গুচ্ছ কবিতা
পাহাড়ী ভট্টাচার্য
পুবাকাশ
ইস্তেহার
কিছু শব্দের মিছিল বুকে স্লোগান তোলে অহর্নিশি
কিছু বাক্যরাশিও হৃদয়ের রাজপথে বসে অনশনে;
কিছু কথাদের ভীড় প্রবল জনসমূদ্রেও প্রতিধ্বনিত
হয় প্রকাশ্যে, তোমার প্রতীক্ষায় ডাকা এক অনির্দ্ধিষ্ট
কালের হরতালে-ঘেরাওয়ে-গণমিছিলে-মানববন্ধনে।
তুমি চাইলেই উঠে যাবে ব্যারিকেড, ফিরে যাবে মিছিল
পিছু হটবে সাজোঁয়া যান, পুলিশ-টিয়ারগ্যাস-জলকামান
তুমি চাইলেই হতে পারে সংলাপ-সমঝোতা, যুদ্ধ-বিরতিও;
তাবৎ দ্বৈরথের অবসান।
অমোঘ
তোমার স্পর্শ
সুতীব্র ভীষণ
অনিবার্য প্রবল,
সন্মোহক!
নিত্য ভাসি
দোলাচলে তবু
ফের ডুবি তা-য়,
হন্তারক!
দ্য্ শ্যাডো
আমি, আমার ছায়াকে নিয়েই ঘুরি
কখনো ছায়া ছাড়ে না আমার পিছু
আমার সাথেই গাঁটছাড়া বাঁধা তার
দীর্ঘবেলা; ছায়াটির সাথে পথ চলি
বেলা-অবেলায় ছায়াটি নেয় পিছু।
ছায়াটি কি খোঁজে আমার অগোচরে
কখনো আমার আবছায়া, হৃত কিছু?
এই যুগলবন্দীত্বে দৃশ্যত: নেই দ্বৈরথ
ছায়াটি আগে, আমি ছায়াটির পিছু।
যদি…
যদি খানিকটা প্রগলভ্ হই
মাতি মৌতাতে মাতাল মহেশ্বর,
আকন্ঠ পানে ভাবলেশহীন রই
সুর-মগ্ন, শব্দে সমর্পিত অর্ধেশ্বর!
যদি গুটিয়ে নিই সস্পর্কের সুতো
আবেগের বল্গাহীন নাটাই-ঘুড়ি
এড়িয়ে ঠুনকো তাবৎ দায়, তবে
আমিও তো নির্ভার হতে পারি!
যদি ছেড়ে আসি পিছুটান, চেনা গলি-পথ
বিশ্বাসের বাস্তুভিটা, মোহের শেকড়-বাকড়
যদি শ্রোতে ভাসি, হই অনুযোগহীন
আপোষে মিটিয়ে নিতে পারি ক্লেশ
দৃশ্যত, যাবতীয় দ্বৈরথ!
তবুও
প্রমিত বিকেল আমায় একাকী রেখে ক্রমশ: সন্ধ্যায় মিলায়
রৌদ্রদগ্ধ সুদীর্ঘ দুপুরেরা ফিরে গেছে কবে, কোন অবেলায়
কথা রাখেনি কিছু বৃক্ষ-নদী-মাঠ-চরাচর, পরীযায়ী পাখিদের দল, পতঙ্গ ও মানুষ, অব্যক্ত অনুরণনে তবুও জেগেছে জীবন
আমার দু’চোখ মৃত; অপলক। গৃহত্যাগী অম্লান জোস্ন্যার ক্ষণ
অনন্ত নক্ষত্রবিথী খোজেঁ একা, শুধু প্রমত্ত প্লাবনের প্রতীক্ষণ!
পাহাড়ী ভট্টাচার্য : কবি ও চিন্তক। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার সচেতনতা সংগঠন বিল্স এর সংগঠক।