গুচ্ছকবিতা ।। সাবিনা পারভীন লীনা ।। পুবাকাশ
এপিটাফ
১.
এতো প্রশান্তি কখনো নামেনি
চোখের কোলে কপালের ত্বকে,
করুণ আদ্র চাহনি লুকাতে
মিছে হাসি ঝুলিয়ে রাখার দিন
চুকিয়ে দেয় মুহূর্তের সকল ঋণ।
২.
হাসি কান্নার হিজল বেলায়
স্বপ্নেরা ভেসেছিল অপার
সোনামুখি বুননের প্রান্তরে
আধখানা নকশার কৌতুক
সকলই মিছে,জানে সার্কাস মুখ।
৩
দিন রাত্রির কাব্য লিখেছি
ঘোরের কাগজে মায়ার কালিতে
পান্ডুলিপির ভাঁজে ঘুণপোকা যতো
খুলে দিয়ে যায় মামুলি বাধন
ভেসে যায়… এই বেহুলা জীবন।
তাহাদের উৎসব
আমাজনের দহন জ্বালা ভুলে
জীবনের মধুরতম সংগীতের
স্বরলিপি লিখছে লাল কাঁকড়া
বালিয়াড়ি জুড়ে উৎসবের ঢেউ
সাগর লতার মসৃন কিনারা বেয়ে
বাতাসে ছড়ায় কোমল স্বরের আলাপ।
ট্যান্গো নাচের মহড়ায় মগ্ন আজ
গোলাপি ডলফিনের মোহময়ী শরীর
দুলে দুলে নীল দরিয়ায়,তবুও…
সারাবেলা কোকিলের ক্লান্ত ডাকে
নিস্তব্ধতার পথ পেরিয়ে কোথাও
বেজে ওঠে ঝরা পাতার চৈতী প্রলাপ।
দখল
যে সব দিয়েছে…
শীতল ঠোঁটে রেখেছে উষ্ণ ঠোঁট,
নিঃশ্বাসে মিশিয়েছে নিঃশ্বাস,
হৃদয়ে জাগিয়েছে অযুত শিহরণ
যে স্বেচ্ছায় হয়েছে সমর্পিত,
তাকে কেন দখলের এতো অায়োজন?
যে সহস্রবার লুণ্ঠিত, রিক্ত নিঃস্ব
সম্বল কেবল চোখের পাতায়
বিন্দু বিন্দু শিশির, দুই মুঠো জোছনা,
আর কিছু না-
তাকে দেখেও জাগে লুটের বাসনা।
কী এমন সময় এখন-
কামে প্রেমে ধরমে চলছে কেমন এক অদ্ভূত দখলের চল।
কেউ কি কখনো পান করে তৃষ্ণার অধিক জল?
কালো পাথর
দুয়ারে দাঁড়িয়ে ডেকেছিলে যেদিন
শিরীষের ছায়া তখন নিজেকে ছাড়িয়ে
ঘুম জড়ানো চোখে কুয়াশার ভীড়
তোমার চেনা স্বরে কবিতার মুগ্ধতা
কাঁধের ঝুলিতে মণি মুক্তোর আলো।
কথার খেলায় বলেছিলে-হাত পাতো,কন্যা
অতল জুড়ে বিছিয়ে রাখো উন্মুখ মীন
চোখের তারায় আমার আলোর ছটা
বুকের ভেতর বদ্ধ কপাট খোলার শব্দ
মুঠোয় পুরে নিয়েছি তোমার মোহরগুলো।
দীর্ঘ ছায়ার পথ ধরে চলে গেলে…
হাওয়ার ডানায় ভর করল তোমার কণ্ঠ,
আগলে রাখা অমূল্য সেই সঞ্চয়
স্বপ্নের যতো নুড়ি, দেখার সাধ হলো একদিন
মুঠো খুলতেই দেখি সবই পাথর,
সবই কালো।
সাবিনা পারভীন লীনা: কবি ও প্রাবন্ধিক।
কি সাবলীলও কোমল উচ্চারণ! অথচ শেষ চরণ দুটো বেশ মরমে গরম। খুব সুন্দর। ধন্যবাদ কবি।