পুনঃপাঠ

শবে-বরাত।। গোলাম মোস্তফা।। পুবাকাশ

সারা মুসলিম দুনিয়ায় আজি এসেছে নামিয়া ‘শবে-বরাত’
রুজি-রোজগার-জান-সালামৎ বণ্টন-করাপুণ্য রাত।
এস বাংলার মুস্লেমিন
হৃত বঞ্চিত নিঃস্ব দীন,
ভাগ্য-রজনী এসেছে মোদের, কর মোনাজাত-পাতো দু’হাত।

ভান্ডার-দ্বার খুলেছে আজিকে দয়াময় রহমান-রহিম,
বিশ্ব-দানের উৎসব আজি চিরপবিত্র মহামহিম।
শত ফেরেশতা দলে দলে
দিকে দিকে আজি ওই চলে,
নিখিল বিশ্বে একি কলরোল- একি প্রীতি-প্রেম-স্নেহ অসীম!

আকাশ-তোরণে রশন-চৌকি-উৎসব-নিশি আলো-জ্বালা,
ঝালর-ঝুলানো ঝাড়-লণ্ঠন পূর্ণিমা-চাঁদ সুধা-ঢালা।
নীল-ফিরোজার গালিচা-গায়ে
কারুকলা আঁকা কোটি তারায়,
আসন-বিছানো সে মহাসভায় বসিয়াছে খোদ খোদাতালা।

রহমৎ আজি যেতেছে লুটিয়া- কোটি ফেরেশতা ভারে ভারে
খোদার শিরনী ফিরনী-বাঁটিয়া ফিরিতেছে ওই দ্বারে দ্বারে।
মলয়-সমীর সুরভি তার-
নহে এ গন্ধ ফুল-বালার,
বেহেশতী সেই খোশ্-বু যেন গো ভেসে আসে আজ বারে বারে।

ওরে হতভাগা নাদান মূর্খ, তন্দ্রা-অলস মোহ-বিভল,
গাফিল হইয়া রবি কি আজিকে? মহা রজনী যাবে বিফল?
রাজার প্রাসাদে মহাদানের
উৎসব আজি আলো গানের।
রিক্ত কাঙ্গাল যাবি না কি সেথা? পড়ে রবি হেথা চিরটি কাল?

আয় আয় ওরে ওঠে আয় সবে, দলে দলে তোরা আয় ছুটে,
ভাগ্য-সভায় যেতে হবে আজ- শত নিয়ামতনেব লুটে।
নেব নাকো দান খয়রাতি
ভিক্ষুক সব হাত পাতি
দাবী-করা দান লইব আমরা একসাথে আজি সব জুটে।

বলিব আমরা- এয়, খোদা! মোরা কাফের নহি ত- মুসলমান
সারা দুনিয়ায় যুগে যুগে মোরা তোমার মহিমা করেছি গান
তোমারে বল ত চিনিত কে?
চিনায়েছি মোরা লোকে লোকে।
মোরা দলে দলে সৈন্য সাজিয়া উড়ায়েছি তব জয়-নিশান।

তোমার বারতা প্রচার করিতে ছেড়েছি আমরা সুখ-এরেম,
ধরায় ধূলায় আসন পেতেছি ছাড়ি বেহেশ্তি হুর-হেরেম।
হয়েছি তোমার প্রতিনিধি
মানিয়া চলেছি তব বিধি,
তোমার নামের বিনিময়ে মোরা চাহিনি মুকুট-মুক্তা হেম!

পুত্রেরে মোরা কোরবানি দিছি, ফেলিনি অশ্রু-বিন্দু তায়,
দান্দান্ ভেঙ্গে লহু ঝরিয়াছে- লুকায়ে ফিরেছি গিরি-গুহায়।
সহিয়া কত না অত্যাচার
মুক্তি এনেছি ‘খানে কাবার’
পশু সীমারের হস্তে আমরা শহীদ হয়েছি কারবালায়।

শত নিপীড়ন তীব্র-দহন মৃত্যুর নাহিকরি’ খেয়াল
তোমার কলেমা ঘোষণা করেছে- আজান দিয়েছে শত বেলাল।
শবে-বরাত
ছুটেছি আমরা দিকে দিকে
‘কোহ্ কাফে’, অতলান্তিকে
হস্তে লইয়া তলোয়ার আর খঞ্জর-নব আল-হেলাল।

ভ্রান্ত পথিকে দেখায়েছি মোরা তব ‘সেরাতুল মোস্তাকিম্’
‘বোৎপরস্তী দূর করি’ সবে তোমার মন্ত্রে দিছি তালিম।
আলোকের জয়-অভিযানে
যুঝেছি আমরা মনে প্রাণে,
তোমারি হুকুম তামিল করেছি, দীন-দুনিয়ার ওগো হাকিম!

আজিও তোমার সুধার সওদা বিশ্বে আমরা করি ফেরি,
ওই শোন আজি দিকে দিকে তাই তোমার নামের বাজে ভেরী।
জ্বেলেছি নূরের নব শিখা
এশিয়া ইউরোপ আমেরিকা,
আমাদেরি হাতে সারা ধরণীর মুক্তি আসিছে- নাহি দেরি।
এত সেবা আর এত প্রাণপাত- সকলি কি আজ বৃথা হবে?
প্রতিদান কিছু পাব না আমরা? বঞ্চিত হয়ে রব সবে?
হ’য়ে থাকি যদি অপরাধী
তাই ব’লে এত বাদাবাদি?
সবাই মোদের মেরে যাবে, আর তুমি দূর হতে চেয়ে রবে?
হবে না প্রভু হবে না তা- আজি এ মহাদানের শুভ রাতে
আমাদের পানে চাহিতে হইবে করুণ-কোমল আঁখি-পাতে।
করে যারা তব অসম্মান
তাহাদের দাও কত না দান।
আমাদের কি গো নাই অধিকার তব প্রেম-সুধা-করুণাতে?
বল, কথা দাও, সাড়া দাও আজি, জবাব দাও এ প্রার্থনার,
যদি নাহি দাও- খাবো না আমরা আজি এ ফিরনী-রুটি তোমার।
না জাগে আজিকে যদি এ জাত
মিথ্যা তোমার ‘শবে-বরাত।’
মিথ্যা তোমার ভুবনে ভুবনে এত আয়োজন দান করার।
শবে-বরাতের রাত্রিতে আজি, চাহি নাকো শুধু ধন ও মান,
সবার ভাগ্যে দিও যাহা খুশি- জাতির দিওগো মুক্তি দান।
জাগরণ লিখো নসিবে তার,
দিও সাধ প্রাণে বড় হবার,
নব-গৌরবে বিশ্বে আবার দাঁড়ায় যেন এ মুসলমান।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন