শ্রদ্ধার্ঘ্য
অরুণ দা স্মরণে
ওবায়দু করিম ।। পুবাকাশ
পত্রিকা নাকি সমাজের দর্পণ। এই দর্পণে মানুষকে দেখা যায়, চেনা যায়, মানুষের সম্পর্ক জানা যায়। জানা যায়, অর্থনীতি, সমাজ আর সংস্কৃতি। সমাজবিজ্ঞান বলে, কাগজে হরফের ভেতর চিন্তা,সংস্কৃতি আর অর্থনীতির প্রকাশ না থাকলে, সমাজ আদিমই থেকে যেত। পৃথিবীর সফল প্রথম ব্রডকাস্ট মিডিয়া হলো সংবাদপত্র। এক উৎস থেকে লক্ষ জনের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারলে, কোটি মানুষের সমাহারে জাতিরাষ্ট্র হত না। এমন শক্তির উৎস কোথায়? লাঙ্গলের পেছনে যেমন চাষী (Man behind the plough) থাকে, তেমনি থাকে দর্পণের পেছনের দর্পণ। মানুষ ও হতে পারে, দর্পণ। যাঁর মুখের কথা, কলমের লেখা আর কাগজে তার গাঁথুনি, দশ জনকে সমাজ আর সংস্কৃতি শেখায়।অরুণ দাশগুপ্ত এঁদেরই একজন।
আর তাঁকে আদর্শ পরিমাপক (স্কেল) ও মনে হয়। পরিমাপক আসলে এক ধরনের দর্পণ। ঐ দর্পণের চেহারায় অন্যদের মাপা যায়।ভদ্র জন কে, সজ্জনের বৈশিষ্ট্য কি,বয়সের ভেদ, বন্ধুত্বের প্রতিবন্ধক হতে পারেনা, এগুলো পরিমাপের স্ট্যান্ডার্ড মনে হয় অরুণ দাকে।
আমার সাথে বয়সের পার্থক্য ছিল বিস্তর। এছাড়া আমার শিক্ষক ড. অনুপম সেনের ভাগ্নে ( তবে স্যার থেকে সম্ভবত বয়সে বড়) হওয়াতে তাঁর সান্নিধ্যে যেতে আমার দ্বিধা ছিল। ঘনিষ্ঠ হই, ‘আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ, চট্টগ্রাম‘ সংগঠনের মাধ্যমে। দাদা ছিলেন সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক। একবারেই বন্ধুর মত ছিলেন তিনি। তাঁর সভাপতিত্বে, সঞ্চালনায় অনেক অনুষ্ঠান করেছি। সবসময় ছিলেন বাঙময়। প্রয়াত সিদ্দিক ভাইয়ের মাধ্যমে ও তাঁর সান্নিধ্য পাই।
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় দৈনিক আজাদীর প্রচার, প্রসার ও ব্যাপ্তিলাভে দাদার কর্ম প্রয়াস স্মরণে রাখবার মত। বয়স তাঁকে আজাদী থেকে আজাদ করলে ও , চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে ছিলেন বন্দী। মৃত্যু তাঁকে সেই বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করে দিলেন। চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ও বাংলা সাংস্কৃতিক জগত তাঁর অবদানের কথা, বিস্মরণে যাবেনা নিশ্চয়।
ওবায়দুল করিম: বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও লেখক। সাবেক প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।