দীর্ঘকবিতা
কবিতা থেরাপি
মুজতাহিদ ফারুকী
পুবাকাশ
কবিতা তো নিরাময়, হৃদয়ের অসুখে ও শোকে।
কবিতা নদীর হাওয়া, হৃদয় পুড়িয়ে গাঁথা শ্লোকে।
কবিতা জাদুর মেঘ, আরশ চোয়ানো ইলহাম
কবিতা পড়ার আগে দিও প্রিয় কবিকে সালাম।
কাব্যপাঠ হবে প্রিয় কবির মাজারে, সমাধিতে
জন্মদিন, ওফাত দিবসে, মৃদুভাষে অথবা ওঙ্কারে
যেমন আয়াত পড়ি, নামাজে মিলাদে, জেয়ারতে।
ফারিগ ক্বারির ঠোঁটে টুংটাং বাজুক কবিতা
সুশ্রুষার শব্দমন্ত্রে উঠুক তুফান কোনও ওঝার জবানে
দেশপ্রেমী সেনানীর মার্চপাস্টে নাচুক তুমুল
দ্রিমি দ্রিমি ড্রামে, বজ্রমেঘে, স্বপ্নখচিত সংগ্রামে।
রোগীর ডায়েটে দিন অবিনাশী প্রেমের কবিতা।
এডিক্টের ট্রিটমেন্টে ড্রাগ নয়, এক দুটো জীবনানন্দ দিলে,
নিঃসন্দেহে সুফল পাবেন।
শুধু বিষ পেয়েছে যে সংসারের সঙ, অন্ধ ঘানি টেনে
নিরানন্দ তাকে দাও আনকোরা, ‘সোনালী কাবিন’।
সিডেটিভ, এনেস্থেসিয়ার উচিৎ বিকল্প হবে ‘তারার তিমির’,
আর
রাতজাগা রোগীদের দাউ দাউ নরক দু’চোখে
সুরের ড্রপারে ঢালো ঠাকুরের দুই ফোঁটা
শান্তি নিকেতনী।
ভিটামিন কম, ভগ্নস্বাস্থ্য? ‘নকশী কাঁথার মাঠে’
থাকুক সে কিছুদিন অথবা ‘সুচয়নী’ স্বাস্থ্য নিবাসে।
‘অগ্নিবীণা’র সুর কানে কানে শোনাও ভীরুকে।
রংহেড মাফিয়ার নিষিদ্ধ শহরে যারা অসময়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে, তাদের জাগাতে রীতিমতো ধন্বন্তরি হবে
দূরদর্শী ‘বিষের বাঁশীটি’।
কবিতা স্পর্শকাতর খুব তাপে- ঠান্ডা ও আর্দ্রতামুক্ত রাখুন,
নিরাপদ রাখাও জরুরি, নারী পাচারীর চেয়ে অধিক খবিস
বখাটে বেনের পদক-বাণিজ্য থেকে।
কবিতা নদীর খোলা হাওয়া, পুষ্টিকর শিশুদের
শরীর ও মনের বিকাশে, রাখবেন হাতের নাগালে।
তবে, অভিজাতদের পাতে না দেয়া উত্তম
জানেন তো, সব পেটে হজম হয় না ঘৃত, সব পেটে দুধ।
কবিতাও কখনও গুরুপাক, বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপও।
কবিতা তো নিরাময়, কবিতা নদীর খোলা হাওয়া
হৃদয় পোড়ানো শিখা, আরশ চোয়ানো ইলহাম।
আমরা কবিতা পড়বো মসজিদে, সিঁড়িতে, মিনারে,
বাজে না কি কবিতাই দিনে পাঁচবার,গম্বুজে, মিম্বরে?
সুরের মহান জাদুকর, মিয়া তানসেন (শ্রদ্ধা, ছুঁয়েছি কান)
প্রথম আজান থেকে তুলে এনে অমরার সুর
বেঁধেছেন কালজয়ী বিলোয়ালী রাগ, অলীক সেতারে।
সে সুর শুনেছি নম্র মালকোষে, মনকাড়া ইমন কল্যাণে।
১৬.১০.২০২১ শনিবার।
মুজতাহিদ ফারুকী : কবি-কথাশিল্পী-সিনিয়র সাংবাদিক।