পদাবলী 


প্রণয়ের পাঁচকাহন


সবুজ ভট্টাচার্য্য


পুবাকাশ


১.প্রথম দেখা:

রাতটা আজ বড্ড বেশি বড়,
কখন যে সেই ভোরের দেখা পাই।
নিজের কাছেই নিজেই জড়সড়,
হয়তো, প্রথম দেখার অনুভূতি এটাই।
কাল সকালে বৃষ্টি যদি থাকে!
যদি রাস্তায় থাকে ১৪৪ ধারা!
আসবে কি সে, এত কিছুর পরে?
ঠিক তাদের মত, অমর হয়ে আছে যারা।
কাল যদি মা বকুনি দিয়ে বলে!
“একটি পাও বাহিরে দেয়া বার”
যাবো কি আমি সব নিয়ম ভেঙে?
থাকবে যাতে ভালোবাসাই কারন। 
দাঁড়াবো যখন তার সামনে গিয়ে,
কাঁপবে কি পা, অজানা কোনো ভয়ে?
আবারও কি শান্ত হয়ে যাবো,
তার পাশে হেঁটে, তার কনিষ্ঠা ছুঁয়ে?
বিদায় বেলা ফিরবো যখন ঘরে
কাঁপবে কি বুক, থাকবে কি জল চোখে?
প্রথম দেখা এত কঠিন কেনো?
কিভাবে এত সজহ বলে লোকে!

২. ত্রিকোণ:

আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম, 
ব্যস্ত ছিলাম জীবিকা জীবিকা করে। 
চলার পথে তোমার সাথে দেখা- 
থমকে গেলাম যেন হাজার বছর ধরে।  
আমি খুব শান্ত ছিলাম, 
শান্ত ছিলাম নিজ চরিত্র গুনে।  
হঠাৎ করেই তোমার সাথে দেখা- 
চঞ্চলতা বাড়লো বহুগুণে। 
সত্যি করে বলতে যদি চাই, 
যেন এমন থমকে থাকাই চাই। 
খুনসুটি আর অভিমানের সাথে-
চঞ্চলতার আকাশ ছুঁতে চাই।  
আমার স্বপ্নগুলো অর্থ ঘেরা ছিল।  
অর্থের পিছে ছুটেছি শুধুই মিছে- 
মাঝপথে তোমার সাথে দেখা ,
নিরবেই যেন জীবন বদলে গেছে। 
বদলে গেছে আকাশ দেখার ধরন,
বদলে গেছে ব্যস্ততার প্রবাহ,
বদলে গেছে ভাবগাম্ভীর্যের চোখ ,
বদলে গেছে জীবনের আবহ। 
সত্যি করে বলতেই যদি হয়- 
বিশ্বাস করো, আমি যা ছিলাম;
তা মোটেও আমি নই।  
আমি চেয়েছিলাম স্বর্গীয় অমিয়সুধা’ 
আমার মনেও জমে ছিল, 
জমে ছিল, নিত্য প্রেমের ক্ষুধা।
আমি তোমার কাছে প্রেমটাই চেয়ে বসি, 
ভুলে আমার সঠিক অবস্থান। 
আমি তোমার কাছেই আবদারের সুরে
গেয়েই গেলাম অনিন্দ্য প্রেমের গান। 
জানতো কেইবা তীরের কাছে এসে
ব্যর্থ হবে এই সমুদ্রের ঢেউ
জানতো কেইবা তোমার বাহুডোরে 
জড়িয়ে আছে এমন অন্যকেউ!

৩. বিদায়বেলা :

ঠিক টের পাইনি সময়ের গতি,
দিনটা যেন কেমন করে গেল! 
দাঁড়িয়ে আছি শেষ বিদায়ের ক্ষণে 
ঠিক যেখানে মিলন হয়েছিল।
আমার চোখ শুকিয়েছে সেই কবে, 
তোমার চোখে জল নেমেছে বোধহয় 
দুচোখ জানে কেঁদেও নেই আর লাভ 
প্রেমের শেষে, এমনটাই তো হয়।
দেখো প্রকৃতিটা শান্ত হয়ে আছে
এই এখানটায় তোমার সাথে দেখা!
আজ সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি আবার
তফাৎ শুধু আঁকছি সমাপ্তি রেখা।
তোমার উপর রাগ নেই আজ কোনো
অভিমানের অধীকার তো আজ তাঁর।
সেই করবে যা সব আমার ছিলো
বাষ্পেই মিলালো বাষ্পীয় সংসার।
আচ্ছা, বিদায় বেলা এমন কিছু বলো
যা নিয়ে কেউ একাই বাঁচতে পারে!
এমন কোনো উপায় জানা আছে?
যাতে ক্ষমা করার শক্তি যাবে বেড়ে!
অর্থের মাঝেই জীবন তুমি খুঁজো,
একি, স্তব্ধ তুমি! কাল থেকে তুমি তাঁর-
তাইতো পেলে! অঢেল অট্টালিকা,
আমার জন্য অসীম অন্ধকার। 
আগের মত সবই তোমার রবে
শুধু অধিকারের বালামখাতাটা বাদ
তুমি তো কাল অন্য কারো হবে!
কাল হতে পাবো “প্রাক্তন” হবার স্বাদ। 

৪.প্রাক্তন প্রগতি:

কোন এক দুরন্ত দুপুরে,
আমাদের হয়তো আবার দেখা হবে। 
বিপরীতমুখি দুজন হয়ত থমকে দাঁড়াবো।
চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হয়তো কষ্ট হবে খুব;
তবুও চাইবো শুরু করতে; 
প্রশ্ন শুধু একটাই- শুরুটা কে করবে!
থমকে গিয়েও এগুবো দু’জন।
হয়ত আমাকেই ভাংতে হবে;
বহুবছরের নিরবতার দেয়াল। 
পরিচিত কন্ঠে অপরিচিত সম্বোধন –
চাইলেও ডাকা যাবেনা পুরোনো সেই নামে,
যে নামের মাঝে লুকোনো শত গল্প ছিলো।
স্বপ্নের সুতোয় গাঁথা একটা সংসার ছিল।
অতিতটাকে লুকানোর অভিনয় আর-
নিজেকে যখন স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা?
তোমার হয়তো তখনো সময় কম।
সময় যেমন আগেও ছিলনা ঠিক!
সেভাবেই হয়তো স্বল্পশব্দে জানতে চাইবে-
কিভাবে যাচ্ছে দিনকাল।
মনে লুকানো কষ্ট, তবে-
মুখে সেই পরিচিত হাসি নিয়ে হয়তো বলবো,
তোমার অস্তিত্ব ভুলার চেষ্টায় পার করছি দিন।
একপাক্ষিক সম্পর্কের বোঝাটা,
ঐপক্ষেই একটু বেশি থাকে। 
একটু বেশি বললে ভুল হবে, সম্পূর্ণটাই তার!
আমি শতভাগ নিশ্চিত, আমার কথায় –
তোমার মন বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হবে না। বরঞ্চ 
বারবার ঘড়ি দেখার মাধ্যমে হয়তো 
আমাকে এটাই বোঝাবার চেষ্টা করবে, 
“আমার সময় শেষ।”
দেখা হলেও বছর চারেক পর!
ভুলেই যাবো আমি, কে ছিলো আপন,
কে ছিলো স্বার্থপর। “

৫. স্মৃতিচারণ :

আজ হঠাৎ আমার মাঝে শরত করেছে ভর
তোমার কথা ভাবছি হঠাৎ, প্রায় চারটি দশক পর।
শরত আকাশে  উড়ে বেড়ানো সাদা মেঘের মত,
চুল- দাড়ি সব শ্বেতশুভ্র, হৃদয়ে ফেকাসে ক্ষত।
হয়তো তুমিও আজ, একই সীমানায় আছো,
আমার মত একাকিত্বে তুমি হয়তো বাঁচো।
আজ তোমার সেই অর্থের ভারে অন্যে ফুলোয় বুক,
তুমি শুধু সঙ্গ খোঁজ, সেই সঙ্গেই পাও সুখ।
তোমার সাথে বৃদ্ধ হবার স্বপ্নে বাঁধতাম সুর,
দুজনেই আজ বৃদ্ধ, শুধু যোজন যোজন দূর।
আমার “সে” গত হয়েছে, বাসতো খুবই ভালো-
এর মাঝেও প্রথম প্রেমের স্পর্শ লেগেই ছিলো।
ভুলতে পারিনি আজও তোমায়, চারটি দশক পর
ভুলে গেছি তবে, কে ছিলো আপন, কে ছিলো স্বার্থপর। “


সবুজ ভট্টাচার্য : তরুণ কবি।

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন