মুক্তগদ্য

ভোর আঁকা জলজ্বর।। রওশান ঋমু।। পুবাকাশ

ছেলেবেলায় জ্বর এলে উষ্ণ রক্তে ছুটে চলে স্রোতস্বিনী। ঘোর ঘোর আবেশে হৃদয় খান খান। ‘পাইরালজিন ‘চামচে অর্ধেক জলে গুলে গাল টিপে বাবা খাইয়ে দিতেন। তেতো তেতো শাদা ঔষধ বাবার গোলাপী হাতে কেমন যেন শ্বেত পদ্মের ঘ্রাণ।

দলবেঁধে উল্লাসে কাঁপে মেঘের শাদা ভেলা। হাতছানি দেয় পঙ্খিরাজ, আসে রাজার কুমার, লাল -কমল, নীল -কমল। আসে রাজা আসে রানী।

জ্বরের উদ্ভ্রান্ত মগজে প্রজাপতির ডানা ঝরে কাশফুলে। ইছামতীর তীর অপেক্ষমান নৌকা নিয়ে। হাজার কোটি শরৎ এলো গেলো, কাশবনে চন্দ্রবোড়া ফণা তুলে রক্তের লোভে ঝিমায়, ক্রোধের বিষমাখা ছোবলে কাস্তে চাঁদ খিলখিল হাসিতে আফ্রোদিতির প্রণয়ে গলে গলে পড়ে একান্নবর্তী সংসারে।

এইরকম জ্বর এলে বিষণ্ন বিকেল জেগে থাকে তার প্রতীক্ষায়। বেদানার লাল দানা খুঁটে খুঁটে মুঠো ভর্তি হয়ে বিকেল ফুরিয়ে যায়। বিকেল শেষ হয়ে হয়ে এখন সন্ধ্যা নেমেছে অথচ তার আসা হয়ে ওঠে না। সে জানতো প্রতীক্ষার উৎকন্ঠা, আঙুলের কড় গুনে রাখতো সময়ের হিশেব, জ্বর এলে তার পিঠে মুখ রেখে ঘুমিয়ে পড়ার কথা সে জানতো। সে আসে না, জ্বর আসে।তাকে চাই কী প্রচন্ড চাই, সে জানে তা।

কাজল জলে ছায়া ফেলে সুখ দুঃখের মূল্য চুকিয়ে অচেনা মুখ উঁকি দেয় স্বপ্নে ও বিশ্বাসে ঘোরে বেঘোরে। ঝকঝকে রোদে উড়ে উড়ে হেমন্ত আসে। হেমন্তের রঙ হলুদ, নীল আকাশ শাদা মেঘ এই তিন রঙ মাথায় ভেতরে ঘুরে ঘুরে গান গায়। ‘পুতুল নাচের ইতিকথা ‘ চুপচাপ দীর্ঘ দীর্ঘ নষ্টালজিক তুষের আগুনে পোড়ে। যাপনের প্রয়োজনে দিনের পিছুপিছু রাত আসে সেই সাথে তুমিও আসো তপ্ত দেহের অলিগলিতে, আমার মুখর দিনের গভীরে গোপনে।

রওশান ঋমু: কবি ও কথাকার।

১টি মন্তব্য

  1. ছোট অথচ ভীষণ প্রাণময় লেখাটি। ভাবনার অনুপম বিস্তার।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন