দু’টো কবিতা।। লুইস গ্ল্যুক।। আবু মুসা চৌধুরী অনূদিত।। পুবাকাশ

শ্রান্তি

পুরো শীত ঘুমিয়েছে সে।
তারপর জেগে ওঠে, সে মুখমুণ্ডণ করে-
একজন মানুষের পুনর্বার ফিরে আসা তা এক দীর্ঘ সময়,
আয়না অন্ধকার চুল সমেত তার কর্কশ মুখ।

পৃথিবী এখন এক মেয়েমানুষের মতো তার জন্যে অপেক্ষমাণ।
এক মহান আশাবাদিতা- যা তাদের বেঁধেছে একত্রে
এই মেয়ে এবং তাকে।

যোগ্যতা প্রমাণে সে এখন সারাদিন কাজের উপযোগী।
মধ্যাহ্নে: সে ক্লান্ত, সে তৃষিত।
কিন্তু এখন ক্ষ্যান্ত হলেই সে মূল্যহীন

তার ঘাড় ও বাহু ঢেকে দেয় ঘাম
যেন তার জীবন উপচে পড়েছে তার ওপর
যার কিছুই বিকল্প হতে পারে না।

সে কাজ করে এক জন্তুর মতোন, অতঃপর
একটি মেশিন-সদৃশ, অনুভূতিহীন।
কিন্তু এই বন্ধন কখনো ভেঙে যাবে না
যদিও গ্রীষ্মের খরতাপে এখন পৃথিবীর যুদ্ধ-

সে কনুই পেতে বসে পায়ের বসে পায়ের পাতায়, আঙুলের কাদা পরিষ্কার করে।

সূর্য ডুবে গেলো। আঁধার আসে।
এখন এই গ্রীষ্ম শেষ, পৃথিবী কঠিন, ঠান্ডা ;
রাস্তায় জ্বলে কিছু নিঃসঙ্গ আগুন।

ভালোবাসার অবশেষ থাকে না,
কেবল বিস্ময় এবং ঘৃণা।

প্রাচুর্য

এক শীতল হাওয়া বয়ে যায় গ্রীষ্মের বিকেকে, উত্তেজক গম
আনত গম, রাত্রির সম্মুখে পিচ গাছের
পত্ররাজির মর্মর।

অন্ধকারে একটি ছেলে পেরিয়ে যায় খেত;
প্রথমবারের মতো একটি মেয়েকে স্পর্শ করে সে
অতঃপর সে হেঁটে যায় একজন মানুষ, একজন মানুষের খিদেয়

খুব ধীরে পাক ধরে ফলে-
একটি মাত্র গাছে ঝুড়ির পর ঝুড়ি
যদিও কিছু পচে যায় ফি-বছর
এবং মাত্র ক’সপ্তাহেই আবার প্রচুর:
আগে এবং পরে, শূন্য।

গমের সারির মধ্যে
তুমি দেখবে ইদুঁরের উচ্ছ্বাস ও ছোটাছুটি
জমির এপাশ হতে ওপাশে, যদিও তাদের ওপর
গমের আগা মন্থন করে যেন গ্রীষ্মের হাওয়া বয়ে যায়

এখন পূর্ণিমা। এক অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে
খেত থেকে- সম্ভবত বাতাস।

কিন্তু ইদুঁরের জন্যে এ রাত গ্রীষ্মের যে কোনো রাতের মতোই
ফল ও শস্য : প্রাচুর্যের এক সময়।
কারো মৃত্যু নেই, কেউ ক্ষুধার্ত নয়।

কোনো শব্দ নেই কেবল গমের গর্জন ছাড়া।

লুইস গ্ল্যুক : ১৯৪৩ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে জন্ম গ্রহণ করেন। লং আইল্যান্ডে তার বয়োবৃদ্ধি। তিনি লেখাপড়া করেন সারাহ লরেন্স কলেজ ও কলম্বিয়া বিশ্বাবদ্যালয়ে। আমেরিকার সাম্প্রতিক গুণবিচারী ও মনম্বী কবিদের অন্যতম তিনি।

প্ৰায়োগিক নৈপুণ্য, সংবেদন ও নৈঃসঙ্গ, পারিবারিক সম্পর্ক, বিচ্ছেদ এবং অন্তদৃষ্টি গ্ল্যুকে কবিতার প্রতিপাদ্য। তার কবিতা সম্পর্কে রবার্ট হাস বলেন, সব চেয়ে খাঁটি এবং চুড়ান্ত গুণান্বিত লিরিক কবিদের একজন ।’  তিনি২০২০ সালে সাহিত্যে নােবেন পুরস্কার পেয়েছেন। তার কবিতা অভ্রান্ত কাব্যিক কণ্ঠ-  যা সাদামাটা সৌন্দর্য সৃষ্টি করে ব্যাক্তিক আস্তিত্বের সর্বজনীনতায়।

লুইস গ্ল্যুক-এর কবিতার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে – ‘দ্য হাউজ অফ মার্শল্যান্ড’, ‘দ্যা গার্ডেন’, ‘ডিসেন্ডিং ফিগার’, ‘আ ভিলেজ লাইফ’ ইত্যাদি।

‘আ ভিলেজ লাইফ’ হলো গ্ল্যুকের সর্বশেষ কবিতার বই। এটি ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় কোনো এক গ্রাম ও গ্রাম জীবন এ কাব্যের মূল উপজীব্য। কবিতাগুলো গ্রামীণ মানুষের সহজ ও কবির ব্যক্তিগত আভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। গ্ল্যুক গল্পের ছলে দারুণ গল্প বলেন। এ কবিতা দু’টো ‘আ ভিলেজ লাইফ’ থেকে অনূদিত।

আবু মুসা চৌধুরী : আশি দশকের খ্যাতিমান কবি ও সম্পাদক। 

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন