মনসুরে হাল্লাজের কবিতা।। মাঈন উদ্দিন জাহেদ।। পুবাকাশ
মনসুর হাল্লাজ(৮৫৮-৯২২)। জন্ম ইরানের ফারাস প্রদেশের বায়জা শহরে। পিতামহ জরথুস্ত্র মতবাদের বিশ্বাসী হলেও পিতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পেশায় ছিলেন কারুশিল্পী(সুতো বানোর কারিগর)। মা আরবের হারিসিয়া অঞ্চলের অধিবাসি। ইরানের নবদীক্ষিত মুসলমানদের তখন বলা হতো মাওয়ালি । হাল্লাজ অর্থ কারিগর। মনসুর জীবনের প্রাথমিক পযার্য়ে সুতো বানানোতে হাত পাকিয়েছিলেন বলে হাল্লাজ স্বীকৃ্তি পেয়েছিলেন। বায়জা-আহ্বয়াজ-তুস্তার-হয়ে ইরাকের ওয়াসিত-এ তিথু হন। তাই তার জীবনে ফারসি সংস্কৃতি ধূসর হয়ে তিনি নিয়ত আরব হয়ে ওঠেন। তাই সমস্ত রচনা তার আরবী। পরবর্তীতে বসরায় চলে আসেন- যা সুফীবাদের পীঠস্থান হিসেবে স্বীকৃ্তি পায়। অষ্টম শতকে বসরার গুরুত্ব সাংস্কৃতিক-বুদ্ধিবিত্তিক-বাণিজ্যিক ভাবে বাড়তে থাকে। হাল্লাজ এখানে এসে প্রথম সুফিবাদি খিরকা (পশমিজামা) গ্রহণ করেন। ৮৭৭ সালে এক আমলা পরিবার থেকে বিয়ে করেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হন। তিনি ছিলেন তৎকালিন দাসবিদ্রোহের অন্যতম সমর্থক। তার শ্যালক ছিলেন জনজ দাস বিদ্রোহের অব্যতম সংগঠক।জনজ দাস বিদ্রোহ (৮৬৯-৮৮৩) প্রায়১৫ বছর ধরে চলে।মহাপরাক্রমশালী আব্বাসী খেলাফতের বিরুদ্ধে মাত্র লাঠি, দুটোঘোড়া ও তিনটি তলোয়ার সম্বল করে এ বিদ্রোহের সূচনা। আর হাল্লাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আমর মক্কি।যিনি প্রাথমিক পযার্য়ে হাল্লাজকে মেয়ে বিয়ে দিতে ইচ্ছুক পরবর্তীতে কায়েমী শক্তি হিসেবে জানজ দাস বিদ্রোহের প্রতিপক্ষ। বাগদাদে পৌছে মনসুর হাল্লাজ যখন গুরু জুনায়েদ বাগদাদীর দুয়ারে কড়া নাড়েন-
ভেতর থেকে গুরু প্রশ্ন করেন-‘কে?’
প্রতিউত্তরে শিষ্য হাল্লাজ বলেছিলেন ‘আনাল হক’- আমি সত্য।
গুরু জুনায়েদ বলেছিলেন-‘প্রিয় হাল্লাজ!পরম সত্যের রহস্য নিয়ে সতর্ক থেকো। যারা বুঝবে না, তাদের সে কথা বলো না’।
উত্তরে হাল্লাজ বলেছিলেন-‘যে দিন আমি সেই কাঠের টুকরোতে আগুন জ্বলাব, আপনার পরনে থাকবে যাজকের পোষাক’।
পরবর্তী ইতিহাস আমাদের সবার জানা।
💗
১.রহস্য
ও আমার দৃষ্টির লক্ষ্য
আমার হৃদয়ের গোপন ভাবনার পর্বাবাপর্ব
হে সম্পূ্র্ণিমা! যার পূর্ণতাকে ভালোবেসে আমার পূর্ণতা
বিশাদকে আলিঙ্গন করে তুমি আমাকে বাসিয়া ভাল
আমার হৃদয় মন্দিরে হয়েছো বন্দি হিংস্র পক্ষী
নিমগ্ন দুখে ভুলে- পথহারা এক বিরান মরুভূমে
অন্ধের মত পথ চলা।
নেশাতুর রহস্য নিয়ে
বিদ্যুৎ গতিরঝলকে ছুয়ে যায় সব
একি স্বপ্ন? মায়ায় ছুটে চলা- মাটির দেশে
এ দয়া এ মায়া পরম গতির স্রোতে
মগ্নতার গভীর সমুদ্রে-নিয়ে চিন্তাবিন্দু।
২.তুমিই শুধু
তুমি ছাড়া কে আছে আমার ব্যাথাতুর হৃদয়ের সমব্যথী
আমার ভয়ে আমার ধৈযে- তুমি ছাড়া নেই কেউ আর
সেই ছুটে ছুটে যাওয়া- অর্থের নিগুঢ় কুঞ্জে
সকল কবিতা আমার- হয়ে ওঠে হয়ে ওঠে
ভুল করে যদি চাই কিছু
তবু জেনো
আমার সমস্ত চাওয়া তুমি শুধু।
৩. আহা
বারবার আমি লুকায় অপ্রকাশের হলাহলে
লুকাই চাঁদের আলোয় টালমাটাল বিন্দুর জলে।
লুকাই তিলের মাঝে বর্ণের অন্দরে
যে অক্ষর লিখা আছে কপালে কপালে
তোমায় দেখে দেখে যাচ্ছি আমি
এবং তুমি
আহা! না দেখে কিছু
রয়ে গেলে তুমি পিছু।
৪.ধোঁকা
ধোঁকা দিয়ে যায় বাস্তু পৃথিবী
কোনো কিছুই জানিনা আমি তার
তাদের মত নিসিদ্ধ সব-
খোদ খোদাকে যারা মন্দ বলে।
আমিও তাদের সিদ্ধগুলোকে নিসিদ্ধ ভাবি-
দাক্ষিণ্য যখন বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে।
আমি দেখে যায় কাঙালের মতো
তাদের রূপেই সাজায় যখন তারা আমাকে।
যখন আমি তাদের অধিকারে
ভীষণ বিষণ্ন নিজের ভয়ে।
মাঈন উদ্দিন জাহেদ : কবি ও সম্পাদক- পুবাকাশ ওয়েবম্যাগ।