গুচ্ছ কবিতা

নাসির মাহমুদ

সয়ে ক্ষয়ে যায়

সবকিছু সয়ে ক্ষয়ে যায়
মায়ের পা ছুঁয়ে, সেমাই মিষ্টির হাসি মেখে ঠৌটে
সুগন্ধি ছড়ানো নয়া গোপন পিরান বাতাসে দুলিয়ে
বাবার সাথে ঈদগায় গিয়ে বন্ধু বলয়ে ছড়ানো
বর্ধিত মূল্যের মিথ্যা মুকুটের মেকি অহংকার-
সবকিছু কেমন সয়ে যায়, ক্ষয়ে যায়।
সয়ে যায়-একদার পিতৃমাতৃহীন ঈদের অকল্পনীয়তা
দিনের প্রথম টেলিফোনে
মায়ের কণ্ঠের দোয়া শুনে
ঈদের আনন্দে হৃদয় পূর্ণ করা-সয়ে যায় …
সয়ে যায়-
ভরাট কণ্ঠে বাবার দীপ্ত নিয়মিত আহ্বান
সয়ে যায় ভ্রাতৃহিংসার রকমারি আয়োজন
প্রেমিকার অদূরদর্শী অনুমানে গ্ৰন্থিত দ্বিচারিতার মালা
অতিযোগ্যতার নিরীহ অভিশাপে বিশ্বাসের শেকড়হীনতা
উর্বরতার মায়াবি আদরে হারিয়ে ফেলা টবের চারাগাছ,সয়ে যায়।
সয়ে যায়-ধর্ষিতা বোনের করুণ আহা চিৎকার
পরকীয়ায় মত্ত জায়ার মহাতৃপ্তির শীৎকার
ক্ষমতার অক্টোপাসে বন্দি মানবতার মেকি আহ্লাদ
সাইকো সহকর্মীর জাতে ওঠার সিঁড়ি- নিরন্তর অপবাদ, সয়ে যায়।
সয়ে যায়-
সময়ের বুক চিরে চুঁয়ে পড়া ফোঁটাফোঁটা রঙিন বিষাদ
সয়ে যায়-
করোনার সোপানে দাঁড়িয়ে আত্মঘাতী বিস্মৃতির নিষাদ
বজ্রনাদি বন কুলিনের বিবরবন্দি জীবনের মৌনতা
দুপুরের তীব্র দহন সূর্যের, রাতের আঁচলে লুকানোর ম্লানিমা
লকডাউনের অন্যরকম ঈদের মতো
সবকিছুই সয়ে যায়, ক্ষয়ে যায়।

একিলিসের গোড়ালি

হরিণের শিঙে ঝোলে পূর্ণিমা চাঁদ
সিংহের মরা চোখে ধুলো খুঁজে কাজ কী
শান্তির চাদরে নাক ডাকা নিদ্রার সাধ
একিলিসের গোড়ালি ছিদ্রময় আজ কি!

ছন্দপতন

মাঝে মাঝে তারাগুলো খামোখাই ফোটে
ব্যাকরণ ভেঙে চুরে উল্কো হয়ে ছোটে
প্রবল গতি তার পতনের ইঙ্গিত
অস্থায়ী আনন্দে তবু ঝিলিক মেরে ওঠে।

কাব্যশ্রী

আমি তুমি এবং সে
লিঙ্গহীন এই তিন পুরুষ
মুখশ্রী ম্লান করেছে।
বঙ্গনারী পুরুষ হলে
নেয়ে কী সুখ কমল জলে।

ভাঙনের আশা

মাঝেসাঝে হাতুড়ি শাবল হাতে নিতে ইচ্ছে করে
ইচ্ছে করে প্রাচীন দেয়াল ভেঙে গড়ি নতুন ঘর
জরাজীর্ণতায় জোড়াতালি দিলে নতুন হবে আর কবে
প্রাচীন এসে সামনে বলে: কেন ভাবিস আমায় পর
ফিরে যাই আবার পেছনে,হাতে তুলে নিই রঙ তুলি
পূর্বসূরীর ঘর-ভিটে এ,মায়া তার কী করে ভুলি!
মাঝেসাঝে তাই অকস্মাৎ ঝড়-তুফান করি কামনা
কালবোশেখির ঘাড়ে লালন করে যাই নতুন ভাবনা।

হৃৎকমলের জোছনা

চাঁদের ক্ষতময় আলোতে নিজ ভুবনে আমি
শান বাঁধানো পুকুর ভেবে গোপন জলে নামি
অমানিশায় ছিটেফোঁটা জোছনা খুঁজি যখন
ভিন্ন গ্রহের বারান্দাতে হেলান দিয়ে তখন
বিলিয়ে নিজ সত্তাটুকু নিঃস্ব হাতে আঁচল খোলো
কৃষ্ণবিবর প্রান্তে বসে
আলোর কণার রেশটি ঘঁষে
সূর্যমুখি ফুলের মতো চোখের থালা সামনে তোলো।
সপ্ত আকাশ সপ্ত জমিন হন্যে হয়ে খুঁজে
অনন্য যে জোছনা নিলাম হৃৎমহলে গুঁজে-
সে যে এমন ভিন্ন গ্রহের চাঁদ
না,বুঝি নি,জোছনা পুঁজি খুইয়ে আপন
চাঁদের বুকের নর্দমাতে তুলে কাঁপন
আঁধারকোণে ভাঙবে রূপের বাঁধ।
লাত্থি মেরে জোছনাকুলে
রাহুর দুয়ার সটান খুলে
অন্ধকারেই সাঁতরাবো অবাধ
মন গহীনে রংহীন চাষাবাদ।
আলো এবার নাইতে পারো চাঁদের বুকে
নিরালোকের আকাশজুড়ে খেলবো সুখে।

নাসির মাহমুদ : কবি ও প্রাবন্ধিক। ইরান প্রবাসী সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন