বানর রাজা।। চীনা পুরাণ (উপন্যাসিকা)
চীনের এক সুপার হিরোর গল্প (দ্যা জার্নি টু দ্যা ওয়েস্ট থেকে) অ্যারন শেপার্ড অনুবাদ পান্থজন জাহাঙ্গীর
চতুর্থ পর্ব
মৃত্যুফাঁদ
প্রাচ্য সাগরের পৃষ্ঠে, ড্রাগন রাজার প্রাসাদ থেকে বেশি দূরে নয়, বানর একটি খালি শিলাখন্ডের উপর অবতরণ করল। যেটি ঢেউগুলোর উপর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এর বাইরে দোল খেয়ে সে একটা ক্লান্তির হাই তুললো।তারপর আকাশের দিকে চেয়ে রইলো।
এখন তাহলে আমি অমর, আমি মনেকরি, আমি স্বর্গ পর্যন্ত উড়ে যেতে পারব এবং দেবতার মতো হবো। কিন্তু তার আগে একটি ভাতঘুম দিয়ে দিই।সে তার চোখ বন্ধ করল এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ল।
হঠাৎ বানর তার তার পায়ের পাতায় ঝাঁকুনি অনুভব করল। দুইজন মানুষ তার পায়ের কনুই শক্তভাবে ধরে আছে।একজনের মুখোমন্ডল ছিল ঘোড়ার আর অন্যজন ষাড়ের।ঘোড়ার মাথা ওয়ালা লোকটি একটি অফিসিয়াল নথি ধরে আছে। যেটি কাছ থেকে সে পড়ছিল।তোমার নাম কি বানর? হ্যাঁ, আমার নাম বানর।বানর খানিকটা চিন্তা করে বলল।
ঠিক আছে।এই বলে ষাড়ের মাথা ঘুরে দাঁড়ালো।তারা তাকে টেনে তুলতে শুরু করল।বানর একবার কেঁপে উঠে দ্রæত পেছনে দৃষ্টি দিল।সেখানে সে নিজেকে ভূমিতে এখনো শুয়ে থাকতে দেখল।তারা পাথরটিকে তুলল এবং একটি সমতল ভূমিতে নিয়ে যেতে লাগল। সাগরের কোনো দৃশ্য চোখে পড়ছেনা।এটা কোথায়, আমি এখানে কিভাবে আসলাম? সে জিজ্ঞাসা করল।
সে জানতে চায়, সে এখানে কিভাবে আসলো! অশ্বমস্তক ভয়ংকর চিৎকার দিয়ে উঠল।
সকলেই যেভাবে আসে, তুমিও সেইভাবে এসেছো, ষাড়ের মাথা জবাব দিল।কিছুক্ষণের মধ্যে তারা একটা দেয়ালের শহরের চলে আসলো।গেইটের উপর সোনা দিয়ে তৈরি একটি লোহার প্লার্কাড।লেখা আছে-
অন্ধকার রাজ্যের শয়তান গেইট
অন্ধকার রাজ্য? বানর চিৎকার দিয়ে উঠল।অবশেষে, সে সম্পূর্ণ জেগে উঠল।কিন্তু এটি মৃত্যুর দেবতা ইয়ামার রাজ্য।আমি এখানে থাকতে চাই না।
অশ্ব মুখ বললেন, ওটিই সবাই বলে।
কিন্তু আমি তো অমর। আমি মৃত্যুকে জয় করেছি।
ষাড়ের মাথা বলল, তা বিচারককে বলবেন।
ঠিক আছে, আমি বলবো, বানর বলল।তার কানে লুকানো জায়গা থেকে কর্মীকে ছিনিয়ে নিল। তারপর চিৎকার দিয়ে বলল, বেড়ে যাও! এক মুহূতের অর্ধেক সময়ে এটির পাঁচ ফুটের মতো বেড়ে গেল। তার মধ্যে সে দুলছিল।আমরা তো এটা বুঝতে পারছিনা।ভয়ে গেইট দিয়ে পালিয়ে গিয়ে অশ্বমুখ কান্না করতে লাগলো তারপর তার পেছনে তাড়া করতে করতে ষাড়ের মাথা বলল ।
তুমি কৌতুক করতে পারো না?
বানর তার সেই যাদুর কর্মীর উপর দুলতে দুলতে তাদের অনুসরন করল।এই শহরের শয়তানগুলো ভয় পেয়ে গেল।তাদের কেউ তার দিকে মাড়াতে সাহস করলো না।এরমধ্যে বানর অ›ধকার রাজ্যে পৌঁছে গেল।মৃত্যুর প্রভু ইয়ামা এবং অন্য নয়জন মৃত্যুর বিচারক পায়চারি করে অপেক্ষা করছিল।
মহাশয়, কোথাও আপনার বিপদ মনে হচ্ছে? ইয়ামা সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
বিপদ? আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন-এটাই বিপদ।
কিন্তু স্যার, আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি।আপনি এখানে সুবিচার পাবেন এবং দন্ডিত হবেন -আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে পুন:শিক্ষণ লাভ করবেন।ঠিক আপনার আগের কর্ম অনুসারে।তারপর আপনি যা খারাপ কাজ করেছেন তার শাস্তি পাবেন আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে শোধরাবেন।তারপর আপনাকে নবজীবন লাভ করার জন্য আলোর রাজ্যে পাঠানো হবে।
আমি পুর্নজন্ম চাইনা। বানর বলল, এই মর্ত্যে আমি মরতে চাইনা।তোমরা কি বুঝতে পারছনা আমি অমর?
একজন অমর! এই অনাকাঙ্খিত প্রশ্নের জন্য তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন।
একদম ঠিক বলেছেন! বানর বলল।আমি জীবন-মৃত্যুর রেজিস্টার দেখতে দাবী জানাচ্ছি।
ইয়ামা তাকে অন্ধকার হল ঘরে নিয়ে গেলেন।যেখানে একজন কেরানি কয়েকটি নোংরা রেজিস্টার তুলে আনল।বানর যতক্ষণ না তার নাম খুঁজে পেলেন তখন দেখতে লাগলো।
লেখার ব্রাশ দিন! বানর আদেশ দিলো।তারপর কেরানি তাকে এক ডিব্বা কালি ভরে দিলেন।বানর তার নামটি রেজিস্টার থেকে মুছে দিলেন।
ওটিই করা উচিত।
এটা সাধারণত করা যায় না। ইয়ামা প্রতিবাদ করলেন।
বিচারককে এটি বলুন।সে জোরে বইটি বন্ধ করলো এবং বেরিয়ে পড়লো।তারপর সে তার রাস্তা খুঁজে নিল ।তার কর্মীও উপর ঝুলে দেয়ালের নগরে ফিরে গেল।একেবারে গেইটের বাইরে এসে বানর হোঁচট খেয়ে পড়ল এবং গড়িয়ে গেল। যখন সে চোখ খুলল, সে দেখল, সে প্রাচ্য সাগরের সেই পাথরের উপর। দারুন ব্যাপার! বানর চিৎকার দিয়ে উঠল।তারপর একটা লাফ দিয়ে বলল, স্বর্গ আর বেশি দূরে নয়।
পান্থজন জাহাঙ্গীর : কথাশিল্পী ও অনুবাদক।