বানর রাজা চীনা পুরাণ (উপন্যাসিকা)
চীনের এক সুপার হিরোর গল্প (দ্যা জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট থেকে)
অ্যারন শেপার্ড অনুবাদ পান্থজন জাহাঙ্গীর
প্রিরিভিউ:
আপনি যদি সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যানের কাহিনী দীর্ঘকাল ধরে থাকবে বলে মনে করেন তাহলে এই বানর সম্পর্কে একবার ভাবতে পারেন সে চীনের সুপার হিরো হিসেবে পাঁচশত বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে আছে। সে আশ্চর্যজনকভাবে শক্তিশালী, সে উড়তে পারে এবং তার এমন কিছু কৌশল জানা আছে যা অন্য সুপার হিরোরা কখনো শুনেইনি। আর সে সবসময় প্রস্তুত, শয়তান, ড্রাগন এবং কখনো দেবতা বা ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ করতে। এই বানর ষোড়শ শতাব্দীর দ্যা জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট নামক এক মহাকব্যিক কমিক ফ্যান্টাসির নায়ক। বানরের যে কাহিনীটি এখানে পুনর্কথিত হয়েছে তা হচ্ছে তার উৎপত্তি ও শুরুর দিককার ক্যারিয়ার-এবং একসময় সে আর উপর থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। অথচ সে অমরত্ব এবং জাদুশক্তি লাভ করার পর স্বর্গকে চ্যালেঞ্জ করে।
ধরণ:ফ্যান্টাসি
সংস্কৃতি:চায়না
থিম:ঔদ্ধত্য
বয়স:১০+
প্রাক কথন:
প্রাচ্য সাগর থেকে অনেক দূরের একটি দ্বীপ। সেখানে রয়েছে একটি পর্বত। যাকে বলা হয় ফুল এবং ফলের পর্বত। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে পর্বতের চূড়ায় ছিল একটা বিশাল যাদুর পাথর। চন্দ্র ও সূর্যের আলোতে স্বর্গ ও মর্ত্যের শক্তিতে স্নাত হয়ে পাথরটি দ্রæত উর্বর হলো। অবশেষে, এটি তার যুবককে জন্ম দেয়ার জন্য ফেঁটে খুলে গেল । এই পাথরের ডিম থেকে একটি প্রাপ্ত বয়স্ক বানরের জন্ম হলো। সে বুঝতে পেরেছিল যে, তার চোখ থেকে ঠিকরে পড়া সোনালী আলোক রশ্মি অনেক দূরের স্বর্গ এবং পৃথিবীকে বিদ্ধ করেছিল । স্বর্গের সর্বোচ্চ স্থানে আছেন জাদি বাদশাহ। যিনি স্বর্গ ও মর্ত্যরে শাসক। তিনি হঠাৎ চমকে গেলেন। কারণ, এই আলোক রশ্মি তার সিংহাসন পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তার প্রধান মন্ত্রী ছিলেন মহা শুভ্র গ্রহের আত্না । জাদি বাদশাহ তাকে এর কারণ জানার জন্য আদেশ দিলেন।
মহা শুভ্রগ্রহ দ্রæত স্বর্গের পূর্ব গেইটের বাইরে এর কারণ অনুসন্ধারে জন্য চলে গেলেন। তারপর দ্রæত তার রির্পোট নিয়ে হাজির হলেন। ‘‘জাহাপনা! একটি পাথর একটি বানরের জন্ম দিয়েছে। আলোক রশ্মি এর চোখ থেকে এসেছে। কিন্ত এখন সেই বানরটি খাবার খাচ্ছে এবং আলোক রশ্মি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে।’’
জাদি বাদশাহ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এটি শুধুই একটি বানর? ঠিক আছে এখানে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। বানর আমাদের কোন মাথা ব্যথার কারণ নয়। স্বর্গের অন্য কোথাও প্রভু ডাউ টিজু সর্বোচ্চ আধ্যাতিœক নেতা,যাদুর অমোঘ ওষধ অমরত্বের রস পরিশোধিত করছিলেন। তখন মুহূর্তের মধ্যেই সোনালী রশ্মি আলকেমি ল্যাবরেটরিতে প্রবেশ করলো।
প্রভু ডাউ টিজু সবিস্ময়ে ফিসফিস করে বললেন, কি দারুণ শক্তিশলি রশ্মি যে এটি তৈরি করল, সে নিশ্চয় অমর হবে। পশ্চিম স্বর্গ থেকে বহু দূরে যখন এ আলোক রশ্মি মন্দিরের হল ঘরে প্রবেশ করলো তখন বুদ্ধ তার শিষ্যদের ধর্মীয় বাণীর উপর বক্তৃতা প্রদান করছিলেন। তিন তার বক্তব্যে যতি টানলেন। তিনি এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে ধ্যান করলেন। তারপর তিনি জোয়ান ইনে পরিণত হলেন। যিনি হলেন সর্বোচ্চ সহানুভূতি প্রবণ বোধিস্থ এবং দয়ার দেবী।
তিনি বললেন, একটি উল্লেখযোগ্য প্রাণীর জন্ম হলো। একটি বানর কিন্তু কোনো সাধাসিধে বানর নয়। আমি দেখতে পাচ্ছি সে ভবিষ্যতে জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত হয়ে গড়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে এসেছে। একজন সত্যিকার বুদ্ধ হবে। সে আমাদের এমন প্রস্তাব দিবে যা আমাদের বর্ণনাতীত দূর্দশার মুখোমুখি করাবে।
এ কথা বলে তিনি আবার তা বক্তব্য ধর্মীয় বক্তব্যে ফিরে গেলেন।
প্রথম পর্ব
জন্মদিন উৎসব
ফুল এবঙ ফলে ভরা এক পর্বত। সেই পর্বতের উপর জলপর্দার এক স্বর্গীয় গুহা। সেই গুহায় দ্বীপের বানরগুলো তাদের রাজার জন্মদিন উদযাপনের ভোজন করছিল। কিন্তু বানর রাজা নিজেই সেখানে মন খারাপ করে বসেছিল। কি হয়েছে, জাহাপনা? বৃদ্ধ এক শিপাঞ্জী জিজ্ঞেস করল।
এখানে একমাত্র আমারই বয়স চারশত বছর, বানর রাজা বললো। আর আমি ইতোমধ্যেই মহত্বের উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছি। সাধনা আর সিদ্ধি লাভের আর কি বা বাকী রইলো? একজন রাজার জন্য এরচেয়ে বড় আর কি হতে পারে? জাহাপনা, বৃদ্ধ শিপাঞ্জী সতর্কতার সাথে বলল, আমরা সেই চারশত বছরের আগের সময়ের জন্য আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। যখন আপনি সেই পাথরখন্ড থেকে জন্মের জন্য তাপ নিয়েছিলেন আর আমাদের মাঝে আসলেন। আর এই জলপ্রপাতের পেছনে গুপ্ত গুহাটি আমাদের জন্য খুঁজে বের করলেন। যার জন্য আমরা আপনাকে আমাদের সর্বোচ্চ সন্মান উপহার দিয়ে রাজা বানালাম। এখনো আমি আপনাকে বলব যে রাজারা জাতির জন্য সর্বোচ্চ কিছু নয়।
তারা নয় কি? বানর রাজা বললেন।
না, জাহাপনা, তাদের উপরে আছে দেবতারা। যারা স্বর্গে বাস করে আর মর্ত্যকে শাসন করে। এভাবে তারা অমর হয়। যারা মহাশক্তি লাভ করে এবং চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকে। অবশেষে তারাই হয় বুদ্ধ এবং বোধিস্থ। যারা মোহ,মায়া বা দু:খকে জয় করে এবং পুর্নজন্ম থেকে মুক্তি পায়।
দারুণ! বানর রাজা চিৎকার দিয়ে উঠল। মনে হয় এই তিনটিই আমি হতে পারি! তিনি এক মূহুর্ত ভাবল তারপর বলল, আমি মনে করি, আমি অমরত্বে যাত্রা করব। যতক্ষণ না এগুলোর একটিও আমি না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে আমি খুঁজে বেড়াবো। তারপর নিজেকে শ্রেষ্ঠ করে গড়ে তোলার জন্য শিখব।
পরেরদিন খুব সকালেই বানর রাজা চির হরিৎ বৃক্ষের লম্বা সুচালো পাতার তৈরি ভেলার জন্য আদেশ দিলেন। যেটিতে ফল-ফলাদি নিয়ে সে যাত্রা করবে। তারপর সে তার আনন্দের জিনিশগুলো নিয়ে তাদের কে ছেড়ে চলে গেলো। দ্বীপের প্রান্তে স্রোতে ভাসতে থাকলো। অবশেষে, মহাসমুদ্র পাড়ি দিতে যাত্রা শুরু করলো।