মূল্যায়ন
ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান:
তিনি কেন অনন্য ও বিরল।। মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত।। পুবাকাশ
ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে প্রথমে মস্কো থেকে লেনিনগ্রাদ এবং পরে তাশখন্দ, দুশানবে, সমরকন্দ, বুখারা ও আশেপাশের আরো অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান সফর করেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক।
তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনকালে অনেক বৈষয়িক উন্নয়ন হয়েছে একথা বলেছিলেন। কিন্তু মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাহীনতায় ম্রিয়মান ও অসুখী মুখাবয়ব দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন।
এরপরে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের শাসনকালে যখন গ্লাসনস্তের কারণে একটা মুক্ত ও স্বাধীন বাতাবরণ তৈরি হল তখন ড. মুঈনুদ্দীন মার্কস ও মার্কসবাদের একটি একাডেমিক ও স্কলারলি পর্যালোচনা বা ক্রিটিক রচনা করলেন। এই ক্রিটিকের প্রেক্ষাপট স্পষ্ট করার প্রয়োজনে তিনি খোদ পুঁজিবাদেরও একটি মূল্যায়ন করেছিলেন। তার এইসব পর্যালোচনা ও সমালোচনার ভিত্তিভূমি ছিল কুরআনে বিধৃত মানব সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থার ঐশী নিদর্শনসমূহ। কুরআনের এই ভাষ্য রচনায় তিনি যে দুজন পূর্বসূরীকে অনুসরণ করেছেন তারা হলেন আল ফারাবি এবং ইবনে খালদুন।
মার্কস ও মার্কসবাদের একাডেমিক পর্যালোচনা ও সমালোচনা ইউরোকেন্দ্রিক জ্ঞানকান্ডের তরফ থেকে অনেকেই করেছেন। পিতিরিম সরোকিন এক্ষেত্রে একজন প্রণিধানযোগ্য গবেষক।
কিন্তু কুরআনের জ্ঞানকান্ডকে প্রয়োগ করে আমাদের দেশে এই একাডেমিক ও স্কলার্লি ক্রিটিক খুব যোগ্যতার সঙ্গে করতে পেরেছেন হাতে গোনা অল্প কয়েকজন। আমি এক্ষেত্রে উল্লেখ করব মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীমের নাম। তার পর্যালোচনা ও সমালোচনা নিঃসন্দেহে ব্যাপক ও বিস্তারিত। তবে তা মওলানা মওদূদীর ইক্কামতে দীন রাষ্ট্র চিন্তার ছায়াতলে সম্পন্ন হয়েছে বলা যায়। আর এই রাষ্ট্র চিন্তা নিজেই এর সমগ্রবাদী অধিমানবিক স্বৈরতান্ত্রিক চারিত্র্যের জন্য ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্যদিকে ড. মুঈনুদ্দীনের ক্রিটিক এমন এক কুরআন ভাষ্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত যা ধ্রুপদী মুসলিম রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞানীদের সমর্থনধন্য। সর্বোপরি এর আধ্যাত্মিক আখলাকি প্রকৃতি একে দিয়েছে এক সূক্ষ্ম সৌন্দর্য ও সুষমা। যা এর অন্তর্গত সামঞ্জস্য ও ঐক্য প্রকাশ করে।
ড. মুঈনুদ্দীনের এই প্রবন্ধের মত একটি প্রবন্ধ কি আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে কথিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপক লিখতে পেরেছেন? পশ্চিমা জ্ঞানকান্ড যারা পড়ান তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম যারা কুরআনী জ্ঞানকান্ড পড়ান তাদের কেউও কি এমন একটা প্রবন্ধ লিখতে পারবেন?
আর এখানেই নিহিত ড. মুঈনুদ্দীনের অনন্য এবং অদ্বিতীয় পরিচয়। তিনি ইলম ও জ্ঞানের সামগ্রিক রূপকে ধারণ করতে পেরেছিলেন। যা আজকাল অত্যন্ত বিরল বা বলা যায় একেবারে দুষ্প্রাপ্য।
মনোয়ার শামসী সাখাওয়াত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।