গুচ্ছকবিতা ।। খোরশেদ মুকুল ।। পুবাকাশ
১.রেখাটি টানা গেল না
দুঃখটা আজকের নয়
যে বর্ষায় কদম ফুটেনি ঠিক তার আগের কালবৈশাখীর
ধমকা হাওয়ায় দুলতে দুলতে নুয়ে না পড়া পাহাড়ি গাছ–
ফুলে ফুলে সুশোভিত। কিন্তু
ফলের আশায় পার করে দেয়া প্রিয়াত্মার আর্তনাদ কে বা শুনে!
বেকার বর্ষা বলে কিছু নেই কিংবা
পাতা ঝরে গেলেও শীতে মন খারাপ হয় না
অনাগত বসন্তে কৃষ্ণচূড়ার ডাক কাঁপন ধরিয়ে দেয়–
ব্যকুল হৃদয়ে
ভালো ঋতু বলে যাকে জানি সেও মাঝে মাঝে হৃদয়
গুড়িয়ে দেয়
এখন কেউ হরতাল ডাকে না
প্রিয়তম সরকার গঠন করেছে শতভাগ ভোট নিয়ে
ভুলে গেছি হৃদয়ের ক্ষত
জমাটকৃত রক্ত নাড়া দেয় নিঃসঙ্গ রাতে
কাঁদার সুযোগ নেই, ঘুমিয়ে আছে বৈধ কাবিন নামা
ভেবো না ভুলে গেছি ঝুলে থাকা কাফন
সমস্ত কোষ পালতোলা নৌকার মত ভাসিয়ে নেয় সেই চরে
যেটি আজ ডুবতে ডুবতে স্মরণ করিয়ে দেয় অসহায়ত্ব
২.সৃজনশীল বেদনা
ভালো থাকার অভিশাপ দিয়ে আড়াল হওয়া মাছটিও
ফিরে আসে মোহনায়
যেখানে কারও দাওয়াত লাগে না
পূর্বরাগ ছাড়াও হাজির হয় প্রিয়তমা-প্রাক্তন
মিঠাপানিতে লোনাজল আবিষ্কারের কাহিনী এখনও রহস্য
অথচ লোকে বলে অশ্রু নাকি সল্টেড হয়
প্লেজারিজমের ভয়ে আচ্ছন্ন করে টবের চারাগাছ
নেই তাজমহল কিংবা বারো বছরের সাধনায় পাওয়া–
বড়শির ঠোকর
নদীকে বুকে নিয়ে হেঁটে চলা-ই জীবন!
বাসার পাশে যদিও নালা দেখা যায়
আসক্তি আর অভ্যাসের পার্থক্য রেখা বুঝিনি
নিরেট অভ্যাসের মাঝে গড়ে উঠা অকৃত্রিম আসক্তি
একাধিক বর্ণমালায় লেখা হয়েছে স্বচ্ছ দুঃখ!
মারা যাওয়ার পূর্বে একজন কবি অতৃপ্ত হয়ে-ই কালেমা পড়ে!
৩.একটি চিঠির অপেক্ষায়
যাপিত কৃত্রিমতার বাইরে একটি সকালের অপেক্ষায়
পার করেছি দু’দণ্ড বিষণ্ণ বিকেল
লালচে ভোরের দাপটে গলে যাবে কালচে মেঘ
একটি চিঠি উড়ে এসে উড়িয়ে দিবে ধোয়াশা চ্যাট
সম্বিত ফিরে এসে হেঁটে যাব শিশির সিক্ত সবুজ গালিচায়
সূর্য উঠেনি বলে ঘুমিয়ে আছি
জুয়েলারি দোকানে সৌন্দর্য নেই
সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে কামুক তীলে; আলো না দেখা–
এলোমেলো কেশে। শহরের নির্জনতায়
গম্বুজে মুখ লুকিয়ে ভুলে যাই পৃথিবীর প্রার্থনা
ইতিহাস চর্চা করেই কেটে যায় সজীব রাত
জন্মদিনে লিখিত হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট
পৃথিবী ঘুরে না, চাঁদও চলে গেছে পত্রিকার খবরে
দুঃখগুলো ব্ল্যাকহোল থেকে বেরিয়ে আসছে-
পাড়া গাঁ আর নগরের আল ধরে
চিঠি এলে তারা ফিরে পাবে গতি, দুঃখগুলোও
প্রত্যাবর্তনে উন্মুখ
লজ্জা মাড়িয়ে দুঃখ গোজার ব্যর্থ চেষ্টা নিয়ে কলম হাতে এগিয়ে চলে
কালিবিহীন কৃষক
৪. ক্ষুদ্র ঋণ
বাবার শখ জেগেছে একটি গাই নেবে
মা তার সহযোগী
বুধবারে বাবার হাতে টাকাগুলো গুঁজে দিলেন মা!
এখন পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো সাত
কিন্তু বাড়েনি রোজগার
মঙ্গলবার রাতে বাবা-মা’র ঘুম হয় না
পরদিন কার কাছে হাত পাতবে সে নক্সা আঁকতে আঁকতে-ই
কানে আসে পাশের বাড়ির লাতা কুরার ডাক!
এভাবে গেছে দীর্ঘদিন
আমাদের গাই আছে
কিন্তু মা-বাবার ঘুম নেই
আমাদের বাছুর আছে
কিন্তু ঘরের চাল নেই
মা বলে এঁড়ে বাছুর দিলে সংসারে উন্নতি হয়
আমাদের দুর্ভাগ্যের চাকা যেন আর থামেই না
হুড়হুড় করে বড় হলাম আমরা
এখন আর বাবার কোনো শখ নেই!
৫.আকাশমনি গাছ
বর্ণমালা শেখার আগে-
জাতীয় সংগীত আদায় করার পরিণামে
না বলাটা কি খুবই অযৌক্তিক?
তবে ভালোবাসি “আমার সোনার বাংলা”
সবুজের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রক্তাভ সূর্য
প্রিয়াত্মার বুকে কাঁপতে থাকা অবুঝ হৃৎপিণ্ড
রাগান্বিত বৃষ্টি কিংবা সুকোমল লবনাক্ত স্রোত
একে একে নিভে যায় আপন শক্তির টাইমলাইন
তবুও চ্যাটলিস্টের সবুজ বাতি জ্বলে থাকে
এক গোলার্ধ ঘড়ি!
কোনো শব্দ টুক করে ঝরে পড়ে না মেঘমালা গলে
ঘনীভূত হয়, আরও ঘনীভূত হয়
মিশ্রিত হয় স্মৃতির সমস্ত আবর্জনা ; ফুঁসেফুঁসে
সুপ্তাবস্থায় সুযোগ খুঁজে স্বার্থপরতার বীজ
অমতের পানি পেলে জেগে উঠে ফনা তুলে
তবুও বৈঠার হয় না হাতবদল
কুড়েকুড়ে নুয়ে পড়ে স্মৃতির মিনার!
খোরশেদ মুকুল : তরুণ কবি।
বাহ!বেশভালো লিখেছেন।