃদয়ে যে শব্দ লালিত হয়—তা উচ্চারণের অধিক জড়তা নিয়েই কেটে গেছে গোটা জীবন! যেভাবে বলার অধিক দেখার বাসনা নিয়ে পড়ে থাকে পথের ধার… হিজল বনের সুবাস ছড়িয়ে চলে যাওয়া পথের দৈর্ঘ্য জানে, কতটা ভাঙলে বুক—হয়ে ওঠে কঠিনপাথর! জলের কতটা ভাঙলে স্রোত পথ রূপ নেয় পাথারে!

আহা, সুবাসিনী, কেন হৃদয়ে দোলাতে দিলে না সবুজ রুমাল! খাঁচা ভাঙা পাখির উড়াল হয়তো জানে, ভাঙা হৃদয় কতটা মর্মন্তুদ!

স্পর্শ

হৃদয়ের আকুলতায়—যে উঁকি মারে অন্তরমহল, তারে তুমি কীভাবে এড়াবে! তারচে’ ভালো বরং ভুলে যায় একে অপরে। চলো, এই নিদানকালে ভুলে থাকি সকল অন্তরাল। মুখোশে ঢেকে রাখি, যার যার নিজস্ব আয়না।

এসো অবিশ্বাস করি আজ নিজেদের হস্তযুগলকেও। কেননা চিবুকের বেদনা কে বোঝে আর অমন করে, তোমার স্পর্শের মতন। হাতের উপর হাতের নানা ছলনা ভুলেছি সে তো কবেই! তবুও কোথায় যেন এক বিশ্বস্ত হাতের ইশারা মনে পড়ে। একইসাথে ছলনা ও বিশ্বস্ততায় তোমরাই এমন ভুলাতে পারো কেবল!

কাঙ্ক্ষা

নীলিমার এই নির্লিপ্ত রাত জানে, অষ্ট প্রহর ভোরের কী নিঃসঙ্গতা! আঙুলের আমর্ম স্পর্শের ইশারা; হৃদয়ের মৃদু কম্পন ভুলে, যে পালিয়ে বেড়ায় অহর্নিশ! তারে বলো, ফেরাই কি রূপে! এইটুকু আলতো পরশে—কী মিথ্যে করে কেঁপে ওঠে, তোমার ভাবের বৈভব! বাইরে কাঙ্ক্ষার কুয়াশা—ভেতরে জলের বুদ্বুদ, মাঝি পাড়ে, বসে থাকে অপার—

এইসব ঘোরের ভোরে—রেললাইন ধীরে ধীরে পার হয় স্টেশান—রাতের নিস্তব্ধ ট্রেন।

সাগর শর্মা : শূণ্যদশকের কবি ও সাংবাদিক

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন