আবদুল কাইয়ুম মাসুদ
ঈদগাহে কোলাকুলি করা হয়নি এবার কারও সাথে। এ অতৃপ্তি নিয়েই বাড়িতে ফিরে এসেছি। ছোট বড় সকলের সাথে কোলাকুলি করার যে প্রশান্তি তা থেকে আজ বঞ্চিত হলাম। এর দায় কার? করোনার না আমাদের? এর জবাব পাঠকের জন্য রেখে দিলাম।
গতকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদগাহে যাওয়ার জন্য আহবান করা হয়েছে। নামাজে এ বিধি মানা হয়েছে। নামাজ শেষে সেলফি তোলার সময় কোন বিধি ঠিক হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে এক্ষেত্রে বিধি খুব কমই মানা হয়েছে। অনেকে নেতাদের সাথে সেলফি তুলেছে, ভিআইপিদের সাথে সেলফি তুলেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব করতে দেখা যায়নি।
গতপরশু থেকে খবর পাচ্ছিলাম চট্টগ্রামে গরুর সংকট। গতকাল ছিলো ঈদের আগের দিন। ৩০ তারিখ বিকেল থেকে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা কুরবানি দেয়ার নিয়াত করেছেন তারা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করেছেন। রাতেও বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু এসেছে। ঈদের দিন সকালে কিনেছে অনেকে। কথায় আছে, নিয়াত গুণে বরকত।
ঢাকা, চট্টগ্রামে গরুর এ সংকট হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের লাভ হয়েছে সাথে বেপারিরাও লাভবান হয়েছে। তবে এ সংকটের মুলে কিছু কারণ আছে।
প্রথমতঃ করোনার প্রাদুর্ভাব আর বন্যার কারণে বাইরে থেকে গরু কম এসেছে। একই কারণে প্রথমদিকে গরু কিনতে বাজারেও যায়নি মানুষ। এতে স্বাস্থ্যবিধির বিষয় আছে, মিডিয়াও এসব ফলাও করে প্রচার করেছে। সব মিলিয়ে মানুষের চিন্তা ছিলো শেষদিন গিয়ে একটা কিনে নিয়ে আসবে।
দ্বিতীয়তঃ আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা কুরবানির ছুটিতে বেড়াতে চলে যেতো। লকডাউনের কারণে তারা এবার বেড়াতে যেতে পারেনি। তারাও কুরবানি দিয়েছে এখানে। তদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এ সংখ্যা যোগ হওয়ায় একটা চাপ পড়েছে গরুর ওপর। তারওপর করোনার প্রভাবে ধর্মীয় বিধান মেনে চলার বিষয়ে মানুষের আগ্রহও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কুরবানির গরুর সংকট প্রকট হয়েছে।
তবে অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে, অনেক দূর থেকে গোস্ত সংগ্রহ করতে এসেছে কিছু মহিলা। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কি.মি দূর থেকে একটা গ্রুপ এসেছে। অপরিচিত হওয়ায় তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তারাও অবলীলায় বলেছে যে আমরা সীতাকুণ্ড থেকে এসেছি। তাদের বেশভূষা দেখে ধারণা করছি যে এলাকায় চাইতে লজ্জা পাচ্ছে তাই এদিকে চলে এসেছে। করোনার কারণে প্রান্তিক লেবেলের মানূষের আর্থিক সংকট বেড়েছে। তাই হয়তো দূরে চলে এসেছে।
সবচেয়ে মর্মাহত হয়েছি, দিনের ৩/৪টা বাজেও গরুর চামড়া কেনার জন্য যখন কেউ আসেনি। গ্রামে আমরা এটাকে খাল বলি। আমাদের গ্রামের বাড়িতে জ্ঞাতিগুষ্টি অনেকেই একসাথে থাকতাম। সেখানে প্রতিবছর ৩/৪টা গরু কুরবানি দেয়া হতো। উৎসবমূখর পরিবেশে সবাই গোস্ত বানানোর কাজ করতো। কার খাল কতো বিক্রি হচ্ছে এটাও সবাই লক্ষ্য করতো। খাল বেশি বিক্রি হওয়াও একটা আনন্দের বিষয় ছিলো। বেশি বিক্রি মানে গরিব মিসকিনরা বেশি টাকা পাওয়া। বেশি দিতে পারারও একটা আনন্দ আছে। তাই এ টাকা ঈদ আনন্দের মাত্রা বৃদ্ধি করে দিতো আমাদের। বেশি পেয়ে নিশ্চয়ই মিসকিনরাও খুব খুশি হতো। আমার যতটুকু মনেপড়ে ১৬/১৭ শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে এসব খাল। আর আজ সে চামড়া কেউ কিনতেই এলোনা। এটা কয়েক বৎসর ধরে চলছে। এটা ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে। আমাকে খুবই পীড়া দিয়েছে। যেখানে সবকিছুর দাম বাড়ছে সেখানে চামড়ার কোন মূল্যই থাকবে না তা মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর। এতে করে গরিবের ঈদ আনন্দটা আরও ফিকে হয়ে গেলো। তারা অনেক আগে থেকে যারা কুরবানি দেয় তাদের বলে রাখে কিছু টাকার জন্য। তাদের আশায় গুড়েবালি।