চেনা অন্ধকার।। সাবিনা পারভীন লীনা।। পুবাকাশ
সুমনা কলেজ থেকে ফিরে ড্রয়িংরুমে মাথায় ঘোমটা দেয়া এক মহিলা আর এক ছেলেকে দেখতে পেলো।কৌতুহল বশত সে মহিলার মুখটার দিকে তাকাতেই মনে হলো,কোথায় যেন দেখেছিল আগে।মনে করার চেষ্টা খুব বেশি না করে এপ্রোন খুলতে খুলতে নিজের ঘরের দিকে গেল।এই বিকেলে মাকে ঘরে দেখে বললো-তোমার শরীর ঠিক আছে,মা?মেহেরুন্নেসার মুখ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো।ভাত তরকারি সবকিছুই পরিমাণে কম।অতিথিরা দুপুরে খেয়েছে, কিন্তু তারজন্য খাবার রাখবেনা,এমনটা হয়নি কখনো।রান্নাঘরে ঢোকার মুখে তার নানীর মুখটা দেখেছিল, কেমন থমথমে।তসবিহ গুণছে কপাল কুঁচকে,অন্য কিছু নিয়ে ভাবছে।
হোসনে আরার সময় কাটে এখন জায়নামাজে, কখনো কোরআন শরীফের সামনে,কখনো তসবিহ হাতে।শরীর আর আগের মতো নেই,এই কয়দিনে আরো কু্ঁজো হয়ে গেছে। সারাক্ষন বিছানাতেই থাকে,ভাবে খাট থেকে নিচে নামলেই ময়লা লেগে যাবে।নিজের ছেলেমেয়ে কাউকে বিছানায় বসতে দেয়না,শুধু সুমনা বসতে পারে।ধুলোবালি না ঢোকার জন্য দরজা জানলা বন্ধ করে রাখে সারাদিন।তার ঘরে আলোর চেয়ে অন্ধকারের দাপট যেন বেশি।
সন্ধ্যার পরপর তার দুই মামা এলো।সবার জন্য তাকেই চা নাস্তা বানাতে হলো।রাগ সামলাতে না পেরে মাকে বলেই ফেললো-রহিমা খালাকে আজই ছুটি দিতে হলো তোমাদের,, আমার যে পরশু পরীক্ষা কারো হুশই নেই।নানী তার রাগ টের পেয়ে বললো,একটা দিন কষ্ট করো।কাল রহিমা দশটার ভেতর চলে আসবে,তার মেয়ের কাছে গেছে।কথাটা শেষ করে হোসনে আরা বেগম দ্রুত তসবিহ হাত থেকে বিছানার জায়নামাজে রেখে দিল।মামাদের একসাথে আসা,রহিমা খালার হঠাৎ ছুটি,ড্রয়িংরুমে বসা দুজনের প্রতি বিশ্রী রকমের অমনোযোগ সবকিছু তার কেমন অস্বাভাবিক ঠেকলো।এই অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে তাড়াতাড়ি বের হতে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।ব্যাগে সেল্ ফোনটা বাজছে অনেকক্ষণ ধরে।হাতে নিয়ে দেখে আবিদের মিসড্ কল তিনটি।সাইলেন্ট মুড করেই বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো মোবাইলটা-“ফালতু, আর ভাল্লাগেনা। আর কোন কাজ নেই যেন আমার,সারাক্ষণ জবাবদিহিতা!
