জন্মদিনে কবির জন্য শুভকামনা ।। পুবাকাশ

মৃধা আলাউদ্দিন’র একগুচ্ছ কবিতা

উদ্ভ্রান্ত পাখি

উদ্ভ্রান্তের মতো শান্ত-সচ্ছল, ষড়ৈশ্বর্য পাখিটা কেবলই বলছিল, ভালোবাসি, ভালোবাসি আর ভালোবাসি…
এবঙ একদিন ভালোবাসার নামাবলি, নতুন টুলটুলে টোপর ও শিশিরের অজস্র রঙিন রেশম গায়ে দিয়ে উড়ে গেল পাখিটা।
ভুল করে, রাতের আঁধারে চলে গেল দক্ষিণের চিরহরিৎ পাতা ঝরা প্রান্তরে।

উড়ে উড়ে অস্থির, এলোমেলো ও শ্রান্তরসে আবারো দিকভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছিল পাখিটা…।
নদীর চারপাশ, আকাশের ওপারে নীলাকাশ; অদেখা ভুবনে ঘুরে ঘুরে সবুজ প্রান্তরে ফিরে এলো উদ্ভ্রান্ত পাখিটা।

ভ্রান্তি-৪

রাতের ভিতরে ঢুকে গেলো দুধ সাদা কবুতর
না, না, জেছনার মোহময় আলো
নাকি পূর্ণ রোদ, নীল পাখির পালঙ্ক?
গাঙচিল?
হয়তো দিনের ঝরা জল-চাঁদ-বৃষ্টি।

সিদ্ধ পৃথিবীর জন্য পংক্তি

একটি আলোময়, অলৌকিক হ্যাঙ্গারে
বিশাল ঝুল বারান্দায় অথবা সমমান সমুদ্রে
নীল সমুদ্রে আমি সিদ্ধ দেবো আজকের নিমজ্জিত সভ্যতা।

প্রতিটি স্বাস্থ্যকর প্রজ্ঞাময় নুনের ফোঁটার মতো
সিদ্ধ হবে এই গ্রেনেড হামলা করা পৃথিবী।
পুঁজি আর সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধ।
অবাক, অন্ধ ঈগলকে বোল শেখাবার জন্য এই সিদ্ধ।
আঁধার অথবা পোড়ো জমিতে ফুল ফোটাবার জন্য এই সিদ্ধ।

আমরা উদ্বেলিত উজ্জ্বল চাঁদ

আমার সামনের রৌদ্রগুলো এখন
দলজা নদীর মতো বেদনার্ত
প্রিয়তম বাংলাদেশ! তোমারও কী তাই?

আমার সামনের নদীগুলো পূর্ণিমা
চাঁদের মতো উজ্জ্বল
প্রিয়তম বাংলাদেশ! তোমারও কী তাই?

তবে কী আমরা পৃথিবীর পচা বমি অথবা গ্রেনেড
না, না, আমরা উদ্বেলিত চাঁদ-উজ্জ্বল মহানক্ষত্র।

উর্ধ্ব অট্টালিকার স্বাদ

আমি ভেঙে দেবো পৃথিবীর পরচর্চা
প্রথম নৌফেল
শয়তান সরোবর কঠিন শিলা-সমুদ্র;
ভেঙে দেবো রুগ্ন রোদ মেশানো আজাজিল
আসমান

অ্যাবড়োথেবড়ো আসমান
শঙ্কাহত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভাঙা সিঁড়ি
প্রবঞ্চনার ঢেউ ভেঙে তুলে আনবো দশাশ্ব রোদ
আর আজ, এখনই এ জিহ্বা দিয়ে উচ্চারণ করাবো
ঊর্ধ্ব
ঊর্ধ্ব অট্টালিকার স্বাদ সাদা কইতর
‘ফাবি আইয়ি আলা রব্বিকুমা তুকাজ্জিবান’।

আদরের সাদা ঘাস

গতকাল গভীর রাতে পূর্ব পশ্চিমের প্রকট
প্রজ্বলিত রোদের রাজর্ষি থেকে আমি দেখে
নিলাম কিভাবে বৃষ্টি হয়; ঝড় আসে
চেখে নিলাম কিছুটা পলিময় বিদ্যুৎ পরিশীলিত প্রজ্ঞার
পরাগের পারদ। আদরের সাদা ঘাস। কৈতর।
খুলে গেল নবোঢ়া নদী, অন্ধতম প্রদেশের
গহীন দুয়ার; অন্দরের গলিঘুঁচি অন্ধকূপ।

এবঙ এখানে একদিন গাছেরা ফিরে পায়
বাতাস; সিঁড়ি সারাদিন রঙ-রৌদ্দুর
সরে যায় কালো মেঘ, চির্ণিত চা; প্রতারক
পামসুজ্জ যেনো মিলোসেভিচ, শ্যারন, বাজপেয়ী
বুশেরা খুঁড়ে খায় ঘূর্ণিত ঘাম, পচা রৌদ্দুর
বেঈমান বাদশা তুরুপের তাস।

আর আমি, আমরা চলে যাই যথেষ্ট আষফল
আকাঙ্ক্ষার আকরিক মেশানো বিশুদ্ধ বনে আগুনের
পাখনায়…। যেনো অজুর্ন-আপেল, রৌদ্দুরে
রাতদিন; শিরনি ও শরবত মরশুম থেকে
মরশুমে চলে যায়, যেতে থাকে এক প্রেমময়
বৈদগ্ধ দেহ। আর পূর্ব-পশ্চিমের প্রকট প্রজ্বলিত
ডালপালা ধুয়ে দেয় দিগন্ত থেকে দারুণ দিগন্ত,
পরশীলিত পাখনায় মসৃণ মার্বেল; পরাগের পারদ;
আদরের সাদা ঘাস। কৈতর।

গতকাল গভীর রাতে…।

একসাথে ধ্বংস আর বর্ধিষ্ণু গ্রাম

হ্যাঙ্গারে ঝুলে আছে বিশাল টি-শার্ট
বন্দুকে ঝাঁঝরা করা বুক
আর বুকের ভেতরে মাটিতে দেখা যায় অসংখ্য লাশ।

না, এ লাশ নয়; সবুজের পতাকায় মেশানো
মানুষের মুখ পাতায় মোড়ানো হাত-নাক
চোখের অর্ধেক
পা-গোড়ালি
যেনো একটা সবুজ গ্রামের পাশে মরা ধানক্ষেত
কাঁটাতার ধর্ষণ ও রাইফেল… তারপর নদী
এবঙ আরো দূরে বাতাসে মিশে আছে
ভাঙা রেলগাড়ি
রৌদ্দুর
যেনো যুদ্ধ; একসাথে যুদ্ধ আর আমাদের বর্ধিষ্ণু গ্রাম।

প্রজাপতি হয়ে গ্যাছে কোনো কোনো মাছ

নদী আর নারীর মাংস খেয়ে দেখি, আহা
উড়ে যায় শীতের পাখি;
ঘাস-মাটি, হিজল ফুল, ঝরা মেপল পাতা
রাস্তা পড়ে থাকে রাস্তায়…

নদী আর নারীর মাংস খেয়ে দেখি, আহা
সব বসন্তে ভরে আছে ফুল
কৃষ্ণচূড়া-কৃষ্ণচূড়া, নটি-নাইটিংগেল
পাপড়িগুলো ফুল হয়ে মেলে দ্যায় ডানা

নদী আর নারীর মাংস খেয়ে দেখি, আহা
আকাশে ভেঙে পড়া সন্ধ্যার সুর
রাত্রি-রাত্রি, বরফের বইড়ি ছল;
ফুঁ দেই ফেটে যায় আকাশের চাঁদ

নদী আর নারীর মাংস খেয়ে দেখি, আহা
প্রজাপতি হয়ে গ্যাছে কোনো কোনো মাছ
ইলিশ, বেলে, বাইম… সমুদ্র-সাগর
এবঙ আপেলগুলো বদলে যায়

নীল ঢেউ, পাখির গুঞ্জন কাফকার আকাশ
এবঙ হরিণ হয় কোনো কোনো মাছ…

কচি ঘাস-ফুল, সুন্দর ভোর

ওঠো, সামনে যাও
শত সূর্যের ঢাকনা খুলে রৌদ্রে বাড়াও হাত
ঢেকে দাও ঘৃণিত ঘাম প্লেগ পিঁপড়ে চির্ণিত চা
এবঙ অনাগত শিশুর জন্য তুলে রাখো
তুলে রাখো ঐ দূর মঞ্জিলে একা একটি
লাম্প, ল্যাণ্ডস্কেপ…

যেনো আমাদের গাভি গরু-গরুগুলো
ফিরে পায় কচি ঘাস, ফুল
ফলবান বৃক্ষের সুন্দর ভোর।

মৃধা আলাউদ্দিন। মাতা : ফুলবানু বেগম। পিতা : মৃত মোসলেম মৃধা। জন্ম : ০২.০২.১৯৭৮। জন্মস্থান : কাংশী, উজিরপুর, বরিশাল। বর্তমানে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকাতেই আছেন নকুনি, তলনা, খিলক্ষেত, ঢাকা। মৃধা নব্বই দশকের অন্যতম নিভৃত কবিদের অন্যতম একজন। লিখছেন গল্প, কবিতা, ছড়া ও সমালোচনা সাহিত্য।

কবি মৃধা আলাউদ্দিনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ রৌদ্দুরে যায় মন (প্রকাশকাল : ২০০৫), প্রকাশক : রেলগাছ, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সামনের শীতে মানুষ রৌদ্র হবে (প্রকাশকাল : পহেলা জানুয়ারি, ২০২০। প্রকাশক : রাজুব ভৌমিক, ফিফথ এভিনিউ, ৩০তম রোড, ম্যানহাটন, নিউইয়র্ক। পরিবেশক : বার্নস এন্ড নোবল, ১২২ ফিফথ এভিনিউ, রোড, ২, নিউইয়র্ক-১০০১১। প্রকাশিতব্য গ্রন্থ : প্রজাপতি হয়ে গ্যাছে কোনো কোনো মাছ (কবিতা), জঙধরা পিনালকোড (গল্পগ্রন্থ), চড়–ইয়ের চিড়িপ চিড়িপ শব্দ (কিশোর কবিতা), শুঁড়িখানার নরম দেহ (দেঁাহা কাব্যগ্রন্থ), অল্পকিছু বিষ প্রয়োজন (দোঁহা কাব্যগ্রন্থ), আল মাহমুদ ও অন্যান্য সন্দর্ভ প্রভৃতি। কবি মৃধা আলাউদ্দিন দুই ছেলে সন্তানের জনক। মৃধা শব্দশীলন সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চেয়ারম্যান। পুরস্কার ও সম্মাননা : অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক। বঙ্গভূমি সাহিত্য সম্মাননা, বঙ্গভূমি সাহিত্য পরিষদ। শীর্ষবিন্দু সাহিত্য পদক, শীর্ষবিন্দু লিটলম্যাগ। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতিপ্রাপ্ত ক্রেস্ট ও স্বর্ণপদক। সম্পাদনা : একটি কাব্যভাঁজ (লিটলম্যাগ প্রায় ১০টি সংখ্যা বের হয়ে অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে লিটলম্যাগটি)। মৃধার সম্পাদনায় বের হয়েছে সিলেটের মরহুম কবি মিছবাহুল ইসলাম চৌধুরীর কবিতা ‘শেরশাহ’ (একটি মহাকাব্য)। কবি মৃধা আলাউদ্দিন বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত আছেন।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন