জগলুল আসাদ
অন্তর্দৃষ্টি রাশি রাশি বই পড়ে তৈরী হয়না । শুধু উইকিপিডিয়ায় কোন লেখকের লেখার পরিচিতি ও নির্বাচিত উক্তি পড়েই অনেকেই লিখে ফেলেন এমন রচনা যার অনবদ্যতায় আমরা মুগ্ধ হই । চিনি এমন অনেককেই যারা ফ্ল্যাপ পরেই বা কারো চিন্তার চুম্বক অংশ পড়েই নিজস্ব মৌলিকতায় বা ভাবনার সক্রিয়তায় বুঝে ফেলেন সমগ্রকে , দেখে ফেলেন বহুদূর ; কোন ভাবনাবুদবুদ বা বাক্যখন্ডকে টেনে নিয়ে প্রাসঙ্গিক করে ফেলতে পারেন নিবন্ধের বিষয়বস্তুর । আর অনেকে বই এর পর বই পড়েও নিজভাষায় হাজির করতে পারেননা তার কোন সাবলীল সারসংক্ষেপও । পুরো লাইব্রেরি মাথায় ঢুকিয়েও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারেননা জ্ঞানকে, ব্যাখ্যা করতে পারেন না জগত বা সমসাময়িক ঘটনাপুঞ্জি । চিন্তার কোন এক সামান্য সুত্র , কোন স্পষ্ট বা অস্পষ্ট ইশারাও জন্ম দিতে পারে কালজয়ী সন্দর্ভের । যুক্তিমাফিক সিদ্ধান্ত টানার অগোচরেও আলগোছে থাকে স্বজ্ঞার ক্রীড়া।
টি এস এলিয়ট জানাচ্ছেন, শুধু প্লুটার্কের ইতিহাস বই থেকেই শেক্সপীইয়ার যা নিতে পেরেছিলেন, সমস্ত ব্রিটিশ লাইব্রেরি ঘেঁটেও অনেকে পাননি তার শতভাগের একভাগও । পথ চলতে পাওয়া কোন উক্তিও ভাবুকের মনে জাগিয়ে দিতে পারে এমন বোধ যা পাতার পর পাতা কালো অক্ষর পড়ার পরও অনর্জিত থেকে যায়।হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত কোন ‘বোধ’,কোন ‘সত্য’ মনোপটে ঘনীভূত হয়ে ভাষার গতরে আকৃতি পায় । এই চকিত ‘এপিফ্যানি’ প্রায়ই লক্ষ্য করি কবিতার মান্দ্র উচ্চারণে। পাওয়া যায় বহু নিবন্ধেও। প্রমাণবিহীন কিন্তু ‘মন’ বলে উঠে কথাটি সত্য তো । একটি শব্দের গুঞ্জরিত ধ্বনি চুম্বকের মত টেনে আনে আরও আরও শব্দ , আরও আরও ধ্বনি ; মালা গাথা হয়ে যায় ধ্বনিরাশি বা শব্দাবলীর যার আবেশে,যার উদ্ভাসিত ‘সত্যে’ একাত্ন মুহুর্ত যাপন করেন বক্তা- শ্রোতা, লেখক –পাঠক।‘প্রজ্ঞা’ , ‘দূরদৃষ্টি’ ,’অন্তর্দৃস্টি’ শব্দবন্ধগুলি দ্যোতিত করে সসীমের অসীমের সাথে মোলাকাতের সম্ভাবনাকে।
হয়ত ‘ইন্সাইট’ পরম মগ্নতা বা নিবিষ্টতার ফসল।নিরন্তর তন্ময়তা,বিষয়ানুগ ধ্যানমগ্নতা,নিরবিচ্ছিন্ন লেগে-থাকা হয়ত জন্ম দেয় বুকের জমিনে ওই ‘অন্তর্দৃষ্টি’র ,ওই উদিত বোধের,সুবেহ সাদিকের,ওই এপিফ্যানির, ওই ভাষার …ওই দিব্য আলোর। কিন্তু কিছু ‘বোধ’ শুধু প্রচেষ্টায় যায় নাকো ধরা। তাহা শুধু নাজিল হয়…নাজিল হয়… কবিরা সাক্ষী , সাক্ষী কবিতা। [২৮ জানুয়ারি, ২০১৬]
জগলুল আসাদ: সম্পাদক,চিন্তাযান।