আহমেদ ফুয়াদ নেজাম : জনগনের কবি।।নাজমুন নাহার।। পুবাকাশ
নিগৃহীত এবং নিন্মবিত্ত শোষিত দরিদ্র মানুষের কাছে আহমেদ ফুয়াদ নেজাম নামটি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার সাথে উচ্চারীত হয় । আহমেদ ফুয়াদ নেজাম সাধারণ শোষিত বঞ্চিত জনসাধারণের প্রতিনিধি যার অধিকাংশ সময় কাটে কারারুদ্ধ অবস্থায় । পুলিশের অবিরাম ধরপাকর , শাসকগোষ্ঠির নিকট বিভীষিকা নেজামের জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে জেলে । তাই বার বার শাসকগোষ্ঠি যখন তাকে অন্তরীন রাখার ভয় দেখিয়েছে তিনি বলেছেন “যার জীবনের অধিকাংশ সময় কারারুদ্ধ কাটে তাকে আর ভয় দেখানো না হোক ”। ২০১৩ আহমেদ ফুয়াদ নেজাম মৃত্যুবরণ করেন । নিউইয়র্ক টাইমস এবং সি এন এন সংবাদে নেজামের কাজকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয় । নেজামকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের কন্ঠস্বর । কিন্তু বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং স্বৈরাচার শাসকের কাছে নেজাম একটি আতংকের নাম । জীবনের শেষ দিকে আহমেদ ফুয়াদ নেজাম তার কাজের স্বীকৃতি পান । গরীবের এম্বাসাডার তথা মুখপাত্র হিসেবে সম্মাণিত হন । নেদারল্যান্ডের প্রিন্স ক্লজ “ইন্টিগ্রিটি এওয়ার্ডে” ভুষিত করেন তাকে ।
এই মহান কবির জন্ম ১৯২৯ সালে এক অতি দরিদ্র পরিবারে নাইল ডেল্টা গ্রামে । সে গ্রামটি এখনো ইংল্যান্ডের উপনিবেশের একটি । ১৭ ভাইবোনের এক বিশাল সংসারে তার বাবা ছিলেন পুলিশ । কিন্তু ফুয়াদের মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । এরপর নেজামের মা ‘এর সাধ্য ছিল না সন্তানকে নিজের কাছে রেখে প্রতিপালন করার । তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো চাচার কাছে । কিন্তু তার চাচাও তাকে নিজের কাছে রাখলেন না । সেখানে থেকে পুনরায় তার স্থানান্তর হলো এতিমখানায় । এতিমখানা থেকে বের হবার পরে জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে বহু ধরণের কাজ তিনি করেন । পশুপালক থেকে শুরু করে দর্জি , দোকানের কর্মচারী ,পোষ্টমাস্টার , এমনকি প্রেসেও কাজ করেছেন । টিকে থাকার অবিরাম সংগ্রামে নেজাম অসফল তা নয় বরং একটা জাতির কাছে নিয়ে এসেছেন আরব বসন্তের মতো একটা সংগ্রামের সমৃদ্ধ জাগরণ । আরব বসন্ত তো শুধু বিপ্লব বা রেনেসাঁ নয় – এ হলো জাগরণ আত্মার । যেখানে জনসাধারণ বুঝতে পারে আত্মার অবিরাম উত্থান আর পতনের কথা । নেজাম যেই জীবনের সন্ধান দেন সে নিজেকে নিজে চেনার জানার । এই জানা এবং উপলদ্ধিটা এসেছে নিজের জীবনের কাছ থেকেই । পরতে পরতে অনুভব করেছেন জীবনের কাঠিন্য । হেরে যান নি – বার বার বুক পেতে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমোঘ বাণীর মতো – জীবনকে হেলায় তুচ্ছ করেছেন –
ভাগ্যের পায়ে দুর্বলপ্রাণে
ভিক্ষা না যেন যাচি ।
কিছু নাই ভয় , জানি নিশ্চয়
তুমি আছ , আমি আছি ।
এই অমিতশক্তি নিয়ে নেজাম এগিয়েছেন দুর্বলের পক্ষ নিয়ে । বার বার এসেছে আঘাত –কিন্তু নেজাম হেরে যাননি । এর ফলে তিনি শ্রমিক শ্রেণীর নায়কে পরিণত হন এবং তার লেখা আরো বেশী রাজনীতি সংশ্লিষ্ট হয়ে ওঠে । এমনকি যখন তিনি জেলে অন্তরীন ছিলেন তখন আনোয়ার সাদাত টিভিতে তার একটি কবিতার জন্য উপহাস করেন । তাতে তিনি গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে আরো বেশী জনপ্রিয় হন ।
১৯৪৬ সালে নেজাম তার ভাই এর সাথে কায়রো আসেন , ১৯৫১ সালে বৃটিশ নিয়ন্ত্রন এবং আধিপত্যের বিরুদ্ধে রায়টে জড়িয়ে পড়েন ।
১৯৫৯ সালে দলিল জাল করার জন্য তিন বছরের জেল সাজা পেতে হয় নেজামকে । অন্তরীন থাকাকালীন সময় তিনি প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেন । নিন্মবিত্ত শ্রেণিহীন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার কবিতার বাণী গর্জে ওঠে । অনেকটা আগুনের মতো – সে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে ” সেই আগুনের অনলবর্ষী সুর জনতার যেনো হৃদয়ের কথা –যে কথা এতোদিন হয়নি বলা । এলিট শ্রেনী সুলতান , প্রিন্স , প্রিন্সেস , রাজা বাদশার মতো জীবন যাপন করে অথচ সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করে । শাসক শ্রেণীর ভয় তাদের নিয়ে নয় এটি যখন তারা নিশ্চিত তখন নেজাম বলেন “ এই দরিদ্ররাই মিশরের সম্পদ । তারা জিনিয়াস । তাদের যেনো অবমূল্যায়ন করা না হয় ”।
নেজামের এই উচ্চারণ ছিলো তখনকার শাসক এবং শোসকের বিরুদ্ধে ।
“ Newly establishment supreme Council for the Arts “ একটি জাতীয় রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে । তিনি সেই পুরস্কার জিতে নেন । এবং এই সময় তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয় “Picture from life and Prison এবং তখনো তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন ।
১৯৬২ সালে জেল থেকে বের হবার পরে নেজামের সাথে অন্ধ গায়ক ইমামের সাক্ষাৎ হয় । ইমাম ছিলেন সুরকার এবং গায়ক । ফুয়াদ বিন নেজাম গান লিখতেন এবং ইমাম সুর করে গাইতেন । নেজাম তো পুলিশের তাড়াতেই থাকতেন সবসময় । ইমামের গান সর্বসাধারণের কাছে ইমামই পৌঁছে দেন । এসব গানের বাণী এবং সুর ছিলো তেজোদীপ্ত যা যুবসমাজের নিকট তুমুল জনপ্রিয় হয় । শেখ ইমামের সাথে নেজাম মিশরের সবচাইতে দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকায় বাস করতেন । এই সময় জেনারেল নাসের ক্ষমতায় এবং ইসরাইলের সাথে মিশরের কুটনৈতিক সম্পর্ক বেশ মধুর । যা সাধারণ জনগনের কাম্য নয় । এবং দেশের জনগনের অবস্থা মোটেই ভালো নয় । ইজরাইলের সহায়তায় দেশের মানুষ বার বার বঞ্চিত হয়েছে জীবনের ন্যুনতম চাহিদাগুলো থেকে । দেশের উপরতলার মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড় আর জনসাধারণ বঞ্চিত জীবন যাপনের সাধারণ অধিকার থেকে । এই বিষয়গুলো আহমেদ ফুয়াদ নেজাম কবিতায় এবং গানে আনেন । এর ফলে নাসেরের নির্দেশে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয় । তা স্বত্তেও নেজাম এবং ইমাম জুটি বিরতিহীন ভাবে সমাজের উঁচু শ্রেণীর বিরুদ্ধে কলম ধরা বন্ধ করেন নি । তাদের গায়কী , কথা এবং সুরের সেই অগ্নিবর্ষন থেকে সেলিব্রিটি , রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেউ রেহাই পায়নি ।
আবারো তাকে কারারুদ্ধ করা হয় ১৯৭৮ সালে । এবার তার সাজা এগারো বছরের । কিন্তু তাতেও দমানো যায়নি এই কলম যোদ্ধাকে । ১৯৯০ সালে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান । তখন হোসনি মোবারক ক্ষমতায় । কিন্তু তা সত্ত্বেও তার নিক্ষিপ্ত বাক্যবানে জর্জরিত হন হোসনি মোবারক । তার পূর্বসুরী সাদাত এবং নাসেরের মতো তিনিও নেজামের কবিতার ক্ষুরধার চাকুতে রক্তাক্ত হন ।
Who are they and who are we?
We are the constructing, we are the workers
জনতা সকল সময়ই কর্মী । তারাই গড়ে তুলে নগর, শিল্প কারখানা , কৃষিজাত পন্য । দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে সাধারণ জনগন অথচ তারাই নিগৃহীত জীবন যাপন করে ।
From our health, the land raises
And by our sweat, the meadows turn green
Use your mind, guess…
Guess who serves whom?
শক্তিশালী শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির অন্যায়ের বিরুদ্ধেও কলম চালাতে দ্বিধা করেননি । নেজাম নিজেকে সাধারণ একজন কর্মী ভাবতেন । সকল জুলুম –শোষণ- অন্যায় মধ্যবিত্ত সমাজের নির্বিবাদের সাথে মেনে নেবার বিষয়টি তাকে আহত করেছে বার বার ।
নেজাম তার ব্যক্তিত্বের সাথে পোশাকের ব্যপারেও যথেষ্ট খুঁতখুঁতে ছিলেন । এজন্য দেখা যেতো পশ্চিমা পোশাকে তিনি স্বচ্ছন্দ নন । পশ্চিমা পোষাকের পরিবর্তে জুব্বা পরিধান করতেন এবং হাশিশ নামের চুরুট মুখে থাকতো তার । তিনি বলতেন “ আমি ২৫ বছরের হৃদয় নিয়ে লিখি , ২৫ বছর বয়সীর মতো খাই , ২৫ এর যুবার মতো নারীর সাথে প্রেম করি ”। ধারণা করা হয় তিনি আট থেকে দশটি বিয়ে করেন । তাদের মধ্যে কেউ শিল্পী কেউ অভিনেত্রী কেউ বা লেখক বা কলামিস্ট । তার স্বভাবের কারণে তাকে আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় করেনি কিন্তু আবার কট্টর রক্ষণশীল কিংবা মুসলিমপন্থী তিনি ছিলেন না । এজন্য মুসলিম কট্ররপন্থীদের নিকটও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো না । এই বিষয়টি নেজামকে খুব উদ্বিগ্ন রেখেছিলো তা নয় । তার বাড়ির প্রবেশমুখের দেয়ালে লিখে রেখেছিলেন –
Glory to the crazy people in this dull world “
ঊনিশ শতকের দিকে ইউরোপে ওয়ার্ডসওয়ার্থ এবং শেলী মনে করতেন না যে কবিতা সমাজ এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসলে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে । যেমন ফ্রান্স বিপ্লবের সময়কালীন কবি কিংবা কবিতার ভুমিকা খুব সামান্যই ছিলো । W.H.Auden একশত বছর পরে আবিষ্কার করেন কবিতা আসলে সমাজ কিংবা রাজনৈতিক কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। এই ধারণার বিপরীত চিত্র দেখতে পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্যে । আহমেদ ফুয়াদ নেজামের কবিতা একটা স্ফুরণ । চেতনার জায়গাতে খুব জোরসে নাড়া দেয় । বিপ্লব তৈরী করে। মধ্যপ্রাচ্যে কবি একজন আইকনিক ফিগার । আহমেদ ফুয়াদ নেজামকে বুঝতে হলে মধ্যপ্রাচ্যের কবি এবং কবিতা কতটা গুরুত্বপূর্ন সে বুঝতে হবে । কবিকে সেখানে প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় । জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিবাদের জায়গাটুকু খুব শক্তিশালী কলমের স্ফুরণে বিদ্ধ করবে শাসক গোষ্ঠিকে সে কবির উপরেই ভরসা করা যায় । এবং কবিতা একটা রিদম , একটা তাল একটা একক শক্তি । বিচ্ছিন্ন ভাবে কবি সহস্র হৃদয়ের অনুভুতি আপন হৃদয়ে ধারণ করে অনুভূতিকে সর্বজনীন প্রকাশ করেন এবং শাসক শক্তি নড়ে চড়ে বসে ।
আরব বসন্তের যখন উত্থান হয় তখন কবিতার বাণীই শক্তি যুগিয়েছে । লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি জনতা নেমে এসেছে রাস্তায় । কবিতার লাইন হয়েছে স্লোগান –
“তোমরা কারা আমরা কারা
আমরা গরীব তোমরা রাজা
তোমরা রাণী আমরা টানি ঘানি”
অথবা
তোমরা চড়ো কারে
আমরা চলি বাসে
তোমরা খাও বুফে
সিম ,শাক লতাপাতা
নেই আমরা লুফে –
এই ধরনের স্লোগানে স্লোগানে সমস্ত কবিতায় জাগরণের এই অমিয় বাণী শক্তি যুগিয়েছে তরুণদের ।
সাধারণ কবিতার বাণী যখন হয়ে যায় জনতার দাবী মানার এক একটি অবিভাজ্য শর্ত তখন কবিকে আর প্রকাশ্যে নামতে দেয়া হবে না এটাই স্বাভাবিক । তবু নেজাম ভয় পাননি ।
উচ্চারণ করেন
“তোমরা জানো না আমরা কে !!
কে থাকে পিছে – কে খাচ্ছে কাকে !!
যুদ্ধ পাথর আগুনের তৈরী জনতা
যোদ্ধা বানিয়েছেন মহান প্রনেতা “।
নেজামের চাবুকের মতন শব্দ এলিট শ্রেণীকে আক্রান্ত করেছে বার বার কিন্তু মিশরীয় সাধারণ মানুষ দীর্ঘজীবনে সংকটের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ।
They are wearing the latest fashions
and we are sleeping seven in a room .
They fly in aeroplanes while he dies in buses –
আরব বসন্ত একই সাথে একটা সমৃদ্ধ চেতনার নাম । যে ধারায় সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে তার অধিকার , তার জীবন যাপনের মৌল অধিকার নিয়ে বাঁচার অধিকার তার রয়েছে । প্রতিটি মানুষ আলাদা স্বত্তা । জীবন তুচ্ছ হয়ে যায় চেতনা যখন সমগ্র বোধকে জাগিয়ে তুলে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ কবিতার লাইনগুলোকে জীবনের লাইন মনে করতে দ্বিধা করে না । সমুদ্রের জোয়ারের মতোন , উত্তাল সমুদ্রের ফেননিভ ফেনার মতোন মানুষ এগিয়ে যায় সামনের দিকে । ফুলে ওঠে , ফেঁপে ওঠে – ধারালো দীপ্র লাইন কবিতার মানুষকে উজ্জীবিত শুধু করে না হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার পেছনে সব জনতাকে ডাকেন –
Braver are brave
Cowards come cowardly
All gather on time square “
এই সব এলাকায় কবিকে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছে তাদের ধারালো ক্ষুরধার কলমের জন্য । এই ধারায় প্যালেস্টাইন কবি মাজান মারুফ ,মিশরীয় কবি থালা মোহাম্মদ কিংবা ইরানী কবি জামাল আল শেখ নিজস্ব দেশ ত্যাগ করে ইউরোপের দিকে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন ।
নেজামের কাছে কবিতা প্রতিবাদের ভাষা । সচরাচর আরবী ভাষার ব্যবহার , খেটে খাওয়া মানুষের মুখের ভাষাকে জনগনের সামনে হৃদয়গ্রাহী , প্রাঞ্জল ,সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন । স্ট্রীট ল্যাংগোয়েজ , স্ল্যাং , ওয়ার্কিং ক্লাস জোকস , কঠোর বাস্তবতায় তার কাব্যভাষা অনেক বেশী নির্মম। ফলে সহজে কবিতার অভ্যন্তরে প্রবেশ করা এবং উদ্দিপ্ত হবার ব্যপারটি চলে এসেছে । যদিও এলিট শ্রেণীর প্রতি আক্রমন করে লিখতে দ্বিধা করেননি । তবু ভাষা অলংকার পূর্ণ এবং রসগ্রাহী ।
“অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ কভু রণভুমে রণিবে না ” এতদঞ্চলে নজরুলের কবিভাষা অধিক অপ্রতিরোধ্য দুর্দমনীয় – ঐ পাড়ে নেজাম বলেন “ সাহসীরাই প্রকৃত সাহসী”।
জনতার লক্ষ্য জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো । ২০১১ সালে সেদিন তাহির স্কয়ারে দলে দলে সর্বসাধারণ জমায়েত হয়,তাহির স্কয়ার থেকে হোসনি সরকারকে ক্ষমতার থেকে একেবারে ধুলিতে নামিয়ে আনা হয়েছিলো । সেই অমর অমোঘ ডাক কবি আহমেদ ফুয়াদ নেজামের –
The brave man are brave
The cowards are cowardly
Come with the brave
Together in the square –
নেজামের জন্য অভুতপূর্ব ব্যপার ছিলো যখন টিভিতে সরকার পক্ষ থেকে ডঃ মহসেন ঘোষণা দিলেন যে সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে তাদের জন্য মাংস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে । তাদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে সীম এবং সবজি জাতীয় খাবার । সাধারণ মানুষ যেনো স্বাভাবিক ভাবে বিষয়টি নেয় । কেননা সরকার চায় মিশরীয় সকল মানুষের স্বাস্থ্য ভালো হোক – তখন নেজাম লিখলেন –
What do you think Dr. Mohsen
You less then reliable source
Let us eat meat and die
We’ll let you eat beans and live “
যে শিম আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন তা আপনিই খান মিস্টার মোহসেন । আমাদের স্বাস্থ্যবান হবার দরকার নেই । আমাদের আপনি মাংস খেয়ে মরে যেতে দিন “
আবার নাসের আড়ম্বরপূর্ণ ভাষায় দেশের জনগনকে ভালোবাসার কথা বলেন , দেশকে ভালোবাসার কথা বলেন । কিন্তু কাজের বেলায় খুব সংকীর্ণ । নেজাম তার কবিতায় বলেন নাসের জনগনের স্বাধীনতা কুক্ষিগত করে কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেন “।
নেজামের নির্ভিক কন্ঠস্বর তাকে অধিক জনপ্রিয় করেছে । নেজামের মতোন কেউ এতো বিশুদ্ধ ভাবে উইট প্রকাশ করতে পারেন নি । একবার তখনকার জনপ্রিয় আরব গায়িকা উম্মে কুলসুমের কুকুর এক দিনমজুরের ছেলেকে কামড়ে দিয়েছিলো । এ নিয়ে নেজাম লিখেন কিন্তু সেটি খুব রিস্কি ছিলো তার জন্য । ঐ সময় একজন কমেন্টেটর লিখেন এই সম্পর্কে
“ much riskier than making fun of presidents “
যদিও তিনি কাউকে ছাড়েননি তার ব্যাঙ্গ রসাত্মক আক্রমন থেকে তবু প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের সময় তার মিডিয়া কভারেজ ব্যাপক ছিলো বলে তাকে জেল জুলুম থেকে রেহাই দিয়েছিলেন । তা সত্ত্বেও মোবারককে উপহাস করেছেন
– “Nessar look like a prophet and Sadat a very kind man “
“ I must insist
That the president is a compassionate man
Constantly busy working for his people
Busy gathering their money
Outside , in Switzerland ,saving it for us
In secret bank accounts “
নেজামের এই মানসিক শক্তি , ব্যতিক্রম ধর্মী সাহিত্যচর্চা দেশ ছাড়িয়ে ভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আরবের মতো ইউরোপেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন ।
নেজামের ভাষাভঙ্গি অশ্লীল যা আদৌ ধ্রুপদী আরবী সাহিত্যের সাথে মেলে না । এতে তার পাঠক মর্মাহত এবং উল্লসিত হলেও তাকে কোর্টে জাজের মুখোমুখি হলে জাজ সাহেব জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনার এই ভাষাভঙ্গি কি মনে হয় না যথেষ্ট অভব্য এবং স্থুল ? কিন্তু মিশরে বর্তমানে যা হচ্ছে তা এর চাইতেও স্থুল এবং অভব্য মাননীয়”” উত্তর করেছিলেন নেজাম ।
কিন্তু মিশরীয় জোয়ার ধর্মের দিকে বেশী হলে নেজামের সুখ্যাতিতে কিছুটা আঘাত করে । হাশিসের নেশা এবং তার নারীর প্রতি আকর্ষণ তার কীর্তি অনেকটাই ম্লান করে দেয় । আবার তার কন্যা নাওয়ার নেজাম ছিলেন বাবার মতই ক্ষুরধার । আরব বসন্তে তার ভুমিকাও ছিলো উল্লেখ করার মতো । আবার একটা আশ্চর্য ব্যপার যা সিনেমার চাইতেও অবাক করার । টিভিতে যখন নেজাম লাইভে সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন এবং কিছু কথা তার যা ধর্মকে আঘাত করেছিলো তখন তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগে আনা হয় ।
নেজামের কবিতার বই খোদ মিশরেই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । তাই তার বই সাধারণত খুজে পাওয়া যায় না । কিন্তু তার কবিতার বাণী , প্রতিবাদের তীক্ষন ঝাঁঝালো ভাষা , স্যাটায়ার জনগনের হৃদয়ে রয়ে যাবে ।
মধ্যপ্রাচ্যে এখনো বিপ্লবের প্রসঙ্গ আসলেই আহমেদ ফুয়াদ নেজাম অনেক বেশী প্রাসংগিক এবং আহমেদ ফুয়াদ নেজামকে মিশরের বিপ্লবের ব্র্যান্ড ধরা হয় যা “ The Youth Revolution “ নামে পরিচিত ।
নাজমুন নাহার : কবি ও প্রাবন্ধিক। অস্টেলিয়া প্রবাসী।
চমৎকার লিখেছেন।