নিসর্গচিত্র যখন নারী।। মূল:অরুন্ধতী সুব্রামানিয়াম।। মুজিব রাহমান অনূদিত ।। পুবাকাশ
দরজার ছিদ্রপথে যখন তাকিয়েছিলাম
আমার বয়স তখন আট
এবং মাকে দেখলাম বসবার ঘরে
তার রক্তজবা রেশমি শাড়িতে,
তার সরু আঙ্গুলগুলো জড়িয়ে আছে
এক গ্লাস রবফায়িত কোলা
আচম্বিতে আমি লজ্জা পেয়ে যাই
কারণ আগে কখনো তাকে এমনটা দেখিনি।
আমি তাকে বেশ জানতাম, অবশ্য-
নীল নরোম ফিনফিনে মসলিনের প্রশান্ত তরঙ্গ,
সোনার সরু বালায় মণিবন্ধ খাঁজকাটা,
ডান বাহুর উপরিভাগে কোমল তিলের উত্তলতা
এবং ধনুক বাঁকা পায়ের পাতা-
আমি নিজেকে যতটা জানি তার চেয়ে অধিক করে।
এবং আমি তার স্বর জানতাম
প্রবহমান জলের মতো-
কোলায় নিমজ্জিত বরফ কুচি।
কিন্তু দরজার ছিদ্রপথে
প্রাপ্তবয়স্কদের সামাজিক মিলনক্ষেত্রে
সে আর কোন ভূবিজ্ঞান রইলো না।
মনে হয় সে জানতো
কীভাবে হেলাতে হয় ঘাড়
কখন চুমুক দিতে হয়
তার ঘূর্ণমান পানীয়তে
এবং সে বুঝতো স্নিগ্ধগম্ভীর
পুরুষকণ্ঠ, চকচকে কড়া
পালিশ দেয়া নখ
এবং ‘জরুরী’ শব্দাবলি।
আমি তাকে রাতভর দেখতে পারতাম।
এবং এভাবেই আমি আবিষ্কার করলাম
দরোজার চাইতে দরোজার ছিদ্রপথই
উন্মোচিত করে অধিক কিছু।
তোমার যা চাই তা হলো
সমান্তরাল একটা বিশ্বে
হুমড়ি খেয়া পড়ার জন্যে
দেয়ালের একটা রন্ধ্রপথ।
যেহেতু মায়েরাও নারী।
অরুন্ধতী সুব্রামানিয়াম:
২০১৯ সালে প্রকাশিত Love Without a Story কাব্যগ্রন্থের কবিতা When Landscape Becomes a Woman। পড়ে ভালো লাগলো বলেই অনুবাদ চেষ্টা।২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘যখন ঈশ্বর এক পর্যটক’। এই কাব্যের জন্য
‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ অর্জন করেন কবি।
অরুন্ধতীর কাছে ‘কবিতা হচ্ছে এক মায়াময় অপরূপতা’।
‘কবিতা ছোঁয়াচে, তার স্পর্শে ঘটে দারুণ রূপান্তর। সাহিত্যের হৃৎস্পন্দন কবিতা।’
এমন করেই কবিতা নিয়ে বলেন অরুন্ধতী সুব্রামানিয়াম।
ইংরেজিতেই লিখেন তিনি। ভারতীয় ভক্তি কবিতার ধারায় এক অসামান্য নাম অরুন্ধতী সুব্রামানিয়াম। তাঁর উচ্চারণ চিন্তা-ঋদ্ধ। তাঁর ভাবনায় কবি এবং সাধক এক ও অভিন্ন। তাঁর চিরায়ত অন্বেষা সমস্ত উগ্রতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পারস্পরিক সমমর্মিতায় পথ চলা। অনেক সমালোচকের কাছে তিনি নারীবাদীও। অপাপবিদ্ধতা-অভিজ্ঞতা, বৈরাগ্য-সাংসারিকতা, স্বর্গ- পতিত বিশ্ব এ সবকিছু দ্বিমুখী বৈপরীত্য হিসেবে নয়, এক করে দেখতে চান এই কবি।
অনূদিত কবিতাটিতে দরোজার ছিদ্রের ওপারে লুসির ওয়ার্ড্রোবের ওপারে জাদুবিশ্ব নারনিয়ার মতো অ্যালিসের খরগোশের গর্তে পড়ে গিয়ে অবাক রাজ্যে পৌঁছে যাবার মতো একটি হুবহু পালটা বিশ্বের কথা লিখেছেন কবি।
মুজিব রাহমান: কবি-প্রাবন্ধিক-অনুবাদক। সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।