আবদুল কাইয়ুম মাসুদ
৮ হাজার গরম কফিভর্তি কাপ। বিধবাদের পক্ষে তাদের স্বামীদের স্মরণে নৈবেদ্যস্বরূপ; যারা সেব্রেনিসা গণহত্যায় শহীদ হয়েছেন। ১০ জুলাই ২০২০ ইংরেজি সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞের ২৫ বছর পূর্তি হয়েছে। সে উপলক্ষে সেব্রিনিকা স্মৃতি সেন্টারে এ আয়োজন করা হয়।
১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই থেকে ১১ দিন ব্যাপী নারকীয় এ গণহত্যায় হাজার হাজার নারী বিধবা হয়েছেন; বলকান অঞ্চলে। ২০০৫ সালে তাঁদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে, তারা সবচেয়ে বেশি কিসের অভাববোধ করছেন? উত্তরে বেশিরভাগই বলেছেন, ‘স্বামীর সংগে একসাথে বসে কফি পানের অন্তরঙ্গ সময়গুলো’।
তাঁদের উত্তর শুনে বসনিয়ান-আমেরিকান আর্টিস্ট আইডা সেচোভিক গভীর দু;খবোধে জর্জরিত হয়ে ওঠে্ন। তিনি ২০০৬ সাল হতে ‘STO TE NEMA’ [তুমি কোথায় হারিয়েছিলে?] ‘কফি কাপ মেমরিয়াল’ আর্ট প্রজেক্ট শুরু করেন। উল্লেখ্য, গণকবরগুলোতে ৮৩৭২টি লাশ মিলেছিল।
‘কফি কাপে স্মরণ’ শিলপকর্ম প্রকল্পটি প্রতিবছর গণহত্যার দিনটিতে প্রদর্শিত হয়ে চলেছে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে, টরন্টোয়, ইস্তাম্বুলে, জেনভায়, হেগ-এ, তুজলায়, ভেনিসে এবং আরো বহু শহরে।
শিল্পকর্মের মানবিক শক্তির এক অসাধারণ নজির ‘তুমি কোথায় হারিয়েছিলে?’ ‘কফি কাপ মেমরিয়াল’ শিলপকর্ম প্রকল্পটি।
মূলতঃ বসনিয়ার সার্ব সৈন্যরা যখন জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী কর্তৃক নিরাপদ এলাকা বলে ঘোষণা করা স্রেব্রেনিৎসা শহর এবং তার আশপাশের এলাকা দখল করে নিলো, তখনই ঘটেছিল ভয়াবহ সেই গণহত্যা।
১৯৯০ এর দশকের শুরুতে বলকান যুদ্ধ যখন শুরু হলো, তখন একটানা তিন বছর আট মাস ধরে বসনিয়ার সারায়েভো ছিল এক অবরুদ্ধ শহর।
শহরটি ছিল প্রধানত বসনিয়াক মুসলিম অধ্যূষিত। চারপাশের পাহাড়ের আড়াল থেকে যখন সার্বিয়ান বন্দুকধারীরা গোলাগুলি শুরু করলো, শহরের মুসলিম বাসিন্দারা তখন নিজেদের শহরেই জিম্মি হয়ে পড়লেন।
সার্ব বাহিনীর সাথে অস্ত্রের শক্তিতে ডাচ শান্তিরক্ষীদের কোনভাবেই পেরে ওঠা সম্ভব ছিল না। জুলাই মাসের প্রথম দিকে ডাচ সৈন্যদেরকে তাদের নিয়ন্ত্রিত একটা ফাঁড়ি থেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে।
১১ জুলাই, ১৯৯৫ সার্ব বাহিনীর হাতে স্রেব্রেনিৎসার পতনের খবর বিশ্ববাসী জানতে পেলো। তারপর শুরু হলো গণহত্যা। বসনিয়ান সার্বরা মুসলিম পুরুষ ও বালকদের ধরে নিয়ে যেতে শুরু করলো।
সূত্রঃ বিবিসি, রূপান্তর