স্বামীর মৃত্যুর পর হোসনে আরা বেগম সন্তানদের কারো সাথে গ্রাম আর শহরের জায়গাজমির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে কোন কথা বলেনি।এই নিয়ে দুই ছেলের মনে কয়েকদিন ধরে অসন্তোষ ও ছিল। কিন্তু মায়ের সামনে মুখ খুলতে সাহস করেনি।আজ বড় বোনের ফোন পেয়ে কিছুটা আভাষ পেয়েছে, কি কারণে তাদের জরুরী তলব।এটাও জেনেছে যে মনিরুল আর তার মা মিনুর কি কারণে আগমন।কি করে তাদের মোকাবিলা করতে হবে সেই অস্ত্রেও শান্ দিয়ে এসেছে।তারা দুই ভাই ভালো অবস্থানেই আছে।একজন ব্যাংকের জি এম অন্যজন নামী এন জি ওর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।বাবার আমলের এই পুরানো বাড়িতে তারা থাকেনা।স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকে।
বড় বোন মেহেরুন্নেসা তার মেয়ে নিয়ে বিয়ের দুবছর পর থেকেই মায়ের সংসারে,স্বামীর সাথে বনিবনা হয়নি কোনকালে।সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা করে,মা মেয়ে দুজনের চলে যায়।খাওয়াদাওয়ার খরচ তেমন দিতে হয়না তাকে।সুমনার বেশিরভাগ খরচ তার নানী দেয়।তার নিজের টাকার বড় একটা অংশ মেয়ের বিয়ের জন্য জমান।স্বামীর কাছ থেকে কিছুই আশা করেনা।মাঝেমধ্যে মেয়েকে দেখতে আসে নিজাম,ব্যস এইটুকুই।সুমনাকে নিয়ে মায়ের কাছে চলে আসার এক বছরের মাথায় দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছিল। তাও টেকেনি বেশিদিন, ডিভোর্স হয়ে গেছে।বিয়ে আর করেনি সে,তবে মেহেরুন্নেসা জানে নারী ছাড়া তার চলেনা।
অবসর পেলে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে আড্ডা দেয়,গান শুনে,বই পড়ে।মেয়েকে নিয়ে চলে আসার পর সামাজিক বিড়ম্বনা সয়েছে অনেক।ভেঙে পড়েছে কখনো আবার উঠে দাঁড়িয়েছে।নিজের মন নিজের শরীরের অনেক অপূর্ণতা নিয়ে জীবনের সাথে একধরণের বোঝাপড়া করে নিয়েছে।তার মা তার কাছে বড় আশ্রয়।কখনো স্বামীর কাছে ফিরে যেতে তাকে চাপ সৃষ্টি করেনি।মেয়ের মনের খবর তিনি রাখেন।শারমিন,বিথী, উমার সাথে শেখর, জহির ও আসে মাঝমাঝে এখানে,সারা সন্ধ্যা গল্প করে।সুমনা ছোট থেকেই এদের চেনে,জানে।শেখর মামাকে তার অনেক ভালো লাগে।ভালো গান করেন,ছবি আঁকেন।তাকে ছবি আঁকতে শিখিয়েছে সেই ছোটবেলায়।
সুমনা ঘন্টাখানেক বিশ্রামের পর দরজা খুলে বাইরে আসে।ড্রয়িংরুমে কেউ নেই,নানীর ঘর থেকে তার ছোট মামা সাজেদুল হকের কণ্ঠ ভেসে আসছে।—তোমার সাহস তো কম না,মিনু।তোমাকে এখানে আসার বুদ্ধিটা কে দিল?আমাদের একটা সম্মান আছে এখানে,তোমার মতো বেয়াদব মেয়েছেলে জীবনে আর একটিও দেখিনি।এতো লোভ কেন তোমাদের।কি ভাবছো,ছেলে একটা ধরে নিয়ে এসে বললেই,আমরা বিশ্বাস করবো?বলতে বলতে চেয়ার ছেড়ে মারমুখী ভঙ্গীতে কয়েক পা এগিয়ে আবার পিছু হটলো।মায়ের বড় বড় চোখ তাকে নিবৃত্ত করলো।
কণ্ঠস্বরকে মধ্যমে রেখে বড় মামা রাকিবুল বলে উঠলো,–আপা কিছুই বলোনা কেন?সাজুর কাছে আমরা অনেক কথা গোপন করেছি,ঠিক হয়নি।তুমি এখন কি ভাবছো,এটার ফয়সালা কি করে করবে?
মিনুর কথা কিছুই বুঝতে পারছেনা সুমনা,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার স্বরে আকুতি ঝরে পড়ছে।আমার মনিরুল,আমার মনিরুল শব্দ দুটোই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে শুধু।
মেহেরুন্নেসা এতোক্ষন চুপচাপ শুনছিল,সমস্ত মনোযোগ মিনু আর মনিরুলের দিকে। আর তার মাকে দেখছিল মাঝেমাঝে,বেশ গম্ভীর হয়ে আছে হোসনে আরা।মায়ের এমন গম্ভীর রূপ দেখে মনে পড়লো সেই দিনগুলোর কথা,যখন তিনি তাদেরকে পাটিগণিত করাতে বসাতেন।কী অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে এস,এস,সি পর্যন্ত পড়িয়েছেন সব বিষয়। সংসারের সকল কাজে তার ছিল গভীর মনোযোগ। শুধু একটা মানুষের দিকে তেমন মনোযোগ ছিলনা কখনো।মা আর বাবার মধ্যে কখনো উচ্চস্বরে কথা হতেও শুনেনি সে।তবু কেমন একটা উদাসীনতার নদী বয়ে গেছে সবসময় দুজনের মাঝখানে।এই নদীর উৎস কোথায়,জানা হয়নি কখনো তার।বাইরে থেকে কতোটা জানতে পারে মানুষ আরেকজন মানুষ সম্পর্কে।এক ছাদের নিচে একটা সম্পর্কের ভেতর থেকেও আলাদা হয়ে পড়ে মানুষ।একই কক্ষপথে অবস্থান করতে করতে একসময় ছিটকে পড়া গ্রহদের মতো।
বাবার ব্যাপারে নির্লিপ্ত থেকে থেকে আজ এই সমস্যার উৎপত্তি হয়তো।হয়তো মিনুকে তার বাবার অসুস্থতার সময় ঘরে আনাটা ভুল ছিল।হয়তো….।আর বেশি ভাবতে পারছেনা এখন।মনিরুল কে কাছে ডেকে কিটকেট এর একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে বললো-যাও,পাশের ঘরে সুমনা ফুফু আছে,তার কাছে গিয়ে বসো।
হ্যাঁ,ভুলতো হয়ে গেছে,কার ভুল কেন ভুল এখন এসব নিয়ে কথা বলা অবান্তর।মেনে নিতে না পারলেও মেনে আমাদের নিতে হবেই।আর একটা কথা সাজুকে বলতে চাই,কোন ব্যাপারে ভালো করে কিছু না জেনে মন্তব্য করার অভ্যাসটা তোমার আজো গেলোনা।মানুষের উন্নয়নের কথা বলে অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেদের উন্নতি বেশ ভালোই করছো।মানুষ নিয়েই কারবার করো আবার সেই মানুষকেই অসম্মান করো।মিনুর প্রতি তোমার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে খুবই কষ্ট পেলাম,এমনটা আশা করিনি।আর ‘মেয়েছেলে ‘-এটা কি ধরণের শব্দ,ছিঃ ছিঃ!
সাজেদুল দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে হোসনে আরার পাশে গিয়ে বসলো বড় বোনের কথার চাবুক থেকে বাঁচতে।ছোটবেলায় এমনটাই করতো,মা বকুনি দিলে বোনের কাছে আর বোন বকুনি দিলে মায়ের আঁচলের নিচে।
–আচ্ছা আপা,ভুল হয়ে গেছে।কয়েকদিন ধরে খুব ঝামেলা যাচ্ছে অফিসে,মাথার ঠিক নেই।এরমধ্যে এইসব কথা শুনে…..
-বাবার ফাতেহায় বাড়িতে অনেকের কথাবার্তায় এসব বিষয়ে বলতে শুনেছি,কেন জানি মানতে পারিনি তখনো।তোমাদের কারো কাছে জানতেও চাইনি।
নিজের মতো করে বুঝে নিয়েছি আর মনের মধ্যে একটা
রাগ পুষে রেখেছি দিনের পর দিন।অফিস থেকে আসার
পথে ভাইয়া সবকিছু বলেছে।
ঠিক আছে,সংযত হও তাহলে।
–মিনু আর মনিরুলের দায়িত্ব এখন আমাদের,বাবা আজ নেই।থাকলে ওদের কি দিতে হবে,কতটুকু দিতে হবে-তা তিনিই ঠিক করতেন,কি বলেন মা, আমি কি বেঠিক কিছু বলেছি?
দীর্ঘ একটা নি:শ্বাস ফেলে মিনুর দিকে তাকালো কয়েক সেকেন্ড, তারপর ছেলেমেয়ের দিকে।তোমরা অস্বীকার করলেও মিনু আর তার ছেলে এখন এই পরিবারেরই অংশ। তাদেরও খেয়ে পরে বাঁচতে হবে।শরীয়ত মতে যতটুকু পাবে,ভাগ করে দিয়ে দাও।তাদের ঠকালে আমি কবরে গিয়েও শান্তি পাবোনা,আর তোমরা তিন ভাই বোন এই দুনিয়ায় এক দিনের জন্যও শান্তি পাবেনা।এই শিশুর কোন দোষ নেই,তাকে তোমাদের বাঁচতে দিতে হবে।
মিনুর দিকে তাকিয়ে তার মায়া হলো,কতো আর হবে বয়স-পঁচিশ কি ছাব্বিশ।সেই বিকেলটার কথা মনে পড়লো তার।ঘরে তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ ছিলনা।স্বামীর ঘরে খুব একটা ঢুকেনা,গত একমাস যাবত মিনুই সব করছে।খাওয়ানো,বাথরুমে নিয়ে যাওয়া,ঘড়ি ধরে ঔষধ দেওয়া, গোসল করানো সব।অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে খালেক সাহেব।মিনুর যত্নে এখন হাত পা সচল হয়েছে আগের চেয়ে।সেদিন কী একটা কথা স্বামীর সাথে আলাপ করতে গিয়েও দরজা থেকে তাকে ফেরত আসতে হলো।এ কী দেখলো বিছানায়,নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না হোসনে আরা।ঘরে আবার ঢুকে চুল ধরে টানতে টানতে রান্নাঘরে নিয়ে কী বেধড়ক মারটাই না দিল মিনুকে।মার খেতে খেতে বারবার একটা কথাই বলে গেছে ‘আপা আপা…আমাকে জোর করেছে,আমাকে ভয় দেখিয়েছে দুলাভাই,আমি মানা করেছি আপা’।স্বামীকে যা করতে পারেনি,অসহায় মেয়েটির উপর ইচ্ছেমতো তার শোধ তুললো সেদিন।পরদিন বাসের টিকেট ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল।বিশ্রী ঐ দিনটার পর মিনুর সাথে আর দেখা হয়নি তার।
মনিরুল কখনো শহরে আসেনি,জানালায় দাঁড়িয়ে আশেপাশের বিল্ডিং দেখছিল।সুমনার পড়ার টেবিলের কাছে এসে বললো -তুমি এই বাড়িতে থাকো,তোমার বাবা-মা কি এখানে থাকে?আমার বাবা নাই,মা বলেছে এটা আমার বাড়ি এখানে বড় মা আছে দুইটা ভাইয়া আর আপাও আছে,ঐ ঘরের ওরাই কি আমার ভাইবোন।আমরা কি এখন একসাথে থাকবো?
সুমনা তার কথা সব শুনে গেল মন দিয়ে,সাত বছর আগের কয়েকটা দিন দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টে সামনে এসে গেল।ছেলেটার কপাল নাক মুখের গড়ন একেবারে তার নানার মতো-খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ।
মিনুকে যখন বাড়িতে পাঠালো,তার মাস তিনেক পর গ্রাম থেকে একজন বয়স্ক লোক এসে প্রথমে তার নানী তারপর তার নানার সাথে দরজা বন্ধ করে ঘন্টাখানেক কথা বলেছিল।লোকটা চলে যাওয়ার পর, নানার ঘরের সমস্ত জিনিষ নানী ফেলে দিয়েছিল পাশের খোলা ছাদে।ছোট মামা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিল সেদিন।বড় দু’সন্তান কে ডেকে বললো -তোমাদের বাবাকে এখনই চলে যেতে বলো,আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যেতে বলো।বুড়া বয়সে তাকে শয়তানে পেয়েছে।
সেদিনই নানা গ্রামে চলে গিয়েছিল।আর নানী সারা দিন তার ঘর থেকে বের হয়নি।ঘরে কয়েকদিন গুমোট আবহাওয়া ছিলো।কেউ কারো সাথে কথা বলেনা।কাজ শেষে ঘরে ঢুকে যে যার রুমে,একজন অন্যজনের কাছ থেকে মুখ লুকায়।
এক রাতে বড় মামা আর মায়ের আলাপের অনেকটা সুমনার কানে এসেছিল।গ্রাম থেকে আসা হাশেম মিঞা সম্পর্কে মিনুর চাচা হয়।তার বাবা -মা ছোটবেলায় মারা গিয়েছিল, হাশেম মিঞা আর তার স্ত্রী জোহরা তাকে দেখেশুনে রেখেছে এতোদিন।হোসনে আরার অনুরোধে মিনুকে আনা হয়েছিল তার নানার সেবা করতে।
মারধর করে গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ার একমাস পর জোহরাই বুঝতে পারে আগের মিনু আর এই মিনুর ভেতর আকাশ পাতাল পার্থক্য।লোকজন বুঝে উঠার আগেই স্বামীকে পাঠায় শহরে।
মিনু সন্তানসম্ভবা হওয়ায় নানার উপর বিয়ের চাপ আসে।আবার বিয়ে করতে বাধ্য হয়।শহরে আর আসেনা নানা,নতুন বউ নিয়ে সংসার করছে।বৃদ্ধ বয়সে খাতির যত্ন ভালোই পাচ্ছে,সাথে কামনা বাসনা ও তৃপ্ত হচ্ছে।
সুমনা এসব বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কাউকে আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি কখনো,এমনকি তার মাকেও নয়।মানুষের যা কিছু গোপন যা কিছু লজ্জার তা নিয়ে কথা বলাটা সুমনার অপছন্দ। এর বেশি জানার কী আছে, দরকারই বা কী খুঁচিয়ে ঘা করার?
নানীকে যতো দেখে ততোই অবাক হয়।কি করে পারে নানী,সব ভুলে থাকতে!কঠিন ব্যক্তিত্বের আবরণে ঢেকে রাখে নিজের সমস্ত আবেগ,ছোট ছোট চাওয়া।মাকেও দেখছে সে দিনের পর দিন।তার মায়ের অবস্থান হয়তো কিছুটা ভিন্ন,তবু দিনশেষে দুজনই এক।নিজের জীবন নিয়েও আজকাল ভেবে কূল কিনারা পায়না সুমনা।এই দু’বছরে আবিদ কেমন পাল্টে গেছে,সব ব্যাপারে খবরদারি দেখায়।এমনসব আচরণ করে,সে যেন তার সম্পত্তি।মাঝে মাঝে দম্ বন্ধ হয়ে আসতে চায়।ইচ্ছে করে সব সম্পর্ক চুকে বুকে দিয়ে নিজের মতো বাঁচে।
হোসনে আরার সময় কাটে এখন জায়নামাজে, কখনো কোরআন শরীফের সামনে,কখনো তসবিহ হাতে।শরীর আর আগের মতো নেই,এই কয়দিনে আরো কু্ঁজো হয়ে গেছে। সারাক্ষন বিছানাতেই থাকে,ভাবে খাট থেকে নিচে নামলেই ময়লা লেগে যাবে।নিজের ছেলেমেয়ে কাউকে বিছানায় বসতে দেয়না,শুধু সুমনা বসতে পারে।ধুলোবালি না ঢোকার জন্য দরজা জানলা বন্ধ করে রাখে সারাদিন।তার ঘরে আলোর চেয়ে অন্ধকারের দাপট যেন বেশি।
সাবিনা পারভীন লীনা : কবি ও কথাশিল্পী।
দারুণ লিখেছেন।
ভীষণ লাগল
অশেষ কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা জানবেন।