ষষ্ঠ পর্ব : স্বর্গে মহাপ্রলয়
বানর রাজা চীনা পুরাণ (উপন্যাসিকা)
চীনের এক সুপার হিরোর গল্প (দ্যা জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট থেকে)
অ্যারন শেপার্ড অনুবাদ পান্থজন জাহাঙ্গীর
প্রিরিভিউ:
আপনি যদি সুপারম্যান বা স্পাইডারম্যানের কাহিনী দীর্ঘকাল ধরে থাকবে বলে মনে করেন তাহলে এই বানর সম্পর্কে একবার ভাবতে পারেন সে চীনের সুপার হিরো হিসেবে পাঁচশত বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে আছে। সে আশ্চর্যজনকভাবে শক্তিশালী, সে উড়তে পারে এবং তার এমন কিছু কৌশল জানা আছে যা অন্য সুপার হিরোরা কখনো শুনেইনি। আর সে সবসময় প্রস্তুত, শয়তান, ড্রাগন এবং কখনো দেবতা বা ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ করতে। এই বানর ষোড়শ শতাব্দীর দ্যা জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট নামক এক মহাকব্যিক কমিক ফ্যান্টাসির নায়ক। বানরের যে কাহিনীটি এখানে পুনর্কথিত হয়েছে তা হচ্ছে তার উৎপত্তি ও শুরুর দিককার ক্যারিয়ার-এবং একসময় সে আর উপর থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। অথচ সে অমরত্ব এবং জাদুশক্তি লাভ করার পর স্বর্গকে চ্যালেঞ্জ করে।
ধরণ:ফ্যান্টাসি, সংস্কৃতি:চায়না, থিম:ঔদ্ধত্য
ষষ্ঠ পর্ব
জাদি বাদশাহর রাজকীয় ঘোড়াশালে নতুন ঘোড়া রক্ষাকারীদের জন্য একটি অভিনন্দন ও ভোজন উৎসবের আয়োজন করা হল। বানর যতœ নেয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর হাজারের মতো স্বর্গীয় অগ্রপথিক এবং দায়িত্ব গ্রহণকারী মোটা ও উজ্জ্বল হয়ে বাড়তে লাগল। তার অধীনে কর্মচারীরা তাকে খুব পছন্দ করেন। তাই তার সন্মানে সবাই জড়ো হয়েছে।
-কি দারুণ ভোজন! সব আইটেম এক সাথে সাজিয়ে বানর বলল। আমি এই স্বর্গে পরিবেশিত সব খাবার অবশ্যই পছন্দ করি।
-তা খারাপ নয়, তার প্রধান সহকারি বুদ্ধিমত্তার সাথে বললেন। এখনো মহা ভোজনের অমর পিচের সাথে এগুলোর কোন তুলনাই হয়না।
-কি বললে? বানর বলল।
-প্রত্যেক বছর ভদ্রমহিলা রাণী মা জাদি ঝর্ণার সংলগ্ন প্যাভিলিয়নে এক মহা ভোজনের ব্যবস্থা করেন। তার বাগানে বেড়ে উঠা সকল অমর পিচফল দিয়ে তার অতিথীরা এখানে ভোজন করেন। প্রত্যেক পিচ ফল পাকতে সময় লাগে নয় হাজার বছর। যে এই ফল খায় তার জীবনের হায়াত বহু বছর এটি বাড়িয়ে দেয়। আর ডেজার্ট হিসেবে তারা অমরত্বের বড়ি খায়। এই বড়ি তৈরি করা হয় জীবনের অনন্ত পরমাণু থেকে, অমোঘ ওষুধ হিসেবে যেটি তিন অক্ষরের অষ্টধাতুর কন্টেইনারে বসিয়ে পরিশোধিত করেন প্রভু ডাউ টিজু
-আমি তো অপেক্ষা করতে পারছিনা, বানর বলল, সে ভোজন কখন হবে?
-আজ, সহকারি বলল।
-কিন্তু আমি তো দাওয়াত পাইনি, বানর বলল।
-অবশ্যই পাবেন না। সহকারি বলল, আপনার পদ অনেক নিচে।
-তুমি কি বলতে চাচ্ছো? বানর কান খাড়া করে বলল। আমি তো ভেবেছি অশ্ব রক্ষাকারীর অবস্থান অনেক উঁচুতে।
-না এর বিপরীত, সহকারি বলল। এটা অনেক নিচের। এটা আসলে কোন পদই না।
বানর স্তব্দ হয়ে গেল। এই হচ্ছে তা, যারা আমার জন্য রেখেছেন? আমার জন্য! বানর রাজার জন্য!
ঠিক আছে, আমি এটির জন্য প্রতিবাদ করবো না। আমি ভোজনে যাব । তারা আমাকে দাওয়াত দিক বা না দিক!
সে বাইরে ছুটে গেল। একটি মেঘে উঠে বসলো তাপর দ্রæতগতিতে ভেসে উড়াল দিল।
***
সোনালী দরজার মেঘের প্রাসাদের কুয়াশার চাদরে ঢাকা হলরুমে রাণী মার অতিথিরা মহা অমর পিচফল ভোজনের জন্য প্রায় সকল স্বর্গীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা স্বর্গের সব বিভাগের মন্ত্রী, জেনারেল, অনেক নক্ষত্র গ্রহানুপুঞ্জের আত্মা, কিছু সংখ্যক বোধিস্থ এবং অমরণশীল সহ অপেক্ষা করছে। জাদি বাদশাহর সাথে বসে আছেন ভদ্রমহিলা রাণী মা, প্রভু ডাউ টিজু, সাধনার পথের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু, এবং বোধিস্থদের সাহায্যকারী দয়ার দেবতা জোয়ান ইন ।
যখন জাদি বাদশাহ তার অতিথিদের সাথে আলাপে মত্ত ছিলেন তখন স্বর্গের প্রধান কর্মচারী প্রবেশ করল এবং স্বর্গীয় সিংহাসনের দিকে কুর্নিশ করল, জাহাপনা, বলল, প্রধান কর্মচারী আপনার কর্মচারীরা সবাই হলের বাইরে দাঁড়িয়ে ভোজন কক্ষে যাওয়ার জন্য আপনার নির্দেশানার অপেক্ষা করছে।
নির্দেশনা, জাদি বাদশাহ বলেলন, আমিতো কাউকে দেয়নি!
কিন্তু, জাহাপনা, প্রধান কর্মচারী বলেলন, মহা শুভ্রগ্রহের আত্মা শুকতারা আপনার নামে আমাদের আদেশ করেছেন এখানে আসতে এবং সবাইকে সাদরে নিয়ে যেতে।
মহা শুভ্রগ্রহ তো সারাক্ষণ এখানেই আছেন এবং আমি এরকম কোনা আদেশ দেইনি। তারপর জাদি বাদশাহ তার স্বর্গের জেনারেল মহা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী কমান্ডার ইন চিফ এর দিকে তাকালেন।
এখনই জাদি ঝর্ণার প্যাভিলিয়নে যান এবং এর পেছনে কে আছে খুঁজে বের করুন। আর যদি সেখানে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে বারো জন বজ্র জেনারেল কে নিয়ে যান।
জাদি ঝর্ণার পাশে বানর যতক্ষণ তার উদরপূর্তি হয়নি ততক্ষণ খাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ সে ভয়ের সাথে তার চারপাশের দৃশ্যের দিকে চোখ রাখল।
আমি মনে করিনা আমি এই পথের অন্যান্য বন্ধুদের মতো জয়ী হব! সে বলল আমি আরো অধিকতর পরিস্কার হব আমি কলংকিত হওয়ার আগে।
কিন্তু এরপরই স্বর্গীয় মহাশক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেল বারোজন বজ্র জেনারেল নিয়ে দৌঁড়ে আসলেন। দানব বানর তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। তুমি তো মহাভোজনের পিচগুলো নষ্ট করে ফেললে!
এ ব্যাপারে তেমন কোন সন্দহ নেই। একটি বাঁকা হাসি দিয়ে বানর বলল। কিন্তু তুমি এগুলো নিয়ে কি করতে যাচ্ছ?
তুমি অসুস্থ বানর! জেনালে গর্জন করে উঠলেন। এসো আমার যুদ্ধ কুড়ালের স্বাদ নাও!
জেনারেল বানরের দিকে ছুটে গেল। বানর তৎক্ষনাৎ তার কান থেকে কর্মীকে লুফে নিল এবং বলল, বেড়ে যাও! সাথে সে মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেলের কুড়াল কে রুখেদিল।
তোমার এর চেয়ে ভালো কিছু দেখাতে হবে! বানর বলল।
এইবার মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেল তবু বার বার দোলছিল কিন্তু বানর বার বার প্রতি প্রবাহকে রূখে দিল। শিঘ্রিই তারা খুব দ্রæত ঘুরছিল, তাদের অস্ত্রগুলো দেখাই যাচ্ছিলনা।
মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেল গর্জন করে উঠলেন, এখন দেখো, পারলে আমার জাদুশক্তিকে ঠেকাও। তারপর সে একশত ফুটেরও বেশি লম্বা হয়ে গেল।
ওই চাতুরি আমিও জানি। বানর বলল, বেড়ে যাও! এরপর শত্রæকে মোকাবিলা করার জন্য তার অনেকগুলো মুখ হয়ে গেল।
তাদের লড়াইয়ের আওয়াজে কান ঝালপালা হয়ে যাচ্ছিল এবং বারোজন বজ্র জেনারেল চলে আসতেই বাতাসে তাদের ঘুরপাক বেড়ে গেল। কিন্তু তারা কেউ সুবিধা পেলনা-সফল হলো না। সবার অগোচরে হঠাৎ বানর গর্জন করে উঠল. ছোট হয়ে যাও! এবং আকাশে বাদুরের মতো ঝুলে উড়াল দিল। সাধারণ আকারে সে মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেলের কুড়ালের ডানে ভেসে গেল। সে তার কর্মীকে বর্গাকারে নিচে নামালো এবং স্বর্গের জেনারেলের পিঠে ঢুকিয়ে দিল। যন্ত্রনায় মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেল গর্জন করে উঠলেন। তারপর তিনিও সাধারণ আকারে পরিণত হলো। পুনরায় আক্রমণ করলেন।
এখন বারোজন বজ্র জেনারেল বানরকে ঘিরে ফেলল। তারপর তাদের যুদ্ধ কুড়াল, তরবারি, বল্লম, ধারালো কুঠার, ধনুক এবং, ছোট তরবারি দিয়ে তাকে আক্রমণ করল। বানর লাটিমের মতো ঘুরে গেল। প্রতি প্রবাহে সেও আক্রমণ করছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সে ক্লান্ত হয়ে পড়লো।
এটা অদৌ কি নৈতিক যুদ্ধ হল? সে বলল, কিন্তু এখনো একটা চাতুরি দেখোনি।!
সে তার লেজ থেকে এক ডজন চুল তুলে আনলো। সেগুলোকে বাতসে নিক্ষেপ করল। তারপর বলল, পরিবর্তন হও! প্রতিটি চুল একটি করে বানরে রূপান্তরিত হলো। তারপর প্রত্যেক বজ্র জেনারেলের বিরুদ্ধে সেই বারোটি বানর লোহা কর্মীকে দিয়ে দোল দিতে লাগল।
আমি এখন একটু বিরতি নেব, বানর বলল। সে তার লোহা কর্মীকে তার কান থেকে দূরে সরিয়ে রাখল এবং বাকা হাসি দিয়ে রণক্ষেত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে রইলো।
এই মুহূর্তে রাজকীয় রথ চড়ে জাদি বাদশাহর সাথে ভদ্র মহিলা রাণী মা, প্রভু ডাউ টিজু, জুয়ান ইন, প্যাভিলিয়নে পৌঁছলেন।
জাদি বাদশাহ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। আমি তোমাকে কি বলছিলাম? এতো তো দেখি আবার সেই শয়তান বানরটা।
রাণী মা চিৎকার করে উঠলেন, দেখো একবার আমার ভোজন অনুষ্ঠানের দিকে! এটা তো পুরাটাই এখন দূর্যোগ!
জোয়ান ইন জাদি বাদশাহকে বললেন, জাহাপনা, দেখা যাচ্ছে যে আপনার জেনেরারেলরা অমরদের সাথে আলোচনা করে একটু সাহায্য নিতে পারে, আপনি আমাকে অনুমতি দিবেন কি?
জাদি বাদশাহ বললেন, সবচেয়ে সহানুভুতিশীল বোধিস্থ আমি আপনার এই প্রস্তাবের কাছে কৃতজ্ঞ কিন্তু আমি অবশ্যই জানতেই চাই যে আপনার তো কোন অস্ত্র নেই।
আমার কাছে ঝর্ণার পাশের উইলো গাছটির ডালের একটা চিনামাটির ফুলদানি আছে। যেটা সবসময় আমি সাথে রাখি। জোয়ান ইন বললেন। অনুমতি দিন অস্ত্রটি কিভাবে কাজে আসবে তা দেখানোর।
জোয়ান ইন তার পা দিয়ে জোরে আঘাত করলেন। সাথে সাথে আকাশে একশো ফুট উপরে উঠে গেলেন এবং এটি জাদু মেঘে নামলেন। তারপর লক্ষ্য স্থির করলেন। সে তার ফুলদানিটি বানরের মাথার ডান পাশে মারলেন।
বানর অচেতন অবস্থায় ভূমিতে পড়ে গেলো। যুদ্ধরত বানরগুলো হঠাৎ লেজের দিকে ফিরে এসে পিঠ পরিবর্তন করলো।
জোয়ান ইন তার ফুলদানিটা তুলে নিলেন। তারপর রথে নেমে পড়লেন।
দারুণ কাজ করেছেন. জাদি বাদশাহ বললেন।
স্বর্গের মহা শক্তিশালী অলৌকিক ক্ষমতার জেনারেল আসলেন। জাহাপনা, অশ্বরক্ষকের ব্যাপারে আপনার ইচ্ছা কি?
তাকে এখনই মৃত্যুদন্ডের সেলে নিয়ে আসো। তারপর কেটে একহাজার টুকরো কর।
জাহাপনা, এ রকম শাস্তি দিতে আমার ভয় হচ্ছে কারণ, এটি কখনো সম্ভব নয়।, প্রভু ডাউ টিজু বললেন।
অনেকগুলো অমরত্বের বড়ি খেয়ে ফেলার কারণে তার শরীর অবশ্যই ডায়মন্ডের মতো শক্ত হয়ে যাবে। কোনো অস্ত্রই এটি ভেদ করতে বা ছিড়তে পারবেনা।
তাহলে তাকে নিয়ে আমরা কি করবো? আতঙ্কিত হয়ে জাদি বাদশাহ বললেন।
হয়তো এ কাজটি আমি করতে পারবো। তার হাত দুটো আমার কাছে এনে আমার মূল্যবান অষ্টধাতুর ট্রিগ্রামের তাপ দিবো। কেবল এক ঘন্টার মধ্যে তার দেহ ছাই হয়ে যাবে-এবং একই সময়ে আমি আমার জীবনের অমোঘ ওষুধ অনন্ত পরমাণু ফিরে পাবো।
আমি আপনার এই সদয় বিবেচনা সাদরে গ্রহণ করলাম জাদি বাদশাহ বললেন। আমরা তোমরা সফলতার অপেক্ষায় রইলাম । তারপর প্রাসাদে ফিরে যাবো।