কবিতায় বঙ্গবন্ধু ।। মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রূপকার ও স্থপতি।তিনি জাতির জনক। বাঙালির অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তিনি সকলের নিকট অত্যান্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। তিনি স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক। বাঙালির অধিকার আদায়ে ও মর্যাদা রক্ষায় তাঁর অবদান প্রবাদপ্রতীম। তাঁর প্রেরণাদীপ্ত এবং পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতার আদলে দেওয়া বক্তৃতা সেদিন বাঙালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছিল।তিনি রাজনীতির কবি। বাংলাদেশের কবিরা তাদের হৃদয়ের সকল মাধুরী মিশিয়ে তাদের কবিতার কুসুমিত শব্দে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছেন।কবিরা তাদের নানা কবিতায় বঙ্গবন্ধু বন্দনায় তৃপ্তি পেয়েছেন গভীর মুগ্ধতায়। অনেক কবির লিখিত কবিতা কালজয়ী হয়েছে। এসব আমাদের অমূল্য সম্পদ।

বাংলা সাহিত্যে শেখ মুজিবকে শিল্প উপাদানে প্রথম পরিণত করেন নির্মলেন্দু গুণ। রাজনীতির কবি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবিত বাঙালির ম্যাগনাকার্টা ছয় দফার মাধ্যমে কবি এতটাই উদ্বেলিত হয়েছিলেন যে তিনি শেখ মুজিবের এই ঐতিহাসিক ভূমিকাকে সমুজ্জ্বল করে রাখতে লিখেছিলেন ‘স্বদেশের মুখ শেফালি পাতায়’ কবিতাটি। কবিতায় কবি শেখ মুজিবের সামর্থ্যের বিপরীতে নিজের সংকীর্ণতার কথা প্রকাশ করেছেন-

আমিও পারিনি ক্লেদ-জর্জর
রক্তের ছাপ ভুবুক্ষার
স্বদেশের বুকে শেফালি পাতায়
রেখে দিয়ে যেতে সুনির্ভর,
সর্গের ধোঁয়া কুয়াশার মতো
পারিনি ছড়াতে আকাশময়
শাণিত-দিনের সোনারঙ রোদে
কখনো পারিনি সচ্ছল চাঁদে উড়তে।
( নিরমলেন্দু গুণ/ ‘স্বদেশের মুখ শেফালি পাতায় বা প্রচ্ছদের জন্য)

একাত্তর এর মার্চ মাসে বাঙালির প্রাণের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তার এক নিদর্শন হিসেবে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শীর্ষক কবিতা। বাংলাদেশের সকল প্রান্তে বঙ্গবন্ধুর ছায়ামূর্তি বিরাজমান। কবি বঙ্গবন্ধুকে বিসুভিয়াসের উত্তপ্ত লাভাস্রোতের সাথে তুলনা করে লিখেছেন-

মুজিবুর রহমান!
ওই নাম যেনো বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান।
বঙ্গদেশের এ প্রান্ত থেকে সকল প্রান্ত ছেয়ে/
জ্বালায় জ্বলিছে মহাকালানল ঝঞ্ঝা অশনী বেয়ে ।
… … … … …
বাঙলা দেশের মুকুটবিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ,
প্রতি বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তক্ত-তাজ।
(জসীমউদ্দীন/ বঙ্গবন্ধু)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। তিনি তাঁর প্রিয় স্বদেশের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠেন। কবি কাজী রোজী তারই একটি মনোগ্রাহী ছবি আঁকেন নিম্নের পংতিমালায়-

সাড়ে সাত কোটি ওড়া বিজয় নিশান নিয়ে
এগিয়ে গেল তদের কাছে
তবু তারা কাঁদলেন-
কাঁদলেন একজন বলিষ্ঠ মানুষ
জাতির পিতা শেখ মুজিব
(কাজী রোজী/ “১৯৭১”)

আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার পশ্চাতে আছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গভীর মমত্বের সঙ্গে কবি তা প্রকাশ করেছেন।

এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে।
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।

আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকন্ঠ থেকে।
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
(সৈয়দ শামসুল হক / আমার পরিচয়)

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির নতুন জাগরণ ও যুদ্ধাহত দেশকে পূনরায় সতেজ হওয়াকে কবি কামাল চৌধুরী বহুমাত্রিক ব্যাঞ্জনায় রূপ দান করে রচনা করেছেন-

তিনি ফিরে আসলেন। তখনও এই আটি রক্তে ভেজা
চতুর্দিকে শোক আহাজারি ধ্বংসচিহ্ন পোড়া গ্রাম বিধ্বস্ত জনপদ
তিনি ফিরে আসলেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতর ফুটে উঠল কৃষ্ণচূড়া
মুকুলিত হ’ল অপেক্ষার শিমুল
শোক থেকে জেগে উঠল স্বপ্ন; রক্তে বাজল দারুণ দামামা
বেদনার অশ্রু রেখা মুছে ফেলে
‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ ব’লে হেসে উঠল
লতাগুল্ম ধূলিকণা ,পরিপূর্ণ দীপ্ত পতাকা।
(কামাল চৌধুরী/ ’১০ জানুয়ারি’)

বঙ্গবন্ধু হত্যায় কবিদের ব্যথা, প্রতিশোধের স্পৃহা, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অজস্র ভালবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা এবং মৃত্যুর পরেও কবি মনে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিকে নির্মলেন্দু গুণ অসীম সাহসিকতার মাধ্যমে পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের বৈরি পরিবেশে রচনা করেছিলেন-

সমবেত সকলের মত আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল
আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

শহিদ মিনার থেকে খসে পড়া একটি রক্তাক্ত ইট
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।…
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসি নি,
আমি আমার ভালবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।
(নির্মলেন্দু গুণ/ ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসি নি’)

মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই মুজিব হয়ে আছেন অমর। হত্যার মাধ্যমে মুজিবকে মুছে ফেলার ঘাতকদের নীলনকশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে মুজিব ঠাই নিলেন বাঙালির হৃদয় মহলে। মৃত্যুর পথ ধরেই মুজিব হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী, জীবিতের চেয়ে অত্যাধিক জীবিত।

আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিল শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সঙ্কটের দিনে
আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তূপে বসে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে কেননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।
(শামসুর রাহমান/ ‘ধন্য সেই পুরুষ’)

বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তকে একটি আনন্দঘন ও কল্লোলিত রূপ দান করেছেন কবি সিকানদার আবু জাফর। স্বাধীন জাতির অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দেশে আগমন করেছিলেন যা কবি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের শৈল্পিক শব্দজাল দ্বারা-

মুক্তিকামী মানুষের শুভেচ্ছার পথে
বাংলাদেশের রাষ্ট্রের জনক
শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে আসছেন বাংলাদেশে
……………………………..
ফিরে আসছেন বঙ্গ ভারতের
সম্মিলিত রক্তস্নাত মহাপুণ্য পথে
বাংলাদেশের মরণ- বিজয়ী মুক্তিসেনানী
ছাত্র-জনতার
করতালি মুখরিত পথে
ফিরে আসছেন তিনি জাতির জনক
সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে
নির্ভয় ভবিষ্যতের স্বপ্নদীপ্ত
নিরঙ্কুশ প্রত্যাশার পথে।
(সিকান্দার আবু জাফর / ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’)

মানুষকে মোহিত করার ঐন্দ্রজালিক শক্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর।৭ই মার্চের বজ্রকন্ঠী ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার নিদর্শন আল মাহামুদ তাঁর ‘নিশিডাক’ কবিতায় চমৎকার ভাষায় উপস্থাপন করেছেন-

তাঁর আহ্বান নিশিডাকের শিস তোলা তীব্র বাঁশীর মত।
প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন ধরিয়ে তা বাজত…
সে যখন বলল, ভাইসব।
অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল।
( আল মাহমুদ/ ‘নিশিডাক’)

বঙ্গবন্ধু তাঁর গ্রাম টুঙ্গিপাড়াতে জন্মগ্রহন ও মৃত্যুর পর সমাহিত হয়ে টুঙ্গিপাড়াকে দান করেছেন এক অপার সম্মান ও মহিমা। কবির চোখে সেই রত্নগর্ভা গ্রামের সৌন্দর্য ধরা পরেছে বারংবার। আর এ নিয়ে নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে কবি মহাদেব সাহা লিখেছেন-

টুঙ্গিপাড়া একটি সবুজ গ্রাম, এই গ্রাম
গাভীর চোখের মতো সজল করুন
আজ সবকুছিতেই উদাসীন বিষন্ন বাউল;…
এখানে এই সবুজ নিভৃত গ্রামে, মাটির হৃদয়ে
দোয়েল-শ্যামার শিসে,
নিরিবিলি গাছের ছায়ায়
ঘুমায় একটি দেশ, জ্যোতির্ময় একটি মানুষ;
টুঙ্গিপাড়া মাতৃস্নেহে তাকে বুকে রাখে।
(মহাদেব সাহা/ ‘টুঙ্গিপাড়া’)

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরেও তাঁর অনুভব খুঁজে পাওয়া যায় ৩২ নম্বরের সেই ঐতিহাসিক বাড়িটিতে। এখানেই মহান নেতা শেখ মুজিব মৃত্যুবরণ করেছিলেন। বাড়িটিকে করেছিলেন জ্বলন্ত ইতিহাসের ও দেশপ্রেমের সাক্ষী। বেলাল চৌধুরীর চোখে-

বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস খুঁজতে গেলে
যেতে হবে বত্রিশ নম্বর
বাংলাদেশ ও বাঙালির গৌরব দেখতে হলে
যেতে হবে বত্রিশ নম্বর
বাঙালি ও বাংলাদেশের স্থাপত্য ইতিহাস জানতে হলে
পাতা উল্টে দেখতে হবে বত্রিশ নম্বর
বত্রিশ বলতে একটি সড়ক
যার মাঝে গাছপালা ঘেরা একটি ভবন
(বেলাল চৌধুরী / ‘বাঙালির ইতিহাস’)

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাঁর লাশ পড়েছিল বত্রিশ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে । সেই সিঁড়ি বেয়ে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্ত ভিজিয়েছে সারা বাংলার মাটিকে , রক্তরঞ্জিত করেছে স্বদেশের মানচিত্রকে । কবি রফিক আজাদের ভাষায় –

এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে–
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে ।…
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে প’ড়ে আছে
বিশাল শরীর……
( রফিক আজাদ/ ‘ এই সিঁড়ি’)

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা তখা স্বদেশের প্রতি আঘাত করেছে যে সব ইউনিফর্ম পরিহিত বাঙালি পরিচয়ধারি কতিপয় বিপদগামী দানবরূপী মানুষেরা তারা দেশের জন্য, দশের জন্য ভয়ঙ্কর। এদের যারা মদত দিবে ও ক্ষমা করবে বাঙালি জাতির কাছে তাদের কোন ক্ষমা নেই। তারাও বাঙালির চোখে সমান অপরাধী ও দেশদ্রোহী। বঙ্গন্ধুকে হত্যার কারনে বাঙালির মনের ঘৃণা ও প্রতিশোধের আগুনের কথা জানান দিয়ে শহীদ কাদরী রচনা করেন-

বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোনো উপমায় তদের গ্রেপ্তার করা যাবে না
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের কথাও হয়েছিলো,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
-এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না, কোনোদিন।
(শহীদ কাদরী/ ‘হন্তারকের প্রতি’)
আসাদ চৌধুরী তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন এভাবে-

যে ঘাতক তোমার সুবিশাল ছায়াতলে থেকে
কেড়ে নিলো তোমার নিঃশ্বাস-
শিশুঘাতী, নারীঘাতী ঘাতকেরে যে করিবে ক্ষমা
তার ক্ষমা নাই-
আমরণ অনুগত,
তোমারই অবাধ্য হবো আজ
পিতা, অনুমতি দাও!
(আসাদ চৌধুরী/ ‘পিতা,অনুমতি দাও’)

খুনিরা ও তাদের মদতদাতারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষান্ত হয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার সর্বাত্মক প্রয়াস চালায়। সকল বইয়ের পাতা থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলার চেস্টা চলতে থাকে। তাইতো কবি মনের ব্যথা ও তীব্র হাহাকার ‘জাতির পিতা’ কবিতায় লক্ষণীয়-

বাঁশ বাগানের মাথার উপর
চাঁদ উথেছে ওই,
মাগো আমার বাংলাদেশের
জাতির পিতা কই?
পাইনা খুঁজে বইয়ের পাতায়
মিথ্যে দিয়ে ঢাকা,
তারই জন্য মাগো আমার
বুকটা করে খাঁ খাঁ।
(আসলাম সানী/ ‘জাতির পিতা’)

শেখ মুজিবুর রহমান মিশে আছেন বাংলাদেশের প্রকৃতির সাথে। তাঁর নাম ও তাঁর অনুভব নদীর পানির মতই সদা সতেজ ও কল্লোলিত। তিনি তাঁর কৃীর্তির কারণে অমর হয়ে বিরাজমান থাকবেন এ নদীমাতৃক দেশের মাঝে।কবিতার পঙতিতে-

যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা
গৌরী,যমুনা, বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অস্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
(অন্নদাশঙ্কর রায়/ ‘ছড়া’)

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা বাঙালি কখনই মেনে নিতে পারে নি। তাদের অন্তরে প্রবল ক্ষোভ ও প্রতিশোধের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। কবি সমাজ তা অবলোকন করেছে গভীর অন্তর চক্ষু দ্বারা। তাঁর প্রমাণ আবদুল গাফফার চৌধুরীর এ কবিতা-

রক্তে বাজে প্রতিশোধ! পিতা, আমি প্রতি পলে
ধূর্ত বেড়ালের মতো প্রাসাদের সতর্ক ছায়ায়
সুযোগের প্রতীক্ষায় হেঁটে ফিরি, উন্মাদের বেশে
এড়াই সন্দেহ; নিদ্রাকে
চিরশত্রু করেছি. দুর্লভ প্রেমকেও অবৈধ অশ্রুর সাথে নিরুদ্ধ করেছি
অন্ধকারে!
রক্তে বাজে প্রতিশোধ! প্রতিটি স্নায়ুর
ক্ষুধার্ত চিৎকারে, দাঁতের প্রতিটি
উন্মুক্ত কামড়ে উচ্চারিত শিরাদের ক্ষোভে
শরীরময় রক্তকণাদের বন্যতায়
বিনিদ্র চোখের মতো দ্যাখা শুধু প্রতিশোধ জ্বলে।
(আবদুল গাফফার চৌধুরী/ ‘বঙ্গবন্ধুকে’)

জাতীয় ক্রান্তিকালে কবি মনে করেন বাঙালি তাঁর মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে অন্তরে ধারণ করে অগ্রযাত্রার পথের বাঁধা-অভিশাপের বিরুদ্ধে আকুতোভয় বীরের বেশে আবির্ভাব হবে। তাদের চেতনায় থাকবেন শেখ মুজিব। আর এভাবে বারবার ইতিহাস থেকে বর্তমানে শেখ মুজিবের আসা যাওয়া অব্যাহত থাকবে।

আবার আসবে এক মহান প্লাবন
জন্ম নেবে আর একবার
শেখ মুজিবর
ইতিহাসের প্রগতি রুদ্ধ করে শক্তি আছে কার
মানুষের অগ্রযাত্রা বন্ধ করে সাধ্য আছে কার
মানুষ জাগবে ঠিক
পুনরায় জাগবে মানুষ
( আনিসুল হক/ ‘মানুষ জাগবে ফের’)

কবি আনোয়ারা সৈয়দ হকের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন উঠোনে ছড়ানো একটি নকশিকাঁথা যার প্রতিটি বুননে বেঁধে গেঁথে রাখা আছে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষর। স্বাধীন বাংলাদেশ মানেই শেখ মুজিব আর শেখ মুজিব মানেই স্বাধীন বাংলাদেশ।-

মনে পড়ে বন্ধু সেই স্বাধীনতার দিনগুলো
উঠোনের বিস্তারিত চন্দ্রিমায় পেতে রাখা
সেই নকশিকাঁথা
আর সোনালি অক্ষরে গেঁথে রাখা
একটি অবিনাশী নাম
শেখ মুজিবুর রহমান?
(আনোয়ারা সৈয়দ হক/ ‘মনে পড়ে বন্ধু’)

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে স্ফুলিঙ্গের ন্যায় ছড়িয়ে পড়েছে যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে মানব দাবানল। আর এই মানব দাবানল থেকেই পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই ৭ই মার্চের ভাষণের মহাত্ম ঘোষণা করে লিখেছেন-

স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল
দাবানল থেকে বাংলাদেশ

উত্তাল মার্চের সাত
পথগুলো নদী। নামে মানুষের ঢল।
মানবতরঙ্গ। নিরন্তর স্রোতধারা।
হৃদয়সমুদ্রে গিয়ে মেশে।
একই স্বপ্ন জ্বলে উঠা পুঞ্জীভূত চোখে।
(আবু হাসান শাহরিয়ার/ ‘নক্ষত্রমানব’)

সকল বাঙালি মনের স্বাধীনতার স্বপ্ন সমুজ্জ্বল ছিল জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হৃদয়ে-

আমাদের স্বপ্নেরা বেঁধেছে বাসা সুনিবিড় সেই একটি হৃদয়ে।

জলধি, বনানী আর নদী
অবিরাম লিখে চলে একটি নামের চিরভাস্বর কবিতা
বাংলাদেশ জুড়ে আঁকা সেই নামঃ
শেখ মুজিবুর রহমান।
(কায়সুল হক/ ‘তিনি এবং আমাদের স্বপ্ন’)

কবির চোখে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার আকাশের সুনীলে বিরাজমান। আর তাই মৃত্যুর পরেও তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী অস্তিত্বকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই-

তোমার স্বপ্নের সুনীল আকাশে এখন
বজ্র শপথ নিয়ে উড়ছে এক নতুন পতাকা
উড়ছে এক ঝাঁক শ্বেত কপোত-কপোতী
উড়ছো তুমি, তোমার স্বপ্ন, আর
তোমার স্বপ্নের সোনার বাঙলা
সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাঙলাদেশ
হে কল্যাণমুখী জনক, তোমাকে অস্বীকার করবে কে?
(তিতাশ চৌধুরী/ ‘তোমাকে অস্বীকার করবে কে?’)

বাঙালির রক্তক্ষয়ী নয় মাস যুদ্ধের শেষে স্বাধীন জাতি তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত ছিল। আর এ অপেক্ষা কবি মন প্রকৃতির মাঝে অনুভব করেন-

তুমি আসবে বলে বাংলাদেশ হাজার বছর
প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছে।

তুমি আসবে বলে মানস-সরোবর হাজার নদীতে
পবিত্র জল ঢেলে বিধৌত করেছে গঙ্গা-ঋদ্ধির পুণ্যভূমি।
তুমি আসবে বলে অঙ্গ অঙ্গ সমতট হরিকেল পুণ্ড্র কি বরেন্দ্র মিলে
সৃষ্টি করেছে সমুদ্রাত বিস্ময় ব-দ্বীপ।
(নূহ-উল-আলম লেলিল/ ‘মুজিব মানেই বসন্ত-উৎসব’)
কবিতার মাধ্যমে কবি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের করেছেন অভিসম্পাত। এই অভিশাপ থেকে খুনিরা কখনোই নির্বাণ লাভ করবে না-

যতই মোছাও, এই রক্তচিহ্ন কিন্তু মুছবে না!
পিতৃহত্যা ঘাতক-জাতক ঘৃণ্য ছেলের কলঙ্ক তোর
কোনোদিন ঘুচবে না।
এই রক্তের প্রতীক যেন অনাদি অনন্তকাল
কৃষ্ণচূড়া কিংবা শিশিরে মুছবে তুমি
এখন খুনের চিহ্ন! এ ধারনা ভুল!
(নাসির আহমেদ/ ‘পিতার উদ্দেশে’)

পাকিস্তান আমলে বাঙালি জাতিকে দুর্দশা ও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত করতে মহামানবের ন্যায় আবির্ভাব ঘটেছিল শেখ মুজিবুর রহমানের। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা। বাঙালি জাতির পথপ্রদর্শক। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্নে উজ্জীবিত করার নায়ক-

ফুলে ফুলে একটি বাগান সুশোভিত
জোছনাধোয়া রাত্রি হবে বাড়িসুদ্ধ
আমারও তো এমন একটা ইচ্ছা ছিল বাগান করার।
কোনো জঙ্গলের কালনাগটা বিষে ঢেলে যায়
বিষ ঢেলে যায় ঘুরে ঘুরে
লেজের মুঠোয় আটকে রাখে ফুলের সুবাস
কোনো জঙ্গলের স্বাপদ সে এক ছিন্নি করে ফুলের পরাগ
অশ্রুরদ্ধ ফুলের কুসুম অবরুদ্ধ অগ্নিযুগেও!
এই সময়ে সেই সময়ে তুমি এলে স্বপ্ন নিয়ে
স্বাধীনতার মন্ত্র ছিল কন্ঠে তোমার
মুক্ত আকাশ দেখবে বলে ছড়িয়ে দিলে
সুরের ধ্বনি মোহন সরে স্বাধীনতার
জাগলো সবে বাঙালি সব
মুক্ত আকাশ দেখবে বলে।
(আমিনুর রহমান সুলতান/ ‘বাংলাদেশের জনক তুমি বঙ্গবন্ধু’)

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য জাতির অধির অপেক্ষা ছিল। সমুদ্রের ন্যায় কাতরতা ছিল তাঁর দুই কন্যার অশ্রু সজল চোখে। যুদ্ধের শেষে দেশকে হাজারো মহামারী থেকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন ছিল মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অন্যতম সাহসী ও কৌশলী বীর, বাগ্মী ব্যক্তিত্ব । আর এসব নিয়েই এক চমৎকার কাব্যিক রুপে মযহারুল ইসলাম রচনা করলেন ‘তোমাকেই আসতে হবে’ কবিতাটি-

উদ্যানে তুমি আসবে বলে বিজয়মালা হাতে
তার অনন্ত প্রতীক্ষা । তোমার দুই কন্যার চোখে
অতল সমুদ্র। লোনা অশ্রুর ঢেউ উথাল-পাথাল।
ভিখিরীর বেশেই না হয় তুমি এসো
অডিসিউসের মত। স্থবির ধনুক হয়ে পড়ে আছে।
তোমার সাধের বাংলাদেশ। তোমাকের পরাতে হবে
জ্যা, লাগাতে হবে তীর। দারিদ্র্য, ক্ষুধা, মারী, যন্ত্রণা
দাঁড়িয়ে আছে চারপাশে, লোভাতুর একএকটি
রাক্ষস। লুটেরার দল , সন্ত্রাস-দানব
হিংস্র থাবা মেলা আছে। হে অডিসিউস,
ইথাকার মতোই বাংলাদেশে তোমার
বড়ই প্রয়োজন। তোমাকে আসতেই হবে।
(মযহারুল ইসলাম/ ‘তোমাকেই আসতে হবে’)

জাতির মহান নায়ক শেখ মুজিবকে হত্যার মাধ্যমে ঘাতকরা বাঙালি জাতিকে এক অমানিশায় পতিত করে। ছলচাতুরিকে সঙ্গী করে জাতির গৌরবকে কলঙ্কিত করে নিজেদের ভিত্তি গঠন করতে উদ্যত হয়। কবির ভাষায়-

মৌল আঁধার এসে দীর্ঘকাল
ঢেকে রেখে ছিল এই চোখ- তাকাতে পারিনি
দূরে, সূর্যোদয়ও ঢাকা পড়েছিলো বহুদিন
প্রত্যুষের আদি আলো থমকে গিয়েছে দরজায়
সিঁড়িতে আবদ্ধ এই মানুষের চোখ দীর্ঘদিন জাগেনি প্রত্যুষে।
অন্যদিকে কানের পর্দা-ফুটো করে সারাবেলা
মস্তিষ্ক গহ্বরে দিয়ে উগ্র করতালি
তস্করের দল অকস্মাৎ বেদখল করে নেয় জাতির গৌরব।
( বিমল গুহ/ ‘শেখ মুজিবের তর্জনী’)

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রমানের পর্বত সমান ধৈর্য ও মুক্তির সংগ্রাম অবতীর্ণ হওয়ার অদম্য সাহসের কারনেই তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় অক্ষয় হয়ে সোনালি আলোতে উদ্ভাসিত। আর এসবকে নিজ ভাষায় উপস্থাপন করেছেন মোহাম্মদ রফিক তার ‘টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে’ কবিতায়-

ধৈর্য যার নাম, যুদ্ধে যুদ্ধে
ফের বালুমাটির গভিরে
কে ডাকে প্রলয়,

এবারের সংগ্রাম মুক্তির
আলোতে-হাওয়ার ক্ষয়ে ক্ষয়ে
হবে যে অক্ষয়!
( মোহাম্মদ রফিক/ ‘টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে’)

শেখ মুজিব যেমন নিহিত বঙ্গদেশের চির সবুজ স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে তেমনি বিরাজমান বাঙালির ঘরে ঘরে। শেখ মুজিবের প্রতি সহজ সরল বাঙালির মনে রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। আর এসব দিকটি নিজের ‘মুজিব’ কবিতায় অঙ্কন করেছেন রোকনুজ্জামান খান-

সবুজ শ্যামল বনভূমি মাঠ নদীতীর বালুচর
সবখানে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘর।
সোনার দেশের মাঠে মাঠে ফলে সোনাধান রাশি রাশি
ফসলের হাসি দেখে মনে হয় শেখ মুজিবের হাসি।
শিশুর মধুর হাসিতে যখন ভরে বাঙালির ঘর
মনে হয় যেন শিশু হয়ে হাসে চিরশিশু মুজিবর।
আমরা বাঙালি যতদিন বেঁচে রইব এ বাংলায়
স্বাধীন বাংলা ডাকবে:মুজিব আয় ঘরে ফিরে আয়!
(রোকনুজ্জামান খান/ ‘মুজিব’)

বঙ্গবন্ধু ছিলেন নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের কান্ডারী। বাঙালি জাতির শক্তির উৎসের নাম হলো শেখ মুজিবুর রহমান। সেই নামকে মন্ত্রের ন্যায় অন্তরে ধারণ করে সাহসিকতার সাথে মুক্তির পথে যাত্রা করার কথা কবি রবীন্দ্র গোপ বর্ণনা করেছেন তার ‘বাঙালির অপর নাম’ কবিতায়-

ফুলের স্নিগ্ধ মায়ায় আজও বসন্ত নামে ফাগুনে
বিশ্বের নিপীড়িত মানুষ আজও তোমার নামে
জ্বলে উঠে বিপ্লবের আগুনে
তুমি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরী-মহামানব, মহীয়ান,
তোমার নামে মুক্তির মহামন্ত্রে
আজও গেয়ে যাই গান,
তুমি বাঙালির অপর নাম
শেখ মুজিবুর রহমান।
(রবীন্দ্র গোপ/ ‘বাঙালির অপর নাম’)

১৫ আগস্টে রাক্ষসরূপী মানুষের হাতে হত্যা হওয়ার পরেও বঙ্গবন্ধু আজো কোটি মানুষের প্রাণের গহীনে অজস্র শ্রদ্ধায় অবস্থান করছেন। বাঙালি হৃদয় তায় ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে দৈনন্দিন জীবনে সামনের দিকে ধাবমান।

সেই সোশ্যাল ফোর্স
রূপকথার রাক্ষসের মত প্রাণবন্ত
তোমাকে বিনাশের আয়োজনে
ব্যাপৃত ছিলো,
ইতিহাস সাক্ষী।
সেখানেই আমাদের সান্ত্বনা নিহিত,
তুমিও ফিরে আসবে বৈকি
যথামর্যাদার সার্থকনাম, বঙ্গবন্ধু।
তাইতো আজও দৈনন্দিন প্রাণ ধারণ করি।
তাইতো আজ
তুলে নিয়েছি কণ্ঠে তোমার শ্লোগান
জয় বাংলা!
জয় বাংলা!
(শওকত ওসমান / ‘১৫ আগস্টের এলিজি’)

এই বাংলাদেশ যেন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের ।এ বাসভবন হচ্ছে অভয়, বিশ্বাস ও আশার উৎস। কবি
মনজুর-এ-মওলা তাঁর ‘এই বাড়ি’ কবিতায় শব্দশৈলী দ্বারা এসব কথা ফুটিয়ে তুলেছেন-

এই এক বাড়ি
ময়নামতির থেকে, পঞ্চগড় মহানন্দা থেকে,
মেঘ্নার ওপার থেকে, রাঢ়দেশ থেকে,
পেরিয়ে সন্দীপ , হাতিয়ার ঢেউ টুকরো করে,
হাজার-হাজার পাখি একদিন এই-
হাজার হাজার নয়, কোটি-কোটি পাখি-
এই সামান্য বাড়িতে উড়ে আসে। কুলায়ের খোঁজ করে,
খোঁজ করে অভয়ের, বিশ্বাসের খোঁজ করে,
এবং আশার।
(মনজুর-এ-মওলা/ ‘এই বাড়ি’ )

কবি মনীশ ঘটক লিখেছেন-

যমুনা-পদ্মা-মেঘনা-ধলেশ্বরী
বুড়িগঙ্গা-শীতলাক্ষী-সুরমা-কুশিয়ারা
কর্ণফুলী-আড়িয়াল খাঁর
তীর্থসলিল টকটকে লাল
নবোদিত সুর্য কিরণে
চারটি বাংলা হরফে রূপায়িত হয়ে গেছে
মুজিবর।

‘মানুষ’ শীর্ষক কবিতায় কবি মনীন্দ্র রায় বঙ্গবন্ধুর মহিমা প্রকাশ করেছেন-

মুজিব, এই লুপ্ত মহাদেশকে
নতুন করে আবিষ্কার করে
আমাদেরও বুকের মধ্যে ধ্বনিত করেছ তুমি
এক উজ্জ্বল নাম-মানুষ
তুমি ধন্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিদের কাছে অনন্ত প্রেরণা। তাঁকে নিয়ে কবিরা রাশি রাশি পঙতিমালা লিখছেন এবং আগামী দিনেও লিখবেন। জনকের স্বপ্নের রূপায়নে কবিরা বদ্ধ পরিকর। তিনি ইতিহাসের কণ্ঠস্বর।তিনি আদিগন্ত সূর্য।তিনি আকাশমত সুবিরাট বটবৃক্ষ। তাঁর কণ্ঠই যেন কবিদের কণ্ঠ। কবিরা তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ অশ্রুপাত করবে। জাতিকে সংকট থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে লিখিত কবিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতিহাসের প্রতিটি সোনালি ভোরের শুভ সূচনায় কবিরা তাঁকে নিয়ে গেয়ে উঠবে আনন্দগান। বলবে তাঁর স্বপ্নের কথা।তিনি মহামানব, ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। তিনি থাকবেন সকলের স্বপ্নের ভেতর।তিনি তাঁর কীর্তির চেয়ে মহান। কেননা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অথবা বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ এক ও অভিন্ন সত্তায় একাকার। জনকের মুখই আমাদের বাংলাদেশ।

মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা: কবি ও প্রাবন্ধিক।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন