কবিতা


গোপন ডায়েরি।। সাবিনা পারভীন লীনা।। পুবাকাশ


আমার মা লুকিয়ে একদিন ডায়েরি পড়েছিল,
জেনেছিল কালো হরফের গায়ে গায়ে
আমার যতো গোপন ক্ষতের যন্ত্রণাদের
তখন আমার বয়স এক কুড়ি তিন
দ্বিতীয় প্রেমিককে ছেড়ে আসার ঝড় সামলাচ্ছি
ভেতর বাইরের প্রচন্ড ঝড়ে ক্লান্ত আমি
অসাবধানে ড্রয়ারের চাবি কোথায় রেখেছিলাম
আজ আর নেই মনে।
আমার সইয়ের সাথে দারুণ ভাব ছিল মায়ের
তাদের ভালোবাসার চক্রটিতে দুজনারই কেন্দ্রে যেন আমিই ছিলাম-
হয়তো একটু উড়নচন্ডি বলে
হাত পেতে যা চাইতে হয়
নিজের করে রাখতে হয়
অবলীলায় সব দিয়েছি ঠেলে
তাই ডায়েরির কথাগুলো তাকেই বলেছে মা
শত উদ্বেগ জমিয়ে রেখে মাথার শিথানে।
‘অন্যের জিনিষে না বলে ধরতে নেই’ –শেখানো মা আমার তার মেয়ের গোপন কথা পড়েছে!
আমি দেখতে পাইনি মায়ের সেই মুখটি
ডায়েরির পাতায় পাতায় চোখ রেখে
তার কপাল, মুখের শিরা-উপশিরা নীলচে হয়েছিল কিনা


অথবা তার শূন্য জঠরে রঙহীন জলের ঢেউ উঠেছিল কিনা,আমার জানা হয়নি।
কিন্তু কানের পর্দায় লেপ্টে আছে খয়েরের দাগ হয়ে কেবল একটি কথা–
“আমার মেয়েটা এখনো মানুষ চিনলো না,
কী করে চিনবে মানুষ
কোনটা মুখ কোনটা মুখোশ?– শাড়ির আঁচলে নাক মুছে,হাতের তালুতে চোখের জল।

আমার মাকে কখনো ডায়েরি খুলে লিখতে দেখিনি
তবু তার গোপন কথা আমি পড়েছি,
পড়েছি রান্নাঘরের চার দেয়ালে
গোসলখানার ছোট্ট আয়নায়
ক্রুশ কাটায় বুনে রাখা ফ্রকের লেইসে
কখনো আলমারীর তাকে সাজানো
পুরাতন সুতি শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে।

কখনো জানতে চাইনি,জানতেও পারবো না আর
আমার মায়েরও কি জানা ছিল,মানুষ চেনার কোন সূত্র?


সাবিনা পারভীন লীনা : কবি ও কথাশিল্পী।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন