গুচ্ছ কবিতা ।। পাহাড়ী ভট্টাচার্য ।। পুবাকাশ

তবুও

তবুও জড়িয়ে থাকে প্লায়স্টোসিন কিছু দু:খবোধ
হৃদয়ের গহীন গোপনে কিছু দীর্ঘশ্বাস, অচিন অসুখ
তবুও থাকে পিছুটান, অমোঘ হাতছানি যত নির্বোধ; অন্তর্দহন-দগ্ধ নিত্য, অনুক্ষণ। বিস্মৃতির এ তমসুক!

মিথস্ক্রিয়া

মূল্যবোধেরা কোনঠাসা, বাড়-বাড়ন্ত ঔদ্ধত্যের, প্রাবল্যের দাপটে গুটিশুটি তাবৎ স্বাভাবিকতা।

ক্রমবর্ধিষ্ণু আমিত্ব এখন, অহংবোধের মহোৎসবে! মনন মৃতবৎ, মানবিকতাও! সারল্য অর্বাচিন, জড়-সহজতা।

সুবচন নির্বাসনে; চক্ষু-কর্ণের বিবাদভন্জনে মুক! মুখ ও মুখোশের ধোঁয়াশা, মিথস্ক্রিয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ যত অনিবার্যতা!

ইচ্ছেঘুড়ি

আমি আমার কিছু ইচ্ছেকে বন্দি রেখেছি গুপ্ত দেরাজে
সযত্নে, তবু কখনো কখনো অজান্তেই ডানা মেলে উড়ে যায় প্রাগুক্ত ইচ্ছেরা মেঘেদের মতন;

আমি আমার কিছু অভিপ্রায় গোপন রেখেছি দীর্ঘকাল, তবু তারা প্রায়শ প্রকাশ্য হয়ে পড়ে অগোচরে, ইত্যাকার অসতর্কতায় যখন, পুণ:পাঠ-নিবিষ্ট হই, গোপনীয়তার!

ইদানিং আমার তাবৎ ইচ্ছেঘুড়ি, অভিপ্রায়বোধ-সকল
বল্গাহীন, বস্তুত।

ইদানিং আমার মনোবাসনা-রাশি অপরিনামদর্শী প্রবল, অসংযত।

ইদানিং আমি প্রগলভ্, লাগামছাড়া। খোলামকুচির মত সহজলভ্য, দৃশ্যত।

কার্যত,

ইদানিং তোমার ইচ্ছে-বন্দিত্বে বাঁচা, তথাস্তু! যথাযথ।

প্রহর

এইসব হন্তারক রাতে জেগে থাকে অবিমৃষ্য চাঁদ
বুকের বাস্তুভিটায় হঠাৎ জাগা ব্যাথার চরের মতন
অবেলায় পাতা ফাঁদ, মায়াবী হাতছানি অগোচর
প্রতীক্ষায় থাকে তবু প্রলুব্ধতা, কিছু ঘুমহীন ভোর;
বিরুদ্ধ প্রহর যত, অর্বাচীন ক্রন্দন!

হয়তো

একদিন অগনন অভিমান শেষে তোমার কাছে যাব মৌতাতে নিমগ্ন হব ফের; অনভিপ্রেত কিছু কলরবে
একদিন অকারণ প্রগলভ হব, অকষ্মাৎ ভাঙব ঘের
অনার্য অবয়বে! প্রমত্ত আমি একদিন ভিসুভিয়াস হব।
হরিৎ প্রান্তরে প্রবল উজ্জ্বয়িনীও হতে পারি কোনদিন; এক গায়ত্রী সন্ধ্যায় সংবেদী আকাশ হব, মৃত নক্ষত্রের!

রৌদ্রদগ্ধ

জিরাফের গ্রীবার মত দীর্ঘ দুপুর অলস পড়ে থাকে
অগত্যা, অনিন্দ্য বিকেল যত ঢাকে অযাচিত মেঘদল,
বজ্রপাতে ভাঙ্গে মন্হন; নিমগ্ন রাতের অনার্য ভাবালুতা!
এক রৌদ্রদগ্ধ দিনের প্রতীক্ষায় থাকি তবু, অচঙ্চল।

ঘর

এই গৃহকোন, সম্পর্ক-সুতোর বুনন, গার্হস্থ্যের যত ঘের
নিয়ত পোড়ায়, ডাকে পরবাস, দুরের আকাশ ফের। কত বন্ধন অষ্টপ্রহর, কত অগন্য দায়; দুরে যেতে যেতে ফিরে আসা শুধু মৌতাতে-মুগ্ধতায়;বৈরাগ্য পিছু ডাকে আমায়!

এই গৃহবাস; ঝড়ে-জলে-মেঘে, আলো-আঁধারির দ্বৈরথে, শত শোক-তাপ-অশ্রু-হাসিতে, সাফল্য-ব্যর্থমনোরথে,যেন এক বাণপ্রস্থ থাকে অগোচরে, অপেক্ষায়! এ গৃহ আমায় পোড়ায় নিত্য গৃহদাহে; মায়াকোভস্কি-য় অন্তর্লীনতায়!

পাহাড়ী ভট্টাচার্য : কবি ও প্রাবন্ধিক। 

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

এখানে মন্তব্য লিখুন
এখানে আপনার নাম লিখুন