পুন:পাঠ


কবি নির্মলেন্দু গুণের স্মৃতি


ময়ুখ চৌধুরী’র জন্মদিন : আমার অর্জন


পুবাকাশ


আমার সরল ও সহজপাচ্য কবিতা নিয়ে এরকম একটা কঠিন গবেষণাও যে হতে পারে- কবি ময়ুখ চৌধুরী ও তাঁর প্রিয় ছাত্র মীর্জা আব্দুল্লাহ আমার জীবদ্দশাতেই-, আমাকে শুধু নয়, আমার রামশত্রুদেরও তা বুঝিয়ে দিলেন।


১৯৭৩ সালে সাহিত্যিক আবুল ফজল যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, তখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ আয়োজিত একটি কবিতামেলায় অংশ গ্রহণ করতে ঢাকা থেকে কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, শহীদ কাদরী এবং আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম।
সকালের দিকে সহস্রাধিক দর্শক শ্রোতার উষ্ণ-উপস্থিতিতে সেদিন একটি জম্পেশ কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ঐ অনুষ্ঠানেই কবি ময়ুখ চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় এবং কিছুটা বন্ধুত্বও হয়।
ঐ চট্টলাভ্রমণে আর যাঁদের সঙ্গে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়েছিল তাদের মধ্যে যাঁদের কথা এখনও আমার স্মরণে আছে– তাঁরা হলেন– শিশির দত্ত, স্বপন দত্ত, ত্রিদিব দস্তিদার, সৈয়দ ইকবাল, হাসি চক্রবর্তী, খালিদ আহসান, আবুল মোমেন, অমিত চৌধুরী, কমল দাশগুপ্ত, শহীদুল ইসলাম, মিনার মনসুর। দুর্বল মেধাহেতু যাঁদের নাম ভুলে গেছি, তারা আমাকে ক্ষমা করবেন।

পরবর্তীকালে এঁদের সবার সঙ্গেই আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কমবেশি রক্ষিত হয়েছে–
শিশির দত্ত এবং শহীদুল ইসলাম একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন– সম্পাদক নামে। ঐ প্রকাশনী থেকে আমার একটি কাব্যগ্রন্থ ( তার আগে চাই সমাজতন্ত্র, ১৯৭৯) প্রকাশিত হয়েছিলো। সম্পূর্ণ অফসেটে সুমুদ্রিত কাব্যগ্রন্থটির চমৎকার প্রচ্ছদ করেছিলেন খালিদ আহসান।

আমার সম্পর্ক রক্ষিত হয়নি শুধু ময়ুখ চৌধুরীর সঙ্গে। এরপর বহুবার, বহু অনুষ্ঠানে আমি চট্টগ্রামে গিয়েছি–ঢাকার বাইরে আমি চট্টগ্রামেই সবচেয়ে বেশিবার গিয়েছি। সেখানে বহু বন্ধু ও বান্ধবীর দেখা পেয়েছি আমি– কিন্তু কবি ময়ুখ চৌধুরীর সঙ্গে আমার একবারও দেখা হয়নি। একবারও না।

আশ্চর্য যে, দেখা না হলেও এই ময়ুখ চৌধুরীই আমার কবিতা নিয়ে গবেষণা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর একজন কৃতী ছাত্র– এ কে মীর্জা মো. আব্দুল্লাহ ( লেখক নাম মীর্জা আব্দুল্লাহ)-কে Phd. ডিগ্রী অর্জন করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ময়ুখই ছিলেন মীর্জার গাইড।

আমার কবিতা নিয়ে Phd. করার বিষয়টাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের সিনেট সহজে ছাড় দিতে রাজী ছিলেন না। প্রফেসর ডক্টর ময়ুখ চৌধুরী আমার কবিতার পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছিল। স্নেহভাজন মীর্জার কাছ থেকে আমি এরকম কথাই শুনেছি।

আমার কবিতার ওপর মীর্জার গবেষণালব্ধ অভিসন্দর্ভের শিরোনাম হলো- “নির্মলেন্দু গুণের কবিতা : বিষয়, বক্তব্য ও অভিব্যক্তি বিচার”।

খুব, খুবই কঠিন নাম। আমার সরল ও সহজপাচ্য কবিতা নিয়ে এরকম একটা কঠিন গবেষণাও যে হতে পারে- কবি ময়ুখ চৌধুরী ও তাঁর প্রিয় ছাত্র মীর্জা আব্দুল্লাহ আমার জীবদ্দশাতেই-, আমাকে শুধু নয়, আমার রামশত্রুদেরও তা বুঝিয়ে দিলেন।

অতঃপর, কবি হিসেবে আমাকে সামান্য ভাবতে যারা ভালোবাসে, তাদেরকে চরম অশান্তিতে রেখে পরম শান্তিতে আমি চোখ বন্ধ করতে পারবো। হা-হা-হা-হা।

প্রফেসর কবি ময়ুখ চৌধুরী, আপনার জন্মদিনে আপনাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বুকটাকে ঋণভার থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত করতে চাই।
আপনি আমার প্রীতি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

ওয়েলডান, ময়ুখ। খুব ভালো একটা কাজ করেছেন। আমি খুব-ভীষণ খুশি হয়েছি।

কামরাঙ্গীর চর,
২২ অক্টোবর ২০২০।

2 মন্তব্য সমুহ

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